বাংলাদেশ যুদ্ধে পাক সেনার আত্মসমর্পণের সেই ছবি। ছবি: সংগৃহীত।
ভারতীয় সেনার পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার জগজিৎ সিংহ অরোরার পাশে বসে আত্মসমর্পণের নথিতে সই করছেন পাক ফৌজের লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লা খান নিয়াজি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের যুদ্ধে পাক ফৌজের চূড়ান্ত পরাজয়ের সেই প্রমাণ টুইটারে পোস্ট করে ইসলামাবাদকে খোঁচা দিল আফগান তালিবান।
মঙ্গলবার পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লার উপস্থিতিতে সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আফগানিস্তান সীমান্ত লাগোয়া খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বড় মাপের সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার পরেই আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী আহমেদ ইয়াসির ইসলামাবাদকে হুঁশিয়ারি দেন। বাংলাদেশ যুদ্ধে ৯৩ হাজার পাক সেনা ও আধাসেনার আত্মসমর্পণের ছবি টুইটারে পোস্ট করে তিনি লেখেন আফগানিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে জড়ালে এমনই পরিণতি হবে পাকিস্তানের।
د پاکستان داخله وزیر ته !
— Ahmad Yasir (@AhmadYasir711) January 2, 2023
عالي جنابه! افغانستان سوريه او پاکستان ترکیه نده چې کردان په سوریه کې په نښه کړي.
دا افغانستان دى د مغرورو امپراتوريو هديره.
په مونږ دنظامي يرغل سوچ مه کړه کنه دهند سره دکړې نظامي معاهدې د شرم تکرار به وي داخاوره مالک لري هغه چې ستا بادار يې په ګونډو کړ. pic.twitter.com/FFu8DyBgio
গত অগস্টে টিটিপি গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরেই টিটিপির বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্ন অভিযান চালাচ্ছে পাক সেনা এবং ‘কাউন্টার টেররিজম ডিপার্টমেন্ট’ (সিটিডি)-এর যৌথ বাহিনী। আর তা করতে গিয়ে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ লাগোয়া আফগান ভূমিতেও অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছে পাক ফৌজের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে সাম্প্রতিক কালে পাক ও আফগান বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ টিটিপি-র। বালুচিস্তান প্রদেশের উত্তরাংশেও তাদের প্রভাব রয়েছে। আমেরিকায় ড্রোন হামলায় নিহত জঙ্গিনেতা বায়তুল্লা মেহসুদ প্রতিষ্ঠিত এই গোষ্ঠী বরাবরই পাক সরকারের বিরোধী। ২০১৪ সালে পেশোয়ারের একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে শতাধিক পড়ুয়াকে খুন করেছিল টিটিপি জঙ্গিরা। এর আগে ২০০৯ সালে টিটিপি-র বিরুদ্ধে ‘অপারেশন রাহ-ই-নিজত’ করেছিল পাক সেনা। পাকিস্তানের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সেটিই সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসবিরোধী সেনা অভিযান।
অন্য দিকে, উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সক্রিয় আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজউদ্দিন হক্কানির নেতৃত্বাধীন তালিবান গোষ্ঠী। যাদের সঙ্গে একদা ইসলামাবাদের সুসম্পর্ক থাকলেও এখন তা নেই। অন্য দিকে, সোয়াট উপত্যকায় সক্রিয় তালিবানের আর এক গোষ্ঠী ‘তেহরিক-ই নিফাজ-ই শরিয়তি মহম্মদি’ (টিএনএসএম) গোষ্ঠীর সঙ্গেও ইসলামাবাদের শত্রুতা রয়েছে। ২০১২ সালে মলালা ইউসুফজাইয়ের উপর হামলা চালিয়েছিল এই গোষ্ঠী।
আফগানিস্তানের তালিবানের হয়ে লড়তে টিটিপি এবং টিএনএসএম-এর বহু জঙ্গি ২০২১ সালের গোড়ায় সীমান্তের ওপারে পাড়ি দিয়েছিল। ২০২১-এর অগস্টে কাবুল দখলের পরে আফগানিস্তানের জেলে বন্দি টিটিপি-র নেতা মৌলানা ফকির মহম্মদকে মুক্তি দিয়েছিল তালিবান। আফগান তালিবান নেতা তথা সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মহম্মদ ইয়াকুবের নির্দেশেই তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। প্রসঙ্গত, নেতৃত্বের প্রশ্নে হক্কানি গোষ্ঠীর সঙ্গে তালিবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মহম্মদ ওমরের ছেলে ইয়াকুবের দীর্ঘ দিন ধরেই বিরোধ রয়েছে। পূর্বতন আশরফ গনির সরকারের জমানায় আফগান গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান রহমতউল্লার দাবি, ইয়াকুবের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই আফগানিস্তানের মাটিতে ঢুকে টিটিপি বিরোধী অভিযান চালিয়েছে পাক সেনা। বিষয়টি নিয়ে ক্রুদ্ধ ইয়াকুব-গোষ্ঠী।