বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।
আগামী বছরে বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার দেখা যেতে পারে। শনিবার এ কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা এবং শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয় গত ৫ অগস্ট। আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের তিন দিনের মাথায় সে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। তদারকি সরকারের প্রধান হন মুহাম্মদ ইউনূস। ইউনূসের প্রশাসনের মেয়াদ কত দিন থাকবে, তা নিয়ে অগস্ট মাস থেকেই চর্চা শুরু হয়। এই আবহে তদারকি সরকারের অন্যতম উপদেষ্টার মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, নির্বাচিত সরকার বিষয়ক মন্তব্যকে নিজের ব্যক্তিগত মত বলেই ব্যাখ্যা করছেন উপদেষ্টা।
যদিও ইউনূস নিজে এখনও বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে স্পষ্ট ভাবে কোনও মন্তব্য করেননি। একটি নির্বাচিত সরকারের পূর্ণ মেয়াদ হয় পাঁচ বছরের। সে ক্ষেত্রে ইউনূস বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন তদারকি সরকারের মেয়াদ হবে চার বছরের কম। তবে ঠিক কত দিনের মেয়াদ হবে, তা নিয়ে বাংলাদেশের তদারকি সরকার প্রধানের কোনও মন্তব্য প্রকাশ্যে আসেনি। গত অগস্টে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পরে ইউনূস জানিয়েছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। এর পরে অক্টোবরে অন্তর্বর্তী সরকারের আইনি উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, ২০২৫ সালে নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব।
সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউনূস জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে অর্থনীতি, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা এবং আমলাতন্ত্রে সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। আবার ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, গত মাসেই তদারকি সরকারের অপর এক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি জাতীয় সংসদের ত্রয়োদশ নির্বাচন হতে পারে। সেই সময়ে তিনি দাবি করেছিলেন, সে দেশে গণতন্ত্র ফিরতে আরও দেড় বছর সময় লাগতে পারে। বাংলাদেশে কবে নির্বাচন হবে, তা নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে তদারকি সরকারের একাধিক উপদেষ্টার একাধিক মন্তব্য উঠে এসেছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা পরস্পরবিরোধীও। এই অবস্থায় তদারকি সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টার নতুন মন্তব্য ঘিরে নির্বাচন ঘিরে জল্পনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধান তিনটি দল হল আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগ দৃশ্যত কোণঠাসা। তাদের ছাত্র শাখাকে ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে ইউনূসের প্রশাসন। তদারকি সরকারের প্রধানও অক্টোবর মাসের এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, আপাতত বাংলাদেশের রাজনীতিতে হাসিনার দলের কোনও জায়গা নেই। অগস্টের পর থেকে একাধিক মামলায় হাসিনার দলের বিভিন্ন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অক্টোবর মাসে ঢাকায় জাতীয় পার্টি (এরশাদ)-এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেছেন ইউনূস। সেখানেও আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টি (এরশাদ)-এর কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধান তিনটি দলের মধ্যে বিএনপির প্রতিনিধিরাই ছিলেন।
বাংলাদেশে হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছে। সম্প্রতি সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। তার পর থেকেই দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। ইসকনকে নিষিদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশ হাই কোর্টে মামলাও করে তদারকি সরকার। যদিও তা খারিজ করে দিয়েছে আদালত। এর পরেও সংখ্যালঘুদের উপর হামলার অভিযোগ বন্ধ হয়নি। ইসকনের কলকাতা শাখার মুখপাত্র রাধারমন দাস শনিবার অভিযোগ জানিয়েছেন, ঢাকার নামহট্টে ইসকনের কেন্দ্রে হামলা হয়েছে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারতও। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং চিন্ময়কৃষ্ণের আইনি অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বলেছে ভারত। অন্য দিকে বাংলাদেশের তদারকি সরকারের বক্তব্য, সংখ্যালঘুরা সে দেশে নিরাপদেই রয়েছেন। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ পছন্দ করছে না বাংলাদেশের প্রশাসন। এরই মাঝে গত সোমবার একদল উত্তেজিত জনতা ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে প্রবেশ করে। ওই ঘটনার কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিবৃতি দেয় বিদেশ মন্ত্রক। ঘটনার নিন্দা করে কেন্দ্র। বিবৃতিতে বিদেশ মন্ত্রক জানায়, কোনও দেশের দূতাবাস বা উপদূতাবাসকে নিশানা করা কাম্য নয়, তা যে পরিস্থিতিই হোক না কেন! ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস এবং উপদূতাবাসগুলির সামনে নিরাপত্তা বৃদ্ধিও করা হয়। অন্য দিকে ত্রিপুরার ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ভারত বিরোধী স্লোগান ওঠে সোমবার রাতে। তার পরে সে দেশেও ভারতীয় দূতাবাস এবং উপদূতাবাসগুলির সামনে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়।
এই পরিস্থিতিতে আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রির। আগামী ৯ ডিসেম্বর দু’দেশের বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে ঢাকায়। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হতে পারে ওই বৈঠকে।