Jal Jeevan Mission

জল জীবনে প্রকল্পে পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ, লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদীর লক্ষ্যভেদে সংশয়

৩ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল, ‘হর ঘর জল’ বা ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে গ্রামের সমস্ত পরিবারে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া। যাতে লোকসভা ভোটে তার ফায়দা তোলা যায়।

Advertisement
প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৩৯
representational image

—প্রতীকী ছবি।

আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে গ্রামে প্রতি পরিবারে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া যাবে কি? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই লক্ষ্যপূরণের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয়ে কেন্দ্রই। কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রক এ জন্য পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড ও রাজস্থান, এই তিন বিরোধী শাসিত রাজ্যকেই দায়ী করছে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ-সহ এই তিনটি রাজ্যে এখনও গ্রামের অর্ধেক পরিবারে নলবাহিত জল পৌঁছে দিতে পারেনি।

Advertisement

এই তিন রাজ্যের মধ্যে আবার পশ্চিমবঙ্গ সব থেকে পিছিয়ে। অথচ এই প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গকে চাহিদা মতোই অর্থ জোগানো হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দাবি, ২০২৪-এর মার্চের মধ্যেই রাজ্যের গ্রামাঞ্চলের সব পরিবারে জল পৌঁছে যাবে।

২০১৯-এর ১৫ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘জল জীবন মিশন’ শুরু করেছিলেন। ৩ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল, ‘হর ঘর জল’ বা ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে গ্রামের সমস্ত পরিবারে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া। যাতে লোকসভা ভোটে তার ফায়দা তোলা যায়। সেই সময়ে দেশের ১৯ কোটি ২২ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারের মধ্যে মাত্র ৩ কোটি ২৩ লক্ষ পরিবার নলবাহিত পানীয় জল পেত।

কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত গোটা দেশে ১২ কোটি ৯২ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারে জল পৌঁছে গিয়েছে। ৬৭.২ শতাংশ লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ১ কোটি ৭৩ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারের মধ্যে ৬৪ লক্ষ ৮৪ হাজার পরিবারে নলবাহিত জল পৌঁছেছে। মাত্র ৩৭.৩৯ শতাংশ লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। ঝাড়খণ্ডে ৪০ শতাংশ মতো, রাজস্থানে ৪৩ শতাংশ মতো পরিবারে জল পৌঁছেছে। জলশক্তি মন্ত্রকের শীর্ষকর্তার অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলির জন্যই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে লক্ষ্য পূরণ হবে না

কী বলছে নবান্ন? রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী পুলক রায় বুধবারই বিধানসভায় বলেছেন, ২০২৪-এর মার্চের মধ্যে সব পরিবারেই নলবাহিত জল পৌঁছে যাবে। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ও পঞ্চায়েতগুলি একসঙ্গে কাজ করছে। কেন্দ্র অর্ধেক খরচ দিচ্ছে। বাকি খরচ রাজ্যের। মন্ত্রী এই দাবি করলেও রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, জল জীবন মিশনের কাজ রাজ্যে শুরু হতেই দেরি হয়েছে। তারপরে রাজ্য নিজের মতো প্রকল্পের নাম জলস্বপ্ন রেখে দেওয়ায় তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। তবে একশো দিনের কাজ বা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা আটকে থাকলেও এই প্রকল্পের টাকা কেন্দ্র দিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আগামী বছর মার্চের মধ্যে লক্ষ্যপূরণ হওয়া কঠিন বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিরোধীদের আশঙ্কা, প্রধানমন্ত্রী নিজের লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার জন্য লোকসভার প্রচারে গিয়ে রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার ও ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সরেন সরকারকে দোষারোপ করতে পারেন। বিরোধীদের অভিযোগ, বাস্তবে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যে এখনও ৬০ শতাংশ লক্ষ্য পূরণ হয়নি। একই হাল অসমেও। এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র গুজরাত, পঞ্জাব, হিমাচল, হরিয়ানা ও তেলঙ্গানায় শতকরা একশো ভাগ পরিবারে নলবাহিত জল পৌঁছেছে। গুজরাত, পঞ্জাবের মতো রাজ্য আগে থেকেই এগিয়ে ছিল।

কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ২০২৪-এর মার্চের মধ্যে ১০০% পরিবার না হলেও দেশের ৭৫% গ্রামীণ পরিবারে জল পৌঁছে যাবে। বাকি কাজ আগামী বছর ডিসেম্বরের মধ্যে সেরে ফেলা হবে। যাতে ভোটের আগে না হলেও অন্তত ২০২৪-এ লক্ষ্য পূরণের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা যায়।

আরও পড়ুন
Advertisement