‘ডিএফ-২৬’। —ফাইল চিত্র।
চিনের সামরিক শক্তি এবং অস্ত্র ভান্ডার নিয়ে প্রতি বছর আমেরিকান কংগ্রেসে একটি বিশেষ রিপোর্ট পেশ করে পেন্টাগন। এ বছর সেই রিপোর্টে চিনের পরমাণু অস্ত্র ভান্ডারের সমৃদ্ধি দেখে চক্ষু চড়কগাছ কংগ্রেসের। এই সময়ে যখন বিশ্বের অন্য দেশগুলি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের কথা ভাবছে, তখন অভাবনীয় দ্রুততায় পরমাণু অস্ত্র ভান্ডারের বহর বাড়িয়ে যাচ্ছে বেজিং।
রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধুমাত্র এ বছরেই অন্তত ১০০টি পরমাণু অস্ত্র বাড়িয়েছে চিন। এখন চিনের ভাঁড়ারে ছশোর মতো পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। পেন্টাগনের দাবি, ২০৩০ সালের মধ্যে তা হাজারে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বেজিং। চিনের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। সাধারণ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি পরমাণু শক্তিচালিত ক্ষেপণাস্ত্রও মজুত করছে তারা। পেন্টাগনের খবর, ২০৩৫ সাল পর্যন্ত পরমাণু অস্ত্রভান্ডার বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বেজিংয়ের।
চিন অবশ্য বরাবর তাদের সামরিক ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে চূড়ান্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে থাকে। সেনা, বায়ুসেনা, নৌবাহিনী হোক বা অস্ত্রভান্ডারের খুঁটিনাটি— এ সব নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলে না বেজিং। যদিও সরকারি ভাবে প্রতি বছরই তারা প্রতিরক্ষা বাজেট পেশ করে। পেন্টাগন অবশ্য মনে করে, ওই বাজেটে সঠিক হিসাব দেওয়া থাকে না। যেমন বেজিংয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রতিরক্ষা খাতে চিন ২২,৪০০ কোটি ডলার বাজেট ধার্য করেছে। পেন্টাগনের মতে, চিনের প্রকৃত বাজেট এর থেকে অন্তত ৪০ শতাংশ বেশি। যা আমেরিকার প্রতিরক্ষা বাজেটেরপ্রায় অর্ধেক।
সমৃদ্ধ অস্ত্রভান্ডারের পাশাপাশি চিনের হাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নৌবহর রয়েছে। তাদের যুদ্ধজাহাজ ও ডুবোজাহাজের মোটসংখ্যা অন্তত ৩৭০। সেখানে আমেরিকার হাতে রয়েছে ২৯০টি যুদ্ধজাহাজ। চিনা বায়ুসেনা বাহিনীও কম শক্তিশালী নয়। নানা ধরনের যুদ্ধবিমানের মোট সংখ্যা প্রায় ২ হাজার।
সরকারি ভাবে প্রতিরক্ষা নিয়ে আমেরিকা-চিনের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান বা আলোচনার জায়গা থাকলেও বাস্তবে তা হয় না বললেই চলে। মামুলি তথ্য বিনিময় বা সাধারণ কিছু সৌজন্য আলাপ-আলোচনা চললেও আমেরিকার সঙ্গে প্রতিরক্ষা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের কোনও বৈঠক এড়িয়ে চলে চিন। গত মাসে লাওসে প্রতিরক্ষা সম্মেলনে চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডং হুনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন। কিন্তু চিন সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করে। অস্টিন একে ‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা’ বলেছেন।
অবশ্য চিনের উপরে নজরদারি চালিয়ে যেতে আগেভাগেই দুই দুঁদে কর্তার উপরে দায়িত্ব সঁপেছেন আমেরিকার ভাবী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর প্রশাসনে বিদেশ সচিবের দায়িত্ব পাওয়া মার্কো রুবিয়ো এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে মনোনীত মাইক ওয়ালজ়ের উপরে সেই দায়িত্বভার বর্তেছে। ২০২০ সাল থেকে রুবিয়োর উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে বেজিং। চিনের মাটিতে রুবিয়োর প্রবেশের অনুমতি নেই। তবে আসন্ন ট্রাম্প জমানার বিদেশ সচিবের উপরে এই নিষেধাজ্ঞা বেজিং পুনর্বিবেচনা করে দেখবে বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা। অন্য দিকে, ইউক্রেন ও মধ্য এশিয়ার যুদ্ধ থেকে নজর সরিয়ে চিনের উপরে মনোনিবেশ করার জন্যে ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের কাছে আর্জি জানিয়েছেন মাইক।