মলয় ঘটক এবং বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
আধ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজিরার নির্দেশ ছিল। বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে তলব করেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ বিচারপতি এই নির্দেশ দেওয়ার ঠিক ২৫ মিনিটের মধ্যেই হাই কোর্টে পৌঁছে গেলেন আইনমন্ত্রী মলয়। নিজের এজলাসে তাঁকে দেখে বিচারপতি জানালেন, আইনমন্ত্রী আদালতে হাজিরা দেওয়ায় তিনি খুবই খুশি হয়েছেন। এর পরেই আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়ের বদলির ফাইলের প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রীর কাছে জানতে চান বিচারপতি। তার প্রেক্ষিতে মলয় আদালতে জানান, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, তিনি ওই ফাইল ছেড়ে দেবেন। অসুস্থ থাকার কারণেই সেই কাজ এখনও করে উঠতে পারেননি তিনি।
কাগজপত্র আইনমন্ত্রীর কাছে থাকায় বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক চট্টোপাধ্যায়ের বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি— বিচারবিভাগের সচিবের কাছে এ কথা শোনার পরেই আইনমন্ত্রী মলয়কে তলব করেছিলেন বিচারপতি। বিকেল ৫টার মধ্যে আইনমন্ত্রীকে আদালতে তলবের নির্দেশ রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের কাছেও পৌঁছে দিতে বলেন তিনি। জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিচারবিভাগের সচিবকেও সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। সেই মতো বিকেল ৫টার একটু আগে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে পৌঁছে যান মলয়।
মলয়কে দেখে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলে ওঠেন, ‘‘আপনি কোর্টে এসেছেন। আমি খুবই খুশি হয়েছি।’’ মলয় জানান, তিনি হাসপাতালে ছিলেন। দিন চারেক আগে তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। চিকিৎসক তাঁকে ১৫ দিন বিশ্রাম নিতে বলেছেন। এর পরেই বিচারক চট্টোপাধ্যায়ের বদলির ফাইলের প্রসঙ্গে মলয় বলেন, ‘‘যত দ্রুত সম্ভব আমি ফাইল ক্লিয়ার করে দিচ্ছি।’’ মলয় বিচারপতিকে আরও জানান, শুক্রবার তিনি আসানসোল যাচ্ছেন। তার পর যাবেন দিল্লি। এই সময়ে একটু ব্যস্ত রয়েছেন। কিন্তু তিনি শীঘ্রই ফাইল ছেড়ে দেবেন। এর পরেই বিচারপতির সামনে করজোড়ে নমস্কার করে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন মলয়। সেই সময় বিচারপতি বলেন, ‘‘অন্য ভাবে নেবেন না। খারাপ ভাবেন না। আপনি কোর্টে এসেছেন, আমি খুব খুশি। আপনি আপনার আদালতে এসেছেন।’’
সিবিআই তদন্তের ‘ধীর গতি আর গা-ছাড়া মনোভাবের’ কড়া সমালোচনা করে বুধবার সিবিআই সিটের প্রধান অশ্বিন শেণভিকে আদালতে তলব করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই মতো অশ্বিনী আদালতে হাজিরা দেন। তাঁর কাছে বিচারপতি জানতে চান, তদন্ত করতে গিয়ে কোনও বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে কি না তদন্তকারীদের। তার জবাবে অশ্বিন দাবি করেন, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি কুন্তল ঘোষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আধিকারিকদের ‘পুলিশি হেনস্থা’র মুখে পড়তে হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি কুন্তল ঘোষের অভিযোগের ভিত্তিতে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক চট্টোপাধ্যায়ই। এর পরেই আলিপুরের আদালতের বিচারকের প্রসঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সিবিআই বিচারকের কোনও ভাবেই হাই কোর্টের অর্ডারে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। এটি তাঁর এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ। শুনেছি, বিচারক অপর্ণ চট্টোপাধ্যায়ের বদলির নির্দেশ হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তাঁর মাথায় কারও হাত রয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে।’’ এর পরেই বিচারক চট্টোপাধ্যায়ের বদলির নির্দেশ দেন হাই কোর্টের বিচারপতি। তাঁর নির্দেশ, আগামী ৪ অক্টোবরের মধ্যে বিচারককে বদলি করাতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তাঁর এই নির্দেশ পালন হল কি না, তা জানিয়ে রিপোর্টও দিতে হবে হাই কোর্টের রেজিস্ট্রারকে। বিচারপতি বলেন, ‘‘ওই পদটি এখন ফাঁকা রয়েছে। ওই বিচারক অন্তর্বর্তী দায়িত্বে রয়েছেন। তাই ওই পদটিতে ৪ অক্টোবরের মধ্যে নতুন বিচারককে বসাতে হবে। আমি নির্দেশ দিচ্ছি, বিচারক চট্টোপাধ্যায় নিয়োগ দুর্নীতির আর কোনও মামলা শুনতে পারবে না।’’
আইনমন্ত্রীর ব্যস্ততার কথা শুনে নিজের আগের নির্দেশও বদলেছেন বিচারপতি। জানিয়েছেন, ৪ অক্টোবরের পরিবর্তে ৬ অক্টোবরের মধ্যে বদলির নির্দেশ কার্যকর করতে হবে। বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘আমি ৪ অক্টোবর বলেছিলাম। আরও দু’দিন সময় দিচ্ছি। ৬ অক্টোবরের মধ্যে করে দিন।’’