West Bengal BJP

তারাপীঠে পুজো দিয়ে শুরু পদ্মের প্রশিক্ষণ শিবির, বাড়তি নজরের ২৪ আসনে শক্তিবৃদ্ধিতে রাজ্যে সন্তোষ

বিজেপির পক্ষে লোকসভা নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়েছে অনেক আগেই। এ বার মোদী সরকারের ন’বছর পূর্তি উপলক্ষে এক মাসের কর্মসূচি দিয়ে সূচনা হচ্ছে ভোট প্রচার।

Advertisement
পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৩ ১১:৩৫
West Bengal BJP will organise 2 day camp for party Bistaraks in presence of B L Santosh

তারাপীঠে পুজো দিয়ে শুরু হবে পদ্মের প্রশিক্ষণ শিবির। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ১৮টি আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি, কিন্তু তৃতীয় বার কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার গঠনে বাংলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে গেরুয়া শিবির। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্য নেতৃত্বকে কমপক্ষে ৩৫টি আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছেন। সেই লক্ষ্য ‘কঠিন’ বলেই মনে করছে রাজ্য বিজেপি। তবে সেই অঙ্ক মিলিয়ে দিতে তৎপর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই। সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীদের উপর পুরোপুরি নির্ভর না করে তাই রাজ্যের দায়িত্ব নিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্তরের নেতারা। শাহ ছাড়াও গত লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়া আসনগুলিতে প্রস্তুতির দায়িত্ব নিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। এ বার রাজ্য আসছেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষও।

শুক্রবারেই তাঁর আসার কথা কলকাতায়। প্রথমে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন তিনি। তার পরে চলে যাবেন বীরভূমের তারাপীঠে। যেখানে শুক্রবার থেকেই শুরু হচ্ছে তিন দিনের ‘বিস্তারক প্রশিক্ষণ বর্গ’। এ রাজ্যের ২৪টি হেরে যাওয়া আসনের সংগঠন মজবুত করার লক্ষ্যে মাস ছ’য়েক আগেই ২৪ জন দলীয় কর্মীকে ‘বিস্তারক’ নিয়োগ করে বিজেপি। দীর্ঘ বাছাই পর্বের পর সেই ২৪ জনকে পাঠানো হয় পটনায়। সেখানে গোটা দেশের বিস্তারকদের প্রশিক্ষণ হয়। এ বার একই ভাবে বাংলায় হবে এখানকার পরিস্থিতি অনুযায়ী কী ভাবে কাজ করতে হবে তার প্রশিক্ষণ। সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে এই শিবিরে কেমন প্রশিক্ষণ হবে তা তো নয়ই, কারা আসছেন, কারা থাকছেন, তা-ও আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করবে না বলে ঠিক করেছে রাজ্য বিজেপি।

Advertisement

বিজেপি সূত্রেই জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্তোষ কলকাতায় এলেও তাঁর বৈঠকে থাকছেন না রাজ্য সভাপতি সুকান্ত। দুপুরেই তিনি চলে যাবেন তারাপীঠে। মন্দিরে পুজো দিয়ে স্থানীয় একটি হোটেলে শুরু হবে প্রশিক্ষণ বর্গ। রবিবার পর্যন্ত চলবে টানা প্রশিক্ষণ। গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও প্রশিক্ষণের দায়িত্ব না থাকলেও শনি বা রবিবার সেখানে যেতে পারেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুও। বিজেপিতে সংগঠন ও পরিষদীয় দলের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম বিভাজন থাকে। সে হিসাবে এই প্রশিক্ষণ শিবিরে শুভেন্দুর কর্তব্য তুলনায় কম। এখনও পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে, তাতে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রশিক্ষণ শিবিরে আমন্ত্রণ পাননি। তাঁর জন্য কোনও প্রশিক্ষণের বিষয়ও রাখা হয়নি।

একই ভাবে রাজ্য বিজেপির সল্টলেক দফতরে শুক্রবার সন্তোষের বৈঠকে শুভেন্দু বা দিলীপের থাকার কথা নয়। এই বৈঠকটিতে হবে মূলত মোদী সরকারের ন’বছর পূর্তি উপলক্ষে ৩০ মে থেকে ৩০ জুনের কর্মসূচির প্রস্তুতি পর্যালোচনা। অনেক আগে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিলেও এই এক মাসের কর্মসূচি দিয়েই গোটা দেশে প্রচারপর্বের আনুষ্ঠানিক সূচনা করতে চাইছে বিজেপি। যাতে এই রাজ্যেও সেটি সঠিক ভাবে পালিত হয়, তা নিশ্চিত করতেই শুক্রবারের সন্তোষ-বৈঠক।

গত বছর যখন ২০২৪ সালের লক্ষ্য ঠিক করা হয়, তখন এ রাজ্যের হেরে-যাওয়া ১৯টি আসন বেছেছিল বিজেপি। একাধিক আসন নিয়ে তৈরি হয়েছিল ছ’টি ক্লাস্টার। প্রতিটির দায়িত্ব ছিলেন এক জন করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাঁরা সকলেই অন্য রাজ্যের সাংসদ। এখন বিজেপি হেরে-যাওয়া ২৪টি আসনকেই লক্ষ্য ঠিক করেছে। ফলে ক্লাস্টারের সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১১। এর প্রতিটিতে এক জন করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং এক জন করে রাজ্য নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। সেই তালিকাও দু’এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারে বলে বিজেপি সূত্রে খবর।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়ে উত্তরপ্রদেশে ‘বিস্তারক’ নিয়োগ করে সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। গেরুয়া শিবির দাবি করে, এটি ছিল শাহের পরিকল্পনা। এর পরে ২০১৯ সালে গোটা দেশেই সেই পরিকল্পনা কাজে লাগানো হয়। বাংলাতেও নিয়োগ করা হয়েছিল বিস্তারক, যাঁরা সংগঠন বিস্তার করবেন। বিজেপি দাবি করে, তাতে সাফল্য এসেছিল। তবে ২০২১ সালে সেই পরিকল্পনা করেও তেমন সুবিধা পাওয়া যায়নি। অনেকে বলেন, বিস্তারক নিয়োগ করতে দেরি হয়ে যাওয়ায় ততটা ফল মেলেনি। পুরনো ত্রুটি সংশোধন করে বিজেপি এ বার অনেক আগে থেকেই বিস্তারক-পথে হাঁটতে শুরু করেছে। গোটা দেশের সঙ্গে বাংলাতেও। বিজেপির নিয়ম অনুযায়ী বিস্তারক বিভিন্ন লোকসভা এলাকায় গিয়ে কাজ করলেও স্থানীয় নেতৃত্বকে তাঁদের জবাবদিহি করতে হয় না। তাঁরা সরাসরি রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)-এর কাছেই কাজের রিপোর্ট দেন। বাংলায় ওই পদে থাকা অমিতাভ চক্রবর্তী এবং তাঁর সহযোগী সতীশ ধন্দও তারাপীঠের প্রশিক্ষণ বর্গে থাকছেন বলে জানা গিয়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement