বিনামূল্যে কী ভাবে হোটেল থাকার ফন্দি এঁটেছিলেন তরুণ? গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
২১ বছর বয়স। শখ বলতে নানা নামীদামি হোটেলে রাত কাটানো। বিলাসবহুল জীবন উপভোগ করা। কিন্তু তার জন্য কানাকড়ি খরচ করতে নারাজ যুবক। অন্তত ৬৩টি হোটেলে ব্ল্যাকমেল করে রাত কাটিয়ে অবশেষে গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। তরুণের নাম জিয়াং। ঘটনাটি দক্ষিণ চিনের।
জিয়াং প্রায় ৬৩টি হোটেলে থেকেছেন, খেয়েছেন। কিন্তু গাঁটের কড়ি খরচ করেননি বলে অভিযোগ। কারণ, বিনামূল্যে রাত কাটানোর জন্য বিশেষ ফন্দি এঁটেছিলেন জিয়ান। হোটেল ছাড়ার সময় ভাড়া দেওয়া তো দূরের কথা, উল্টে ক্ষতিপূরণ দাবি করতেন তিনি। কোথাও বলতেন, হোটেলের শৌচাগারে পোকামাকড়ের উৎপাত। কোথাও বলতেন, বিছানার অবস্থা জঘন্য। হাতেনাতে তার প্রমাণও দিতেন। কী ভাবে?
জিয়াং হোটেলে ঢোকার আগে ব্যাগে ভরে রাখতেন মরা আরশোলা, টিকটিকি, ছারপোকা থেকে ব্যবহার করা কন্ডোম কিংবা গোছা চুল। ঠিক হোটেল ছাড়ার সময় ঘর, বিছানা এবং শৌচাগারে ছড়িয়ে দিতেন সেগুলো। তার পর অভিযোগ জানাতেন কর্তৃপক্ষের কাছে। অভিযোগ শুনে বিশ্বাস না হলেও নিজেদের চোখে সে সব দেখে আর কিছু বলতে পারতেন না হোটেলের লোকজন। তখন শুরু হত জিয়াংয়ের ‘খেলা’। তিনি ভয় দেখাতেন, ক্ষতিপূরণ না দিলে সমাজমাধ্যমে ওই হোটেলের ‘গুণগান’ করবেন। এমনকি, অনলাইনে হোটেলের রেটিং শূন্য দিয়ে কমেন্টবক্সে লিখবেন কী রকম অস্বাস্থ্যকর এবং নোংরা ওই হোটেল। স্বাভাবিক ভাবে ভয় পেয়ে যেতেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। হোটেলের নাম খারাপ হবে, এই আশঙ্কায় কেউ কেউ ক্ষতিপূরণ দিতেন ২১ বছরের তরুণকে। কেউ জিয়ানের হাতে ইয়েন (চিনের মুদ্রা) গুঁজে দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে অনুরোধ-উপরোধ করতেন। এ ভাবেই বেশ চলছিল। কিন্তু একটি হোটেলে অভিযোগ করতে গিয়ে ধরা পড়েন তরুণ। ফাঁস হয়ে যায় ফন্দি।
ওই হোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের কাছে গিয়েও জিয়াং দাবি করেছিলেন বিছানায় ছারপোকা এবং চুল পড়ে আছে। তাঁর গা ঘিনঘিন করছে। তিনি এখনই হোটেল ছাড়বেন। কিন্তু তাঁকে যে ওই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হল, তার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বেঁকে বসেন কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, এমনটা হতেই পারে না। তখন জিয়াং তাঁর পুরনো অভ্যাস মতো হোটেলের লোকজনকে বলেন, ‘‘আমি যে ঘরটায় ছিলাম, দেখে আসুন।’’ কিন্তু তার পরেও নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকেন হোটেলমালিক। তাঁরা ‘তদন্ত’ শুরু করেন। ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ঠিক একই রকমের অভিযোগের কথা বিভিন্ন হোটেল থেকে তাঁদের কানে আগেই এসেছিল। প্রত্যেক হোটেল কর্তৃপক্ষ ওই ঘটনায় অবাক হয়েছিলেন। তাই তাঁরা এমন অভিযোগ শুনে পাল্টা ওই তরুণকে চেপে ধরেন। ডাকা হয় পুলিশকে।
তার পর জিয়ানের ব্যাগ থেকে যা পাওয়া গিয়েছে, তা দেখে চোখ কপালে ওঠে সবার। তাঁরা দেখেন, ব্যাগে মোট ২৩টি প্যাকেটে নানা রকম মরা পকামাকড়, ব্যবহার করা কন্ডোম রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে কৃতকর্মের কথা স্বীকার করে নেন তরুণ। পুলিশের কাছে তিনি জানিয়েছেন, এ ভাবে ৩০০টি হোটেলে ‘দুর্নীতি’র চেষ্টা করেছেন। সফল হয়েছেন ৬৩টিতে। ওই হোটেলগুলো থেকে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ আদায় করে ছেড়েছেন। বাকি হোটেলগুলোয় ঢোকার পর পরই বুঝেছিলেন ফন্দিতে কাজে হবে না। তাই বেরিয়ে এসেছিলেন।