মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।
সফরকারী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে শুক্রবার বেজিংয়ে উষ্ণ সংবর্ধনা দিয়ে আলোচনায় বসলেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। অবস্থানগত কারণে চিনের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিতে ২১০ কোটি ডলার অর্থ ও ঋণ সাহায্য ঘোষণা করল বেজিং। সড়ক, সেতু, বন্দর উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে চিনা শিল্প ও কারখানা স্থাপনের আহ্বান জানালেন ইউনূস। সেই সঙ্গে এত দিন দেওয়া ঋণে সুদের হার ৩-৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১-২ শতাংশ করা এবং কমিটমেন্ট ফি মকুব করার আর্জি জানিয়েছেন।
ইউনূসের চিন সফরের আগেই ঢাকায় চিনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানিয়েছিলেন, এই সফর সফল করার জন্য চিন প্রস্তুতি নিয়েছে। স্বয়ং চিনা প্রেসিডেন্ট শি দেখা করতে আগ্রহী নোবেলজয়ী ইউনূসের সঙ্গে। এ সবই বড় কিছু ঘোষণার পূর্ব লক্ষণ। এ দিন দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পরে দুই দেশের প্রতিনিধিরা অর্থনৈতিক ও কারিগরি ক্ষেত্রে সহযোগিতার একটি চুক্তি এবং সাস্কৃতিক আদানপ্রদান, সংবাদ মাধ্যম, খেলাধুলো ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার ৮টি এমওইউ (বোঝাপড়া চুক্তি)-এ স্বাক্ষর করেন। চিনা শিল্পের জন্য পৃথক অঞ্চল স্থাপনে ৩৫ কোটি ডলার, মংলা বন্দরের উন্নয়নে ৪০ কোটি ডলার সাহায্য এবং কারিগরি ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রকল্পের জন্য ১৫ কোটি ডলার ঋণ ও অনুদানের কথা ঘোষণা করেছে বেজিং। প্রধান উপদেষ্টার দফতরের আশা, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপনের জন্য চিনা কোম্পানিগুলি বাংলাদেশে ১০০ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করবে। জাপান, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, এশিয়া ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের পরে চিন বাংলাদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ ঋণদানকারী। তবে বিশ্বের বহু দেশ চিনের মহাজনী ঋণ ব্যবসার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদেরা আগের হাসিনা সরকারকে সতর্ক করলেও তারা বেজিংয়ের কাছ থেকে ঢালাও ঋণ নিয়ে গিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অনুদানের অর্থও ঋণ খাতে যোগ করে দিয়েছে চিন। এখন তার সুদের কমাতে দরবার করতে হচ্ছে ইউনূসকে।
চিনের জলসম্পদ মন্ত্রী লি গোয়েইংয়ের সঙ্গে এ দিন পৃথক সাক্ষাতে বাংলাদেশের নদী ও জল ব্যবস্থাপনায় ৫০ বছরের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রচনা করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন ইউনূস। তাঁর প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, এই আলোচনায় তিস্তা প্রকল্পের প্রসঙ্গও উঠেছিল। চিনা মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ও চিনের নদী-সমস্যা খানিকটা একই রকমের। নিম্ন অববাহিকায় জলাভাবে নদীতে চড়া পড়ে যাচ্ছে। ইউনূস তাঁকে জানান, বাংলাদেশের দক্ষিণাংশে শত শত নদী। নদী বাংলাদেশের জীবন। কিন্তু কখনও কখনও এই নদী মানুষের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নদী শাসন ও জল ব্যবস্থাপনায় চিন অসাধারণ কাজ করেছে। সেই অভিজ্ঞতা তারা বাংলাদেশে প্রয়োগ করুক।