পেগাসাসের নির্মাতা ইজরায়েলের সংস্থা এনএসও দোষী সাব্যস্ত। — প্রতীকী চিত্র।
নিশানায় ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোন। আড়ি পাতার চেষ্টা হয়েছিল ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের ফোনেও। তিন বছর আগে মোবাইলে আড়ি পাতা ও নজরদারি করার অস্ত্র পেগাসাস স্পাইওয়্যার নিয়ে রাহুল গান্ধী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিরোধী নেতানেত্রী থেকে আইনজীবী, সমাজকর্মী, বিচারপতিদের ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ ওঠে। তার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, ইজ়রায়েলের সংস্থা এনএসও এই স্পাইওয়্যার পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে বিক্রির চেষ্টা করেছিল।
আজ আমেরিকার নর্থ ক্যালিফোর্নিয়ার ডিস্ট্রিক্ট আদালত পেগাসাসের নির্মাতা ইজরায়েলের সংস্থা এনএসও-কে দুনিয়া জুড়ে ১,৪০০ ওয়টস্যাপ ব্যবহারকারীর মোবাইলে আড়ি পাতার জন্য নিশানা করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করল। এনএসও বিভিন্ন দেশের সরকারের জন্য এই স্পাইওয়্যার তৈরি করেছিল, যাতে সরকার প্রয়োজনে সমাজকর্মী, সাংবাদিকদের ফোনে আড়ি পাততে পারে। এর বিরুদ্ধে ওয়টস্যাপ-এর মালিক সংস্থা মেটা আমেরিকার আদালতে মামলা করেছিল। পাঁচ বছর পরে এই মামলার রায় এল।
আমেরিকার আদালত বলেছে, এনএসও আইন ভেঙেছে। এনএসও যুক্তি দিয়েছিল, তাদের থেকে যারা স্পাইওয়্যার কিনছে, তারা কী ভাবে সেটা কাজে লাগাচ্ছে, সেই দায় তাদের নয়। আদালত এই যুক্তি খারিজকরে দিয়েছে।
এই রায়ের পরে আজ এ দেশে বিরোধী শিবির প্রশ্ন তুলেছে, ভারতে যে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে পেগাসাস কাজে লাগিয়ে বিরোধী, সমাজকর্মীদের ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছিল, তার কী হবে?
কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা প্রশ্ন তুলেছেন, “যাঁরা পেগাসাসের শিকার হয়েছিলেন, তাদের জন্য আমেরিকার আদালতের রায় ভাল খবর। কিন্তু যে সরকারি সংস্থা বা অসরকারি সংস্থা পেগাসাস কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ফোনে আড়ি পেতেছিল, তাদের কী হবে?”
পেগাসাস স্পাইওয়্যার কাজে লাগানোর তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরে সুপ্রিম কোর্ট এ নিয়ে তদন্ত কমিটি তৈরি করেছিল। সেই কমিটি ২৯টি ফোন পরীক্ষা করে। তার মধ্যে ৫টি ফোনে ম্যালওয়্যার বা বাইরে থেকে ঢোকানো সফটওয়্যার পাওয়া যায়। কিন্তু পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার হয়েছিল কি না, তা নির্দিষ্টকরে তদন্ত কমিটি বলতে পারেনি। সুপ্রিম কোর্ট তদন্ত কমিটিকে উদ্ধৃত করে বলেছিল, মোদী সরকার এই তদন্তে সহযোগিতা করেনি। রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, এ বার আমেরিকার আদালতের রায় আসার পরে নতুন করে এ নিয়ে জলঘোলা হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের ওই তদন্ত কমিটি তৈরির আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিজেই একটি তদন্তকমিশন গঠন করেছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট নিজেই তদন্ত কমিটিগঠন করার পরে রাজ্য সরকারের তদন্ত কমিশনের কাজে স্থগিতাদেশ জারি করেছিল।