Pakistan after Jammu and Kashmir Terror Attack

মোদীর পাঁচের বদলে শরিফের আট! ভারতের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ কেন? ইসলামাবাদের দীর্ঘ বিবৃতি পড়ল আনন্দবাজার ডট কম

ভারতের পদক্ষেপগুলির নিন্দা করেছে পাকিস্তান। তাদের বিবৃতিতে উঠে এসেছে কাশ্মীর সমস্যা, ওয়াকফ আইন সংশোধনের মতো প্রসঙ্গ। ভারতের বিরুদ্ধে আটটি পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে তারা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:১৩
ভারতের বিরুদ্ধে আটটি পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে পাকিস্তান।

ভারতের বিরুদ্ধে আটটি পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করেছে পাক সংগঠন লশকর-এ-ত্যায়বার শাখা ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। কিন্তু প্রথম থেকেই পাকিস্তান দাবি করে এসেছে, এই হামলার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। পহেলগাঁও হামলার পর বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের বাসভবনে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। তার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপ ঘোষণা করে ভারত। পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল থেকে শুরু করে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত, অটারী সীমান্ত বন্ধের কথা ঘোষণা করা হয়। এর এক দিনের মাথায় পাকিস্তানও পদক্ষেপ করল। ভারতের পাঁচের বদলে তারা আটটি পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে। সঙ্গে দীর্ঘ বিবৃতিতে ভারতের একাধিক নীতির কড়া সমালোচনা করেছে ইসলামাবাদ। তাদের সেই বিবৃতি পড়ে দেখল আনন্দবাজার ডট কম।

Advertisement

পাকিস্তানের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে অমীমাংসিত বিরোধ ‘কাশ্মীর’। রাষ্ট্রপুঞ্জের একাধিক প্রস্তাবে তা স্বীকৃত। কাশ্মীরের মানুষের অধিকারকে পাকিস্তান সমর্থন করে। ভারতের রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন সেখানকার মানুষ পছন্দ করেন না। তার ফলে কাশ্মীরে হিংসা স্থায়ী হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে ভারতে সংখ্যালঘু, বিশেষত মুসলমানদের উপর নির্যাতনও বৃদ্ধি পেয়েছে। জোর করে ওয়াকফ বিল পাশ করা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভারতের সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপ।’’

পাকিস্তান আরও বলেছে, ‘‘পহেলগাঁওয়ের মতো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে কাজে লাগানোর ইচ্ছা ত্যাগ করতে হবে ভারতকে। তারা নিজেদের জনগণকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি, তার দায় নিতে হবে।’’ বিবৃতি অনুযায়ী, ‘‘পাকিস্তান সর্বতোভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে। বরং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করতে ভারত পূর্ব সীমান্তে বার বার অশান্তির চেষ্টা করে থাকে। কোনও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত এবং প্রমাণের অভাবেই পহেলগাঁওয়ের ঘটনাকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। এটা ভিত্তিহীন। এটা আসলে হেরে যাওয়ার যুক্তি। এর বিপরীতে, পাকিস্তানে ভারতীয় মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের অকাট্য প্রমাণ রয়েছে। পাক জেলে বন্দি কুলভূষণ যাদব এর জলজ্যান্ত প্রমাণ।’’

ভারতের পদক্ষেপগুলির নিন্দা করেছে পাকিস্তান। বলা হয়েছে, ‘‘২৩ এপ্রিল ভারতীয় বিবৃতিতে থাকা হুমকির নিন্দা করছে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (এনএসসি)। ভারত বার বার আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে। পাকিস্তান-সহ একাধিক দেশ তার প্রমাণ পেয়েছে। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের নিরাপত্তার উপর যে কোনও হুমকির বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। নিজেদের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডাকে কাজে লাগিয়ে পহেলগাঁওয়ের মতো ঘটনা নিয়ে দোষারোপের খেলা বন্ধ করা উচিত ভারতের। এই ধরনের কৌশল কেবল উত্তেজনাই বৃদ্ধি করে।’’

এর পর বিবৃতিতে আটটি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে পাকিস্তান—

  • সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার ভারতের যে সিদ্ধান্ত, তা পাকিস্তান প্রত্যাখ্যান করছে। বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় এটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং এটা একতরফা ভাবে স্থগিত করা যায় না। জল পাকিস্তানের মানুষের জাতীয় স্বার্থ। ২৪ কোটি মানুষের এই স্বার্থকে যে কোনও মূল্যে সুরক্ষিত করা হবে। সিন্ধু জলচুক্তি অনুসারে পাকিস্তানে জলের প্রবাহ বন্ধের যে কোনও প্রচেষ্টাকে ‘যুদ্ধ’ হিসাবে দেখা হবে। সম্পূর্ণ শক্তির সঙ্গে এর জবাব দেওয়া হবে।
  • ভারতের বেপরোয়া, দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ আন্তর্জাতিক আইন, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবকে উপেক্ষা করছে। ভারতের সঙ্গে শিমলা চুক্তি-সহ সমস্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত রাখার অধিকার রয়েছে পাকিস্তানেরও। যত ক্ষণ না ভারত পাকিস্তানের অন্দরে সন্ত্রাসকে উস্কানি দেওয়া, আন্তর্জাতিক হত্যাকাণ্ড এবং আন্তর্জাতিক আইন ভাঙা বন্ধ করছে, তত দিন চুক্তি স্থগিত থাকতে পারে।
  • অবিলম্বে ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করবে পাকিস্তান। এই পথে ভারতের সমস্ত আন্তঃসীমান্ত পরিবহণ বন্ধ থাকবে। যাঁরা বৈধ অনুমোদন নিয়ে সীমান্ত পেরিয়েছেন, তাঁদের ফিরে যাওয়ার জন্য ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হচ্ছে।
  • সার্ক ভিসা অব্যাহতি প্রকল্পের (এসভিইএস) অধীনে ভারতীয়দের যত ভিসা পাকিস্তান দিয়েছে, তা বাতিল করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম শুধু শিখ পুণ্যার্থীদের ভিসা। এসভিইএস-এর অধীনে যে ভারতীয়েরা পাকিস্তানে এখন আছেন, তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়তে হবে।
  • ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করল পাকিস্তান। তাঁদের ভারতে ফিরতে হবে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে। এই উপদেষ্টাদের সহযোগীদেরও ফিরে যেতে বলা হয়েছে।
  • ভারতীয় দূতাবাসের সদস্যসংখ্যা কমিয়ে ৩০ করা হয়েছে।
  • ভারতীয় মালিকানাধীন বা ভারতে নিয়ন্ত্রিত সব বিমান সংস্থার জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
  • ভারতের সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্য বন্ধ করে দিচ্ছে পাকিস্তান। অন্য কোনও দেশের পণ্যও পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে ভারতে যেতে পারবে না বা সেখান থেকে অন্য দেশে যেতে পারবে না।
Advertisement
আরও পড়ুন