CV Ananda Bose

উপাচার্যহীন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেই উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করবেন রাজ্যপাল, নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত আচার্যের

অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে রাজ্যের শিক্ষা দফতরের সঙ্গে রাজ্যপালের ‘তিক্ত’ সম্পর্ক। এর মধ্যেই আরও এক অস্থায়ী উপাচার্যকে নিয়োগ করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:৩৩
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।

রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে রাজ্যপালের সঙ্গে বাংলার শাসকদলের সংঘাত চলছে। এরই মধ্যে ফের বড় পদক্ষেপ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের। বৃহস্পতিবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রাজভবনের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যের যে ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে উপাচার্যহীন, সেই সব ক’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত আচার্য নিজেই সেই দায়িত্ব পালন করবেন। কার্যত নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিলেন আচার্য বোস। পাশাপাশি, তিনি আরও এক জন অস্থায়ী উপাচার্যকে নিয়োগ করলেন। রাজকুমার কোঠারিকে পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করলেন রাজ্যপাল। অর্থাৎ এখন রাজ্যের মোট ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য রয়েছেন।

Advertisement

রাজভবনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির যে ক’টিতে উপাচার্য পদ খালি রয়েছে সেখানকার ছাত্রদের ডিগ্রি শংসাপত্র এবং অন্যান্য নথি পেতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাঁদের সহায়তার জন্য মাননীয় রাজ্যপাল আচার্য হিসাবে তার ক্ষমতাবলে নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নিজেই সেই দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাজভবনের তরফে আরও জানানো হয়েছে, রাজ্যের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য না থাকায় ডিগ্রির শংসাপত্র এবং অন্যান্য নথি সংগ্রহে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পড়ুয়াদের। এই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ করেছেন আচার্য তথা রাজ্যপাল।

রাজভবনের তরফে জানানো হয়েছে, amnesaamne.rajbhavankolkata@gmail.com — এই মেল আইডিতে যে কোনও সমস্যার কথা জানাতে পারবেন পড়ুয়ারা। পাশাপাশি, একটি ফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে। ০৩৩ ২২০০১৬৪২ নম্বরে ফোন করতে পারবেন পড়ুয়ারা। চাইলে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখাও করতে পারবেন তাঁরা। পড়ুয়াদের সমস্যার কথা জানতে মাঝেমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করবেন রাজ্যপাল, এ কথাও জানানো হয়েছে রাজভবনের তরফে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সকালেই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমায় প্রশ্ন করে লাভ নেই। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু উপাচার্য নিয়োগ করেই নয়, উপাচার্য নিয়োগ না করে এক ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। অবিলম্বে শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপ দরকার। আমরা আইনি সহয়তার নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি।”

এর আগে রাজ্যপালের ভূমিকায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমাদের গভর্নর মহাশয় এখন কালো চশমা পরেন। তিনি পরতেই পারেন, একটার জায়গায় ১০টা। জ্ঞান দিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আমরা নাম পাঠালেও (উপাচার্য) নিয়োগ করেন না। নিজের ইচ্ছে মতো কেরল থেকে লোক নিয়ে এসে বসিয়ে দিচ্ছে। কেরলের অনেক বন্ধুই আমাদের এখানে থাকছেন, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ভিসি (উপাচার্য) হতে গেলে কমপক্ষে ১০ বছরের অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক জনকে ভিসি করেছেন, তিনি আবার কেরলে আইপিএস ছিলেন। যাঁর সঙ্গে এডুকেশনের কোনও যোগাযোগ নেই।’’

অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে রাজ্যের শিক্ষা দফতরের সঙ্গে রাজ্যপালের ‘তিক্ততা’ চলছে। এর আগে, রাজ্যের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেন আচার্য বোস। যা ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আচার্যের নিয়োগ করা উপাচার্যদের স্বীকৃতি দেবে না রাজ্য উচ্চশিক্ষা দফতর, এমনটাই জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এর পর, রাজ্যের ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন রাজ্যপাল। এর বিরোধিতা করে ব্রাত্য বলেছিলেন, ‘‘এই ঘটনা উচ্চশিক্ষায় হস্তক্ষেপ। রাজভবন থেকে আমাদের রাজ্যের উচ্চশিক্ষায় নজিরবিহীন হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ অন্য দিকে, সম্প্রতি রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ম্যাকাউট) অস্থায়ী উপাচার্য গৌতম মজুমদার পদত্যাগ করেছেন। গৌতমকে ‘একতরফা ভাবে’ বেছে নিয়েছিলেন রাজ্যপাল। ইস্তফা দিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অমিতাভ দত্ত। তাঁকেও অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস। পরে গণিত বিভাগের অধ্যাপক বুদ্ধদেব সাউকে যাদবপুরের অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল।

আরও পড়ুন
Advertisement