আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাত। —ফাইল চিত্র।
কোটা সংস্কার আন্দোলনপর্বে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকার জন্য দুঃখপ্রকাশ করলেন বাহিনীর নতুন প্রধান। পাশাপাশি, শেখ হাসিনার জমানায় কোটা আন্দোলনপর্বে প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দিলেন তিনি।
দেশ জুড়ে তুমুল অশান্তির মধ্যেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহবুদ্দিন মঙ্গলবার পুলিশ মহানির্দেশক (আইজি) পদ থেকে চৌধুরী আবদুল্লা আল-মামুনকে সরিয়ে মহম্মদ ময়নুল ইসলামকে নিয়োগ করেছিলেন। বুধবার ময়নুল সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘দেশের প্রয়োজনে যে কোনও সঙ্কটময় মুহূর্তে পুলিশকে সব সময় সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যুক্তিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও আমাদের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। এ জন্য বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে আমি পুলিশ প্রধান হিসেবে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।’’
ভবিষ্যতে পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ময়নুল বলেন, ‘‘আমরা এখন থেকে আমাদের উপর অর্পিত আইনি সব দায়িত্ব পালনে দৃঢ় ভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। পুলিশের আইজি হিসাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনে আমরা সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।’’ প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে হাসিনার ইস্তফা এবং দেশত্যাগের পর সোমবার বিকেল থেকেই একপ্রস্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল পদ্মাপারে। ঢাকা-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় থানাগুলিতে হামলা চলে। অগ্নিসংযোগ হয়। মিরপুর মডেল থানা, বাড্ডা, মহম্মদপুর, যাত্রাবাড়ি, ভাটারা-সহ ঢাকা শহরে একাধিক থানায় সোমবার রাতেও হামলা চলে। খুন হন বেশ কিছু পুলিশকর্মী।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই ঢাকা-সহ বিভিন্ন জেলা শহরের বহু থানার ভবন কার্যত ‘জনমানবশূন্য’ হয়ে গিয়েছিল। যার প্রত্যক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, হাসিনা জমানায় পুলিশ কার্যত শাসকদল আওয়ামী লীগের ‘সহযোগী সংগঠনে’ পরিণত হয়েছিল। বিনা প্ররোচনায় লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড এমনকি গুলিও চালিয়েছে। যার পরিণামে নিহত হয়েছেন শতাধিক পড়ুয়া। পালাবদলের পরে তারই উলটপুরাণ দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি ঘোষণা করে সে দেশের পুলিশকর্মীদের সংগঠন।
মঙ্গলবার বিকেলে নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ওই সংগঠন সাম্প্রতিক অশান্তিতে পুলিশকর্মীদের খুনে অভিযুক্তদের সাজা, নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ-সহ মোট ন’দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছেন পুলিশকর্মীরা। বুধবার নতুন আইজি নির্দেশ দিয়েছেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে পুলিশকর্মী এবং অফিসারকে কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সকল মেট্রোপলিটন, নৌ, জেলা, রেলওয়ে, হাইওয়ে থানার কর্তা ও বাহিনীকে স্ব-স্ব পুলিশ লাইন্সে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’