Krishnanagar

WB Municipal Election 2022: জিতলে রেওয়াজি খাসি, হারলে কচি ডাব

কলকাতা থেকে কৃষ্ণনগর, কল্যাণী থেকে করিমপুর, রানাঘাট থেকে রামনগর, বীরনগর থেকে বেলডাঙা, বহরমপুর থেকে বরানগর, সর্বত্রই চায়ের আড্ডায় চলকে পড়েছে চা। আর তার পরেই ছিটকে এসেছে মোক্ষম চ্যালেঞ্জ— ‘হয়ে যাক বাজি...’

Advertisement
প্রণয় ঘোষ
কৃষ্ণনগর  শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২২ ২৩:৫৭
অলংকরণ- সনৎ সিংহ।

অলংকরণ- সনৎ সিংহ।

সকাল থেকেই মনে হচ্ছিল— এ শুধু শিবেরই দিন বুঝি! কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে ‘হর হর মহাদেব’-এর চেয়েও বড় হয়ে গেল ‘হার-জিত’ আর বাজি!

বাজি?

Advertisement

আজ্ঞে হ্যাঁ, বাজি। তবে এ বাজি বাবাজি, পটকা বা বোমা নয়, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘বেটিং’। কলকাতা থেকে কৃষ্ণনগর, কল্যাণী থেকে করিমপুর, রানাঘাট থেকে রামনগর, বীরনগর থেকে বেলডাঙা, বহরমপুর থেকে বরানগর, সর্বত্রই চায়ের আড্ডায় চলকে পড়েছে চা। আর তার পরেই ছিটকে এসেছে মোক্ষম চ্যালেঞ্জ— ‘হয়ে যাক বাজি...’

কোন পুরসভা কার দখলে আর কোন ওয়ার্ড কার— মুখে আগুন আর বুকে ফাগুন নিয়ে বাজির বিষয় এটাই। পুর-এলাকার লোকজন জানাচ্ছেন, ক’দিন ধরেই চায়ের ঠেক, পাড়ার মাচা, প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া গুমটি, ক্লাবের ক্যারামের আসরে বাজি, পাল্টা বাজি চলছিলই। বুধবার ভোটের ফল ঘোষণা। ঠিক তার আগের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার সেই বাজির বহর এতটাই বেড়েছে যে মুখ বেজার হয়েছে কাছের বন্ধুরও।

ভরা বারবেলায় বাজির এমন রমরমায় কি কিঞ্চিৎ ক্ষুব্ধ হলেন ভোলেবাবাও?

কী আছে এই ভোট-বাজির তালিকায়? বিভিন্ন ক্লাব, ঠেক এবং মাচায় ঢুঁ দিয়ে যা জানা গেল তা শুনলে চমকে উঠতে পারেন দুঁদে ক্রিকেট বুকিও। চায়ের খরচ, একশো রসগোল্লা (নলেন গুড়), ফুচকা, বিরিয়ানি, আইসক্রিম, রেওয়াজি খাসি, কচি ডাব, মদ (দিশি ও ফরেন দুই-ই) — সে এক দীর্ঘ তালিকা।

কৃষ্ণনগরের এক কলেজ পড়ুয়া বলছেন, ‘‘আগে ছিল পঙ্গপাল। আর এখন হয়েছে পদ্মপাল। যুক্তির ধার ধারে না। ভোটের অঙ্কের কথা তো ছেড়েই দিলাম। আড্ডায় এসে সেই সব কমলকুমারেরা বলছে, কৃষ্ণনগর পুরসভা নাকি বিজেপি পাবে! এটা মানা যায়? আমি বাজি ধরেছি ডাব।’’

ডাব?

ফের খেই ধরেন সেই কলেজ পড়ুয়া, ‘‘হ্যাঁ ডাব। বিজেপি জিতলে পদ্মপালদের সারা সিজন ডাব খাওয়াব। আর হারলে উল্টোটা। তাছাড়া ডাবের রং সবুজ কিনা!’’

ওই কলেজ পড়ুয়ার তৃণই যে মূল তা বলাই বাহুল্য। আরও আছে। বীরনগরের এক কমরেড আবার বাজি ধরেছেন চা। তিনি বলছেন, ‘‘চায়ের আড্ডায় স্পষ্ট বলে দিয়েছি আমার ওয়ার্ডে সিপিএম হেরে গেলে লাল চা খাওয়াই ছেড়ে দেব।’’ আর জিতলে? সটান উত্তর, ‘‘এক মাসের চায়ের খরচা বন্ধুদের।’’

ভোটের মরসুম এলেই নড়েচড়ে বসেন ওঁরা। সে লোকসভা হোক বা বিধানসভা, পুরভোট হোক বা পঞ্চায়েত— কথায় কথায় ছিটকে আসে, ‘হয়ে যাক বাজি?’’ এ বারেও তার অন্যথা হল না। যে সব এলাকায় ভোট হয়নি সেই সব গ্রামীণ এলাকাতেও চলেছে বাজির রমরমা। করিমপুরের এক যুবক যেমন বলছেন, ‘‘করিমপুর পুরসভা নয় ঠিকই, তাই বলে বাজি ধরব না? তবে গত বছর ২ মে খুব ঠকেছি, জানেন। ভাবতেই পারিনি নন্দীগ্রামে দিদি হেরে যাবেন! ওটা একেবারে সিওর শট ছিল‌। কিন্তু নসিব খারাপ। বেমক্কা দশ প্যাকেট মটন বিরিয়ানি বেরিয়ে গিয়েছিল। তবে এ বার আমিই জিতব।’’

বহরমপুরের এক প্রৌঢ় বলছেন, ‘‘বিধায়ক বিজেপির হতে পারেন। তবে পুরভোটে পদ্ম এখানে পাপড়ি মেলতে পারবে না।’’ অতএব, ‘কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে’ বলে তিনি বাজি ধরেছেন নলেন গুড়ের রসগোল্লা। সব থাকতে রসগোল্লা কেন? নিচু গলায় প্রৌঢ় বলছেন, ‘‘আসলে সুগার কিনা। বাড়িতে কেউ খেতে দেয় না। ফলে হার-জিত যাই হোক, মুখমিষ্টি তো হবেই।’’

কৃষ্ণনগরের সেন্ট্রালের ঠেকে আড্ডা তখন জমজমাট। সেই আড্ডার আওয়াজ ছাপিয়ে আচমকা ভেসে এল— ‘ভোলেবাবা পার করেগা।’ ভোলেবাবা নাকি জনতা জনার্দন— ভোটনদী পার করবে কে, কারই বা ভরাডুবি হবে সে উত্তর মিলবে আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। ততক্ষণ ‘বাজি’-গরদের হাতে রইল পেনসিল, থুড়ি, বাজির লিস্টি!

আরও পড়ুন
Advertisement