নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী দুই সাংবাদিক। মারিয়া রেসা (বাঁ দিকে) ও দ্মিত্রি মুরাতভ। ছবি- নোবেল কমিটির সৌজন্যে।
আমজনতার মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিতে আজীবন লড়াই চালিয়ে যাওয়া দুই পথিকৃৎ সাংবাদিককে এ বার দেওয়া হল নোবেল শান্তি পুরস্কার। জয়ীদের অন্যতমা ফিলিপিন্সের মহিলা সাংবাদিক মারিয়া রেসা। অন্য জন রাশিয়ার বিশিষ্ট সাংবাদিক দ্মিত্রি মুরাতভ। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার দাবিতে বুক চিতিয়ে আজীবন লড়াই করার স্বীকৃতি হিসাবেই শুক্রবার এই দুই শান্তি পুরস্কারজয়ীর নাম ঘোষণা করেছে নোবেল কমিটি।
নোবেল কমিটি বলেছে, ‘‘এই দু'জনের অবাধ, নিরপেক্ষ ও তথ্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা সব সময়েই ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, মিথ্যা ও যুদ্ধবাজদের মুখোশ খুলে দিতে তৎপর থেকেছে। কোনও কুণ্ঠাবোধ না করে অসমসাহসেই তাঁরা কাজ করে গিয়েছেন। করে চলেছেন। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া বিশ্বভ্রাতৃত্ব অসম্ভব। নিরস্ত্রীকরণ ও উন্নততর পৃথিবী গড়ে তোলাও সম্ভব নয়। তাই এই দু'জনকে সম্মান জানানোর মাধ্যমে নোবেল কমিটি আলফ্রেড নোবেলের শেষ ইচ্ছাপত্রকেই সম্মান জানাল।’’
দেশের বিভিন্ন সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা, স্বৈরতন্ত্র, ক্ষমতার অপব্যবহার, মিথ্যা, দুর্নীতির মুখোশ খুলে দেওয়া ও মানুষকে বশে রাখতে হিংসা, সন্ত্রাসের ব্যবহারের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে অকুণ্ঠচিত্তে প্রতিবাদে গর্জে ওঠার জন্য ফিলিপিন্সে গত এক দশক ধরেই কিংবদন্তি হয়ে উঠেছেন সাংবাদিক মারিয়া রেসা। ২০১২ সালে তিনি আর এক জনকে সঙ্গে নিয়ে গোড়াপত্তন করেন ‘র্যাপলার’ নামে একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম সংস্থার। র্যাপলার-এর সিইও সাংবাদিক রেসা এখনও সেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন অত্যাচারী সরকারের দাঁত-নখকে উপেক্ষা করে। খুনি ড্রাগ মাফিয়াদের অস্ত্রের মুখে বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে। রেসার সেই লড়াই তাঁর নিজের দেশেরই মানুষের একাংশের বিরুদ্ধে হয়ে উঠলেও সঠিক জায়গায় কুঠারাঘাত করতে পেরেছেন বলে তাঁকে জনপ্রিয়ও করে তুলেছে উত্তরোত্তর। সমাজমাধ্যম কী ভাবে ভুয়ো খবর ছড়াতে সাহায্য করছে, বিরোধীদের হেয় করার হাতিয়ার হয়ে উঠছে, সেই মুখোশ উন্মোচনেও দ্বিধা করেননি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের কর্ত্রী সাংবাদিক রেসা।
অন্য দিকে একই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রাশিয়ার বিশিষ্ট সাংবাদিক দ্মিত্রি মুরাতভ। ২৮ বছর আগে ১৯৯৩ সালে কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে গোড়াপত্তন করেন রাশিয়ায় পুরোদস্তুর নিরপেক্ষ বলে পরিচিত একটি সংবাদপত্রের। যার নাম- ‘নোভাজা গাজেতা’। ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি ওই সংবাদপত্রের প্রধান সম্পাদক। গোড়া থেকেই মুরাতভ নিজে তো বটেই, তাঁর সংবাদপত্রও সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার, মিথ্যাচার, স্বৈরতন্ত্র, দুর্নীতি, পুলিশি বর্বরতা, অবৈধ গ্রেফতারি, ভোটে জালিয়াতি ও দেশের ভিতর ও বাইরে রুশ সামরিক বাহিনীর যাবতীয় দুর্নীতি ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব থেকেছে। প্রতিবাদে গর্জে উঠতে দ্বিধা করেনি বিন্দুমাত্র।