—ফাইল চিত্র।
সাক্ষ্যগ্রহণ পর্বে এসে বগটুই হত্যা মামলায় কি ‘অন্য’ মোড়? আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের হাজিরায় গিয়ে স্বামীর খুনে অভিযুক্তদের চিনতেই পারলেন না তৃণমূল নেতা ভাদু শেখের স্ত্রী! যা দেখে কার্যত বেকায়দায় সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীর দাবি, ‘তলে তলে সমঝোতা’ হয়ে গিয়েছে দু’পক্ষের। সেই কারণে সঠিক ভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছেন না সাক্ষীরা।
২০২২ সালের ২১ মার্চ রাতে রামপুরহাট থানার ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বগটুই মোড়ে বোমা মেরে খুন করা হয় এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা ও স্থানীয় উপপ্রধান ভাদুকে। এর পর সেই রাতেই ভাদুর অনুগামীরা বগটুইয়ের বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। তাতে ন’জন মহিলা-সহ ১০ জনের মৃত্যু হয়। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে বগটুই হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার পায় সিবিআই। পরে ওই মামলার সঙ্গে ভাদু-খুনের মামলাও যুক্ত হয়। দুই মামলারই তদন্ত করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
দীর্ঘ টানাপড়েনের পর গত জুলাই মাসে চার্জ গঠন হয়েছিল বগটুই মামলায়। এর পর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় চলতি মাসে। বগটুইয়ে যাঁদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ, তাঁদের পরিবারের লোকেরা গত সপ্তাহে রামপুরহাটের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে সাক্ষ্যগ্রহণে হাজিরায় এসে অভিযুক্তদের চিনতে পারেননি। এক দিন নয়, পর পর দু’দিন একই ঘটনা ঘটেছে। স্বজনহারারা ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছিলেন। কিন্তু কাউকেই চিনতে পারেননি! তখন থেকেই তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের মনে প্রশ্ন জেগেছিল, কোথাও কি কোনও ‘সমঝোতা’ হয়ে গিয়েছে? এর পর থেকেই ভাদু খুনের মামলার দিকে নজর ছিল সকলের।
বুধবার ভাদুর স্ত্রী টেবিলা বিবি ও সুরজ তিওয়ারি নামে আর এক জন রামপুরহাট মহকুমা আদালতে হাজির হয়েছিলেন সাক্ষ্য দিতে। সুরজ ‘ঠিকঠাক’ সাক্ষ্য দিলেও অভিযুক্তদের কাউকেই চিনতে পারেননি টেবিলা। এতে ধন্দে পড়েছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় সংস্থার আইনজীবী আদালতের বাইরে বলেন, ‘‘ভাদু শেখের পরিবার ও বগটুই হত্যাকাণ্ডের স্বজনহারাদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে! এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।’’
প্রসঙ্গত, গত দু’বছরের মধ্যে স্বজনহারা পরিবারের সদস্য ফটিক শেখ, মিহিলাল শেখ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। বগটুই হত্যাকাণ্ডের বছরপূর্তিতে বিজেপি গ্রামে শহিদ বেদিও নির্মাণ করে। পাল্টা শহিদ বেদি তৈরি করে তৃণমূলও। এর পরে গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্বজনহারা পরিবারের সদস্যেরা বগটুই গ্রাম থেকে বিজেপির টিকিটে ভোটে লড়েছিলেন। কিন্তু হেরে যান তৃণমূলের কাছে। তার পরেই মিহিলাল ছাড়া স্বজনহারা পরিবারের অধিকাংশই ফের শাসক শিবিরের দিকে ঝুঁকেছেন বলে দাবি স্থানীয় সূত্রে।
ঘটনাচক্রে, গত সপ্তাহে মঙ্গলবার রামপুরহাট আদালতে আদালত চত্বরে স্বজনহারা পরিবারের এক যুবক দাবি করেছিলেন, প্রথম থেকেই কিছু না বলার ‘চাপ’ রয়েছে তাঁদের উপর! তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমাদের অনেককে যে অস্থায়ী সরকারি চাকরি দেওয়া হয়েছে, তা স্থায়ীকরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অথচ বিজেপির তরফে আমাদের পাশে থাকার আশ্বাস মেলেনি। ফলে সাক্ষীরা বিপদের মুখে পড়তে পারেন। আমরা নতুন করে আর কাউকে হারাতে চাইছি না!’’ জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি চেয়েছি। মাঝখান থেকে বিজেপি ঢুকে নাড়াচাড়া করে মামলার এই অবস্থা করেছে! তৃণমূল দোষীদের শাস্তি চায়।’’