দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। — ফাইল চিত্র।
দেশে সামরিক আইন জারি করার দায়ে বরখাস্ত হওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে শেষমেশ ‘অভিযুক্ত’ করল সে দেশের আদালত। চলতি মাসের শুরুতেই নিজের বাসভবন থেকে ইওলকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এ বার তাঁকেই সামরিক আইন এনে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে অভিযুক্ত করল দক্ষিণ কোরিয়ার আদালত।
রবিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মুখপাত্র হান মিন-সু। সাংবাদিক বৈঠকে হান বলেন, ‘‘সে সময় ইওলই দেশজোড়া বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এ বার সেই নেতার শাস্তির পালা।’’ প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই ইওলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার প্রস্তাব দিয়েছিল সে দেশের দুর্নীতি দমন শাখা। যদিও তার বিরোধিতা করেছিলেন বরখাস্ত হওয়া প্রেসিডেন্টের আইনজীবীরা। তাঁদের দাবি ছিল, ইওলকে বেআইনি ভাবে হেফাজতে রাখা হয়েছে। এর পরেই ইওলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। ইওলই ক্ষমতায় থাকাকালীন গ্রেফতার হওয়া প্রথম প্রেসিডেন্ট। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মতো অভিযোগ প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এমনকি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে তাঁর।
দেশে সাময়িক ভাবে সামরিক আইন (মার্শাল ল) জারি করার কারণে ইওলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে দক্ষিণ কোরিয়ার আদালত। তার পর এক বার তাঁর সরকারি বাসভবনে হানা দিয়েছিল পুলিশ এবং দুর্নীতি দমন শাখার যৌথ দল। যদিও বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতে পারেনি তারা। ইওলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিওরিটি সার্ভিস (পিএসএস)-এর কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে পুলিশের। শেষমেশ গত ১৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় ইওলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
গত ৩ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ইওল জানিয়েছিলেন, তিনি সারা দেশে সামরিক আইন বলবৎ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেন এমন সিদ্ধান্ত নিতে হল তাঁকে, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন ইওল। তিনি জানান, উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উনের মদতে ক্ষমতা দখলের ছক কষছেন বিরোধীরা। তাঁর ব্যাখ্যা ছিল, দেশকে কমিউনিস্ট আগ্রাসন থেকে সুরক্ষা দিতে এবং রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিকে নির্মূল করতে দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করছেন। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, সামরিক আইন জারির মধ্যে দিয়ে দেশে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চেয়েছিলেন ইওল। এর পরেই ইওলকে বরখাস্তের দাবি তোলেন বিরোধীরা। গত ১৪ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ভোটাভুটিতে বরখাস্তের দাবির পক্ষেই অধিকাংশ ভোট পড়ে।