বাংলাদেশ থেকে ফেরা মৎস্যজীবীদের আর্থিক অনুদান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
বাংলাদেশে কয়েক জন ভারতীয় মৎস্যজীবীকে মারধর করা হয়েছে! সোমবার গঙ্গাসাগরের মঞ্চ থেকে এই মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশে বন্দি থাকা ৯৫ জন ভারতীয় মৎস্যজীবী ফিরে এসেছেন দেশে। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সহায়তাও করেন। প্রত্যেকের হাতে ১০ হাজার টাকা করে তুলে দেন তিনি। ওই মঞ্চ থেকেই মমতা বলেন, “কয়েক জন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। জানতে পারলাম, তাঁদের মারধরও করা হয়েছে। তাঁদের নিয়ে গিয়ে হাতগুলি দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। মোটা লাঠি দিয়ে তাঁদের মারা হয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, কয়েক জন মৎস্যজীবীকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে তিনি জানতে চেয়েছিলেন কী হয়েছে। মৎস্যজীবীরা তাঁকে কিছু বলতে চাননি এ বিষয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, পরে তিনি জানতে পারেন মারধরের বিষয়ে। তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে ফেরা কয়েক জন মৎস্যজীবীর কোমর থেকে পা পর্যন্ত চোট রয়েছে। তাঁরা জামাকাপড় পরে রয়েছেন বলে তা দেখা যাচ্ছে না। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক এবং কাকদ্বীপের বিধায়ক মন্টু পাখিরাকে তিনি নির্দেশ দেন, আহতদের ভাল করে চিকিৎসা করানোর জন্য। তাঁদের কোনও অর্থোপেডিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ারও পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রায় আড়াই মাস বাংলাদেশে বন্দি থাকার পর বাংলায় ফিরেছেন মৎস্যজীবীরা। তাঁদের পরিবারের উৎকণ্ঠা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার কথাও উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায়। বাংলার মৎস্যজীবীরা যাতে আগামী দিনে আর কোনও ভাবেই জলসীমা পার না করেন, সে কথাও বলেন তিনি। মমতা বলেন, “আপনারা কখনওই আমাদের সীমানার বাইরে যাবেন না। তাতে মাছ উঠলে উঠবে, না-উঠলে না-উঠবে। আগে জীবন বাঁচবে। জীবন বেঁচে থাকলে অনেক মাছ পাবেন। এই যে দু’মাস জেলে ছিলেন, তাতে আপনার পরিবারের কষ্ট হয়নি? আপনাদের কষ্ট হয়নি? যাঁরা মার খেয়েছেন, তাঁদের কষ্ট হয়নি?” অনেক সময়ে যে মৎস্যজীবীদের মাঝসমুদ্রে সীমানা স্থির করতে সমস্যা হয়, সে কথাও মানছেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝড়-জলের মধ্যে অনেক সময় পথ হারিয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। তবে জলসীমা অতিক্রম না-করার বিষয়ে মৎস্যজীবীদের সব সময়ে সতর্ক থাকার প্রস্তাব দেন মমতা।
বাংলাদেশেরও একটি ট্রলার জলসীমা পার করে এ দেশে চলে এসেছিল। বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদেরও সে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ওই বাংলাদেশি ট্রলারের অনেকেই অসুস্থ ছিলেন। এ দেশে তাঁদের ভাল করে চিকিৎসা করানো হয়। তাঁদের খুব যত্ন করে রাখা হয় এবং পরে ফেরত দেওয়া হয়। মমতা বলেন, “আমি চাই, দু’দেশই মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ থাক। কিন্তু ওদের ট্রলারটি আটকে থাকায় আমরা সম্পূর্ণ সাহায্য করলাম। অসুস্থদের চিকিৎসা করিয়ে ভাল ভাবে রাখা হয়, যাতে দেশের বা বাংলার কোনও বদনাম না হয়। আমরা পুরো সাহায্য করেছি।”
বাংলাদেশ থেকে ফেরা ৯৫ জন মৎস্যজীবীকে সোমবার ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজেই প্রত্যেকের হাতে সেই সহায়তা তুলে দেন। এ ছাড়াও এক মৎস্যজীবী ধরা পড়ার ভয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু হয়। সোমবার ওই মৃত মৎস্যজীবীর পরিবারের হাতে ২ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্য তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “চোখে জল এসে যাওয়ার মতো (পরিস্থিতি)। আমরা দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র। একে অপরকে ভালবাসি। কিন্তু পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন আমাদের মৎস্যজীবীরা।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, অনেক চেষ্টা করে এই ৯৫ জন মৎস্যজীবীকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। নিয়মিত ভাবে বাংলাদেশে আটকে পড়া মৎস্যজীবীদের বিষয়ে খোঁজখবরও রাখত রাজ্য। বাংলায় মৎস্যজীবীদের জন্য কী কী সরকারি সুযোগসুবিধা রয়েছে, সে কথাও সোমবার তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান নতুন প্রকল্পের কথাও। ঝড়-জলের মরসুমে মৎস্যজীবীরা মাছ ধরতে যেতে পারেন না। ওই সময়ে জেলার মৎস্যজীবীদের আর্থিক সাহায্যের জন্য ‘সমুদ্রসাথী’ নামে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ঝড়-জলের ওই দু’মাসে ৫ হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে প্রত্যেক মৎস্যজীবীকে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই প্রকল্পটি আগামী দিনে চালু হবে। প্রায় দু’লক্ষ মৎস্যজীবী এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। এর পাশাপাশি ‘মৎস্যজীবী বন্ধু’ প্রকল্পের কথাও জানান তিনি। কোনও মৎস্যজীবীর মৃত্যুর পর তাঁর নিকট আত্মীয়দের দু’লক্ষ টাকা আর্থিক সুবিধা দেওয়ার জন্য এই প্রকল্প। ইতিমধ্যে ২০০ পরিবারকে এই আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ষাটোর্ধ্ব মৎস্যজীবীদের মাসে এক হাজার টাকা করে পেনশন দিচ্ছে রাজ্য সরকার। মৎস্যজীবীদের ঋণের সুবিধার জন্য চালু করা হয়েছে ক্রেডিট কার্ডও। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পের আওতায় পাঁচ লক্ষেরও বেশি পুকুর কাটা হয়েছে। সেখানে মাছের চারা চাষ হচ্ছে। ফলে মাছের উৎপাদন এবং মৎস্যজীবীদের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে গঙ্গাসাগর থেকে জানান মমতা।