US-Iran Nuclear Talk

পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইটালিতে শুরু আমেরিকা-ইরান আলোচনা, সুর বদলে ট্রাম্পের আশ্বাস তেহরানকে

ট্রাম্পের দাবি, পরমাণু কর্মসূচির কারণে ইরানের উপর হামলার জন্য ইজ়রায়েল প্রস্তুতি নিলেও আমেরিকা তাদের ঠেকিয়ে রেখেছে। চুক্তি নিয়ে তাড়াহুড়ো না করারও বার্তা দিয়েছেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:০৮
Talks between Iran and the US over Tehran\\\\\\\'s rapidly advancing nuclear programme begin in Rome of Italy

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

পরমাণু চুক্তি নিয়ে দ্বিতীয় দফার বৈঠকে বসল আমেরিকা এবং ইরান। শনিবার ইটালির রাজধানী রোমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু ওয়াশিংটনের প্রস্তাব মেনে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ-সহ যাবতীয় পরমাণু কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণ বন্ধ’ করতে তেহরান সম্মত হবে কি না, তা নিয়ে কয়েকটি পশ্চিমি সংবাদমাধ্যম ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে।

Advertisement

রোমে পৌঁছে আরাকচি শনিবার বলেন, ‘‘আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ইরান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বোঝাপড়ার সুযোগটি অবশ্যই আমাদের কাজে লাগাতে হবে।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রোমে বৈঠকের আগে পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানকে সময় দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনও তাড়াহুড়ো করতে চাই না। আমি মনে করি ইরান একটি মহান দেশ। ধ্বংস এবং মৃত্যুর মুখে নিজেদের না নিয়ে গিয়ে ইরানবাসীর শান্তিতে জীবন যাপনের অধিকার রয়েছে।’’

এর আগে গত শনিবার (১২ এপ্রিল) ওমানের রাজধানী মাসকটে পরমাণু চুক্তি নিয়ে মুখোমুখি আলোচনায় বসেছিলেন স্টিভ এবং আরাঘচি। কিন্তু তা কার্যত নিষ্ফল হয়েছিল। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই এবং প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজ়েকশিয়ানকে ইতিমধ্যেই ট্রাম্প হুমকি দিয়ে রেখেছেন, পরমাণু চুক্তিতে সই না করলে সামরিক আগ্রাসনের মুখোমুখি হতে হবে। মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস হ্যারি ট্রুম্যানের পাশাপাশি ইউএসএস কার্ল ভিনসনকেও গত সপ্তাহে পাঠানো হয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলে। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নতুন পরমাণু চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য ইরানকে দু’মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেইকে মার্চ মাসে চিঠি পাঠিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই চিঠির পরেই আরাঘচি ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা খারিজ করে বলেছিলেন, ‘‘আমেরিকার সঙ্গে আর কথাবার্তা এগোনোই সম্ভব নয়, যদি না বিশেষ কিছু বিষয় ওরা বদল করে। ইরান কোনও একগুঁয়েমি থেকে এটা করছে না। ইরানের এই অবস্থান ইতিহাস এবং অভিজ্ঞতার ফল। ওয়াশিংটনকে ওদের নীতি পুনর্বিবেচনা করতে হবে।’’ এর পরে ট্রাম্প সরাসরি ইরানে বোমাবর্ষণের হুমকি দিয়েছিলেন। এর পরে সুর নরম করে আলোচনায় সম্মতি দিয়েছিল ইরান।

রাষ্ট্রপুঞ্জের পরমাণু বিষয়ক নজরদারি সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি’ (আইএইএ)-র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি শুক্রবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ইরান গোপনে পরমাণু অস্ত্র নির্মাণের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁর ওই মন্তব্যের পরেই এর পরেই আরঘচি বলেন, ‘‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকারের বিষয়টি বাতিল করা নিয়ে আমরা আমেরিকার সঙ্গে কোনও আলোচনা করব না।’’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে তেহরান অনড় থাকে কি না, তা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, পরমাণু কর্মসূচির কারণে ইরানের উপর হামলার জন্য ইজ়রায়েল প্রস্তুতি সেরে ফেললেও আমেরিকা তাদের ঠেকিয়ে রেখেছে। সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। শুক্রবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে ওই মন্তব্য করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জমানায় ইরানের সঙ্গে তিন বছরের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি করেছিল ছয় শক্তিধর রাষ্ট্র— ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি, চিন এবং আমেরিকা। চুক্তির নাম ছিল ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ)। তাতে স্থির হয়, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি বন্ধ রাখলে তেহরানের উপর বসানো আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে রাষ্ট্রপুঞ্জ, আমেরিকা এবং অন্য কয়েকটি দেশ। এতে উভয় পক্ষই লাভবান হয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে প্রথম বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে ট্রাম্প জানান, এই পরমাণু চুক্তি ওবামার ভুল পদক্ষেপ। এর ফলে আমেরিকার কোনও সুবিধা হয়নি। উল্টে লাভ হয়েছে ইরানের। ২০১৮ সালে তাঁর নির্দেশে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসে আমেরিকা। কিন্তু ২০২৪ সালে আইএইএ একটি রিপোর্টে জানায়, ফের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি শুরু করেছে ইরান। তাদের কাছে ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে। এর পরেই নড়েচড়ে বসে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়া। যদিও তেহরানের তরফে বার বার দাবি করা হয়েছে যে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শুধু মাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অন্যান্য শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হচ্ছে।

Advertisement
আরও পড়ুন