মানুষের সমর্থন নিয়ে সংশয়
Bangladesh Unrest

কোটা-বিরোধীরা নয়া দল গড়ছেন, ঘোষণা ইউনূসের

বাংলাদেশের সরকারপন্থী একটি সংবাদপত্র খবর দেয়, ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে ছাত্ররা নিজেদের নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ঘোষণা করতে চলেছেন।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:১৪
মুহাম্মদ ইউনূস।

মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র ।

কোটা-বিরোধী আন্দোলনের নেতারা বাংলাদেশে এ বার রাজনৈতিক দল গড়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই নিয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামের সংগঠনটির নেতারা নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তবে একটি ব্রিটিশ অর্থনৈতিক সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়ে দিয়েছেন, “ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করতে চলেছে।” বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হওয়া সাক্ষাৎকারটিতে ইউনূস বলেছেন, “দল গঠনের পরে হয়তো ছাত্ররা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এটা বিপদের। কারণ, সব ধরনের রাজনীতিবিদ তাদের সঙ্গে মিশে যাবে। বাংলাদেশে প্রচলিত রাজনীতির ধারা থেকে ছাত্ররা নিজেদের দূরে রাখতে পারবে কি না, আমরা জানি না। তবে ছাত্ররা তৈরি। তারা প্রচার চালাচ্ছে। দেশের মানুষকে সংগঠিত করছে।”

Advertisement

বাংলাদেশের সরকারপন্থী একটি সংবাদপত্র এ দিন খবর দেয়, ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে ছাত্ররা নিজেদের নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ঘোষণা করতে চলেছেন। সরকারে উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্বে থাকা দুই ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ তার আগে সরকারি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে নতুন দলে যোগ দেবেন। বর্তমানে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ নামে একটি ‘সামাজিক সংস্থা’ তৈরি করে থানা স্তর পর্যন্ত হবু দলের সংগঠন গড়ার কাজ চালাচ্ছেন ছাত্রনেতারা। বাংলাদেশের অন্য একটি সংবাদমাধ্যমের খবর, সরকারে থাকা দফতরহীন উপদেষ্টা, কিন্তু ইউনূসের বর্ণিত ‘মেটিকুলাসলি ডিজ়াইন’ করা হাসিনা-উচ্ছেদ আন্দোলনের প্রকৃত ‘মাস্টারমাইন্ড’ মাহফুজ় আলম আপাতত সরকারে থাকছেন। তিনি ইস্তফা দিতে পারেন জুনে।

তবে উপদেষ্টা নাহিদ জানিয়েছেন, তাঁর ও আসিফের ইস্তফার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। যদিও, তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে যখন আলোচনা চলছিল, তখন কথায় কথায় বলেছিলাম— সরকারে থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হব না। আমরা আপাতত সরকারের কাজই করছি।” এর পরে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ওই সংবাদপত্রটিকে সাংবাদিকতা শিক্ষা দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার পদে আসীন নাহিদ। বলেছেন, “রিপোর্টটি তো গুরুত্বপূর্ণ, সে ক্ষেত্রে খবরের উৎস উল্লেখ করা উচিত ছিল।আর একটু দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল।” এমনকি ছাত্ররা কোনও দল গড়ছে না বলে এ দিনও ফের দাবি করেন নাহিদ। তবে নাহিদদের ‘সামাজিক সংস্থা’ জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ঘোষণা করেছেন, ফেব্রুয়ারিতেই নতুন দলের নাম ও কমিটির কথা প্রকাশ করা হবে।

দল গড়লেও সরকারের আয়ু ছ’মাস পেরোনোর আগেই ভাবমূর্তি যথেষ্ট টোল খেয়েছে ছাত্রনেতাদের। ঢাকার কেন্দ্রস্থলে দামি একটি ভবনে তাদের বিশালাকার দফতর কী ভাবে হল, কারা তার অর্থ দিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি সংগঠনের সেই সদর দফতরে দুই দল কর্মীর মারামারিতে বহু ছাত্র জখম হন। তার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজের ছাত্রদের রাতভর সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণেও এই নেতাদের ব্যর্থতা সামনে আসে। ছাত্রনেতারা যে মোবাইল-বার্তা ছড়িয়ে লোক জড়ো করেন, তা হল— ‘তোরা সবাই রাজুতে আয়’ (রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হোন)। গত কয়েক বার সেই ডাকে একেবারেই জমায়েত হয়নি। সমাজমাধ্যমে ঠাট্টা করে বলা হচ্ছে, ‘এই বার্তা দিলে এখন ভাস্কর্যের রাজুও এলাকা ছেড়ে চলে যান।’ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা বৈষম্যবিরোধীদের সভা ভরায় বলে অভিযোগ সাধারণ ছাত্রদের। দল গড়ার পরে তারা কত মানুষের সমর্থন পান, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছেই।

Advertisement
আরও পড়ুন