—প্রতীকী চিত্র।
আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশের প্রশ্নের জবাব দিতে এ বার ঢাকা বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নিজের চোখে বাংলাদেশের নির্বাচন দেখতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাল। ভারতের সমর্থন সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশকে জানিয়েছে, তাঁরা চাইলে বাংলাদেশের নির্বাচন দেখতে যাওয়ার জন্য পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারেন। বাংলাদেশ এ বিষয়ে সমস্ত রকম সহযোগিতা করবে।
সূত্রের খবর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের প্রতিনিধি পাঠাবে বলে জানিয়েছে। অন্যান্য দেশও সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবে। গত কাল নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের বিদেশসচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রথমে ভারতের বিদেশসচিব বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন। তার পরে মোমেন দিল্লিতে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের প্রধান, রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের আগামী ৭ জানুয়ারি, বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কে বিশদে জানান। প্রায় ৯০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ৫৪টি দেশের প্রতিনিধি বৈঠকে ছিলেন।
ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে, ভারতের বিদেশসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পরে এতগুলি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদেশসচিবের বৈঠক ও তাঁর বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। কারণ, ভারতও মনে করে, বাংলাদেশের ভোটে কী হবে তা সে দেশের মানুষের বিষয়। তবে প্রতিবেশী দেশে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বাড়ুক, দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলে অস্থিরতা তৈরি হোক, সেটাও ভারত চায় না।
আজ সাংবাদিক বৈঠকে বাংলাদেশের বিদেশসচিব বলেন, “আমরা দিল্লিতে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের নির্বাচনের বিষয়ে জানিয়েছি। আমরা জানিয়েছি, কিছু বিরোধী শিবিরের ধ্বংসাত্মক কাজকর্ম সত্ত্বেও নির্বাচনের সময়ে উৎসবের আবহ থাকবে। ওঁরা মনে করলে পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারেন। আমরা তাঁদের স্বাগত জানাতে তৈরি।”
একই সঙ্গে ভারতের অবস্থানের ভূমিকার প্রশংসা করে মোমেন বলেন, “ভারত ইতিমধ্যেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। ভারত বাংলাদেশের সংবিধান ও মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান জানিয়ে চলার আশ্বাস দিয়েছে।” আমেরিকার মতো দেশগুলি বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে ‘কেয়ারটেকার সরকার’ নিয়োগের জন্য শেখ হাসিনা সরকারের উপরে প্রবল চাপ তৈরি করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানে এমন কোনও ব্যবস্থা নেই। ভারতও বাংলাদেশের সঙ্গে একমত। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানালেও মোমেন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ পছন্দ করে না। বাংলাদেশ নিজের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি দায়বদ্ধ।
বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া ও তাঁর দল বিএনপি-র অনুপস্থিতি নিয়ে আমেরিকার মতো দেশগুলি প্রশ্ন তুলেছে। বাংলাদেশের বিদেশসচিব জানান, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন নতুন করে গঠন করা হয়েছে। এক জন নির্বাচন কমিশনার এ কথাও বলেছিলেন, বিএনপি বা অন্য কোনও দল নির্বাচনে শামিল হতে চাইলে মনোনয়নের সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে। তবে ভোটগ্রহণের দিন পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। অন্যান্য দেশগুলিকে ইতিহাসের ভিত্তিতে, বাংলাদেশের পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের নির্বাচনকে দেখতে হবে। অন্য দেশের মাপকাঠির ভিত্তিতে বাংলাদেশের নির্বাচনকে দেখলে চলবে না। বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উপস্থিতির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের বিপুল ভাবে অংশগ্রহণও গণতন্ত্রের প্রধান মাপকাঠি।
বাংলাদেশে সম্প্রতি আওয়ামী লিগের সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় বিএনপি-র শীর্ষনেতা মির্জা ফখরুল আলমগিরকে আটক করা হয়েছিল। বিরোধী নেতা, মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেফতার নিয়েও আমেরিকার মতো দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের বিদেশসচিব বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করেছে। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। গাড়ি, রেলের কামরায় আগুন দিয়েছে। আইন মেনেই এই সব ঘটনায় জড়িতদের পুলিশ
গ্রেফতার করেছে।
নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে। এই বিষয়ে পেঁয়াজ, চাল, ডিমের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের জোগান অব্যাহত রাখতে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। গত কাল দুই দেশের বিদেশসচিবের মধ্যে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। মোমেনের বক্তব্য, সমস্যা হল, ভারতেও মাঝে মাঝে এই সব পণ্যের অভাব দেখা যায়। ফলে ভারতকেও রফতানিতে রাশ টানতে হয়। তবে ভারত ন্যূনতম পরিমাণ পণ্যের জোগানের আশ্বাস দিলেও বাংলাদেশে ফাটকাবাজি, কালোবাজারি বন্ধ রাখা সহজ হয়। বিদেশসচিব স্তরের বৈঠকে তিস্তা ও অন্যান্য নদীর জলবণ্টন নিয়ে দ্রুত চুক্তির প্রয়োজনীয়তা ও বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।