৩০ তলা বহুতলের ধ্বংসস্তূপ ব্যাঙ্ককে। ছবি: রয়টার্স।
মায়ানমারে ভূমিকম্পের ফলে জোরালো কম্পন অনুভূত হয়েছে প্রতিবেশী তাইল্যান্ডেও। সেখানকার রাজধানী শহর ব্যাঙ্ককে ভূমিকম্পের ফলে ভেঙে পড়েছে নির্মীয়মাণ একটি ৩০ তলা ভবন। বহু শ্রমিক ওই বহুতলে কাজ করছিলেন। কেউ বেঁচে গিয়েছেন বরাতজোরে। কেউ কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে গিয়েছেন। শনিবার সকালে প্রত্যক্ষদর্শী এক শ্রমিক ভূমিকম্পের মুহূর্তের বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁর চোখের সামনেই ৩০ তলা বাড়ি ভেঙে পড়ে তাসের ঘরের মতো। সেই সময়ে তাঁর ভাই বহুতলে কাজ করতে ঢুকেছিলেন।
সংবাদ সংস্থা এএফপিকে ওই প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক খিন আং জানিয়েছেন, ব্যাঙ্ককে ৩০ তলা বহুতলটি তৈরির কাজে তিনি এবং তাঁর ভাই যুক্ত ছিলেন। বহু সরকারি দফতর ওই বহুতলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। বহুতল তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু তার মাঝেই ভূমিকম্পে ধূলিসাৎ হয়ে গেল তাঁদের নির্মাণ। ওই শ্রমিক বলেন, ‘‘দুপুর ১টা নাগাদ সবে আমার কাজ (শিফ্ট) শেষ হয়েছিল। আমি একটু জল খেতে বহুতল থেকে বাইরে বেরিয়েছিলাম। বেরোতে বেরোতে দেখলাম, আমার ভাইটা ভিতরে ঢুকল। ওর কাজ তখন থেকে শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু বাইরে বেরিয়ে কিছু ক্ষণের মধ্যেই দেখলাম চারদিকে ধুলো আর ধুলো। দেখলাম বহুতল ভেঙে পড়ছে। আমি প্রাণপণে ছুটেছি। আর কিছু দেখার সুযোগ পাইনি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ৩০ তলা ভেঙে পড়ল। ভাইটা ভিতরেই ছিল।’’
ঘটনার ভয়াবহতা যেন পিছু ছাড়ছে না যুবককে। তিনি বলেন, ‘‘ওই সময়ে আমার যে কী মনে হচ্ছিল, বলে বোঝাতে পারব না। চোখের পলকে সব শেষ হয়ে গেল।’’ তাঁর ভাইকে উদ্ধার করা গিয়েছে কি না, তিনি কী অবস্থায় আছেন, এখনও স্পষ্ট নয়।
শুক্রবার সকালে মায়ানমারে পর পর দু’বার জোরালো ভূমিকম্প হয়। প্রথম কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৭। পরে ‘আফটারশক’ (ভূমিকম্পের পরবর্তী কম্পন) হয় ৬.৪ মাত্রার। এই দুই কম্পনে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাঙ্ককেও। ৩০ তলা বহুতল ভেঙে ব্যাঙ্ককে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সে দেশের প্রশাসন। বহু শ্রমিক ওই ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে গিয়েছিলেন। এখনও চলছে উদ্ধারকাজ।
মায়ানমারের সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ভূমিকম্পের ফলে সে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০০২। আহত ২৩০০-র বেশি মানুষ। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে মায়ানমার। ভারত থেকে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে প্রথম দফার বিমান পৌঁছেছে মায়ানমারে। অন্তত ১৫ টন ত্রাণসামগ্রী সেখানে পাঠিয়েছে ভারত। পরবর্তী কালে আরও ত্রাণ পাঠানো হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মায়ানমার এবং তাইল্যান্ডকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।