Bangladesh Unrest

হাসিনা দেশ ছাড়ার পরে মোট ২০১০টি সাম্প্রদায়িক হামলা

বহু সংখ্যালঘু মানুষ আতঙ্কে চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসছেন। অনেকে ধরা পড়েছেন। রাতে সীমান্ত পেরোতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন এক জন সংখ্যালঘু তরুণ।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৬

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

উত্তর বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়িতে গাছের গায়ে পোস্টার মেরে আগাম ঘোষণা করে সংখ্যালঘু পরিবারের স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। গত কাল মেয়েটির পরিবার থানা ও প্রশাসনকে বিষয়টি জানানোর পরে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তাকে উদ্ধার করা যায়নি। পুলিশ থেকে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক সকলেই জানিয়েছেন— অভিযোগ পেয়েছেন, বিষয়টি তাঁরা দেখছেন।

Advertisement

৩০টি সংখ্যালঘু পরিবারকে নিয়ে গ্রামটির একটি বাড়ির সামনে কয়েকটি গাছে ২ সেপ্টেম্বর পোস্টার লাগানো হয়— ৭ দিনের মধ্যে এই বাড়ির একটি মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। আতঙ্কিত পরিবার পর দিনই পুলিশে অভিযোগ করে। দুষ্কৃতীদের পান্ডা-সহ কয়েক জনের নামও পুলিশকে দেয়। কিন্তু পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। কাল বিকেলে টিউশন নিয়ে ফেরার পথে বাড়িটির এক কিশোরী কন্যাকে অপহরণ করে ওই দুষ্কৃতীরা। এলাকার সংখ্যালঘু পরিবারগুলি আতঙ্কে। গত ১৫ দিনে সংখ্যালঘু কিশোরীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে, যাকে নির্যাতনের নতুন পন্থা বলা হচ্ছে।

আজই পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার বোয়ালখালিতে যুগ যুগ ধরে আদি বাসিন্দা চাকমাদের প্রায় ১০০টি বাড়িঘর ও দোকান জ্বালিয়ে তাদের উৎখাত করে দিয়েছে সমতল থেকে এসে বেআইনি ভাবে বসতি গড়া এক দল লোক। আতঙ্কিত জনজাতির মানুষেরা অদূরে দিঘিনালা ক্যান্টনমেন্টে যান সাহায্যের জন্য। তাঁদের অভিযোগ, সেনাবাহিনী তো সাহায্য করেইনি, বরং হামলাকারীদের পক্ষেই কথা বলে। জনজাতি অধিকার আন্দোলনের নেতা সুহাস চাকমা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা ও অন্য জনজাতিগুলির উপরে আক্রমণ নেমে এসেছে। তাঁদের উৎখাত করতে চাইছে দুষ্কৃতীরা, কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে তা রোখার উদ্যোগ নেই।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ উড়িয়ে তাকে ‘ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার’ আখ্যা দিচ্ছেন। তবে আজই বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বৃহত্তম সংগঠন ‘হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’ ঢাকায় সাংবাদিক বৈঠক করে অগস্টের ৪ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত পক্ষকালে হওয়া এই সম্প্রদায়ের উপরে নির্যাতনের ঘটনার একটি হিসাব প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে ২০১০টি সাম্প্রদায়িক হামলায় ১৭০৫টি সংখ্যালঘু পরিবারের লোকেরা হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৪টি আদিবাসী পরিবারও রয়েছে। সংখ্যালঘুদের ৯১৫টি বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর, লুট ও অগ্নিসংযোগ, ৯৫৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, ২১টি জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং একটি বসতবাড়ি দখলের ঘটনা ঘটেছে। ৬৯টি উপাসনালয়ে হামলা ও আগুন লাগানো হয়েছে বা চেষ্টা হয়েছে। ৯ জন সংখ্যালঘু খুন হয়েছেন, ৪ জন নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। রিপোর্টে বাংলাদেশের জেলাওয়াড়ি ঘটনার বিবরণও দেওয়া হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, খুলনায় হামলা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। গণধর্ষণের সব ক’টি ঘটনা এই জেলায় ঘটেছে।

দিন কয়েক আগে বাংলাদেশের এক জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রও নানা জায়গায় হওয়া সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনার যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তা এই সংগঠনের প্রকাশ করা হিসাবের কাছাকাছি। বহু সংখ্যালঘু মানুষ আতঙ্কে চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসছেন। অনেকে ধরা পড়েছেন। রাতে সীমান্ত পেরোতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন এক জন সংখ্যালঘু তরুণ। তবে হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে ভারতের হাই কমিশন ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় বৈধ পথে ভারতে আসার সুযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে সংখ্যালঘুদের একাংশের অভিযোগ। সেই কারণেই ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ ভাবে সীমান্ত পেরোতে হচ্ছে বলে তাঁরা জানাচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement