West Bengal Panchayat Election 2023

বুথের পর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই, যেমন আশঙ্কা করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন, নীরব কমিশন

শনিবার ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর দেখা গেল, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বুথের পর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই! বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর-সহ বেশ কয়েকটি জেলার বহু ভোটকেন্দ্র থেকেই এমন ছবি প্রকাশ্যে এসেছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩ ১১:৪৪
বাঁকুড়ায় বুথে নিরাপত্তায় সিভিক ভলান্টিয়ার!

বাঁকুড়ায় বুথে নিরাপত্তায় সিভিক ভলান্টিয়ার! নিজস্ব চিত্র।

সব ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা গেল না। শনিবার ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর দেখা গেল, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বুথের পর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই! হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর-সহ বেশ কয়েকটি জেলার বহু ভোটকেন্দ্র থেকেই এমন ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। কমিশনের তরফে অবশ্য এ বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

শুক্রবার রাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোঅর্ডিনেটর বিএসএফের আইজি এসসি বুদাকোটি লিখিত ভাবেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রতি ভোটকেন্দ্রেই চার জন করে জওয়ান (হাফ সেকশন) মোতায়েনের পক্ষপাতী তাঁরা। সেই নিরিখে রাজ্যের মোট ৪৪,৩৮২টি ভোটকেন্দ্রের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজনীয় সদস্য দরকার নিদেনপক্ষে ১ লক্ষ ৭৮ হাজার। প্রতি ভোটকেন্দ্রে দু’জন করে সদস্য রাখতে গেলেও দরকার ৮৮ হাজারের বেশি। এই পরিস্থিতিতে আদালতের নির্দেশ মেনে কী ভাবে প্রতি ভোটকেন্দ্রে বাহিনী মোতায়েন হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। অন্য দিকে, শুক্রবার রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত রাজ্যে এসে পৌঁছেছে প্রায় ৬০০ কোম্পানি বাহিনী। অর্থাৎ, আরও ২০০-র বেশি বাহিনী আসা বাকি ছিল। এর পর শনিবার দুপুর ১২টার কিছু আগে কমিশন সূত্রে খবর মিলেছে, এখনও পর্যন্ত মোট ৬৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে পৌঁছেছে রাজ্যে।

Advertisement

কমিশন সূত্রে খবর মিলেছিল, ৪,৮৩৪টি স্পর্শকাতর বুথ-সহ কমবেশি ১৫ হাজার ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা করা হয়। সাধারণ ভাবে নিয়ম, একটি বা দু’টি বুথের ভোটকেন্দ্রে ‘হাফ সেকশন’ মোতায়েন করা হয়ে থাকে। কার্যকরী এক সেকশন (আট জন) থাকে তিন এবং চার বুথের ভোটকেন্দ্রে। পাঁচ, ছয় বুথের ভোটকেন্দ্রে দেড় সেকশন (১২ জন) এবং সাত বা তার বেশি ভোটকেন্দ্রে দুই সেকশন (১৬ জন)। কিন্তু ভোটের দিন একেবারেই ভিন্ন ছবি দেখা গেল। বাঁকুড়ায় ৩,১০০টি বুথের মধ্যে মাত্র ৭৫৭টি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে। বাকি বুথগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর চিহ্ন নেই! পূর্ব মেদিনীপুরেরও অধিকাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন না করার অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী না‌ থাকায় নন্দীগ্রামের তারাচাঁদবাড় বুথে তালা ঝুলিয়ে ভোট বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়দের একাংশ। তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের শান্তিপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়গেছিয়া ১৭ নম্বর বুথেও কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকার ক্ষোভে ভোটকেন্দ্রে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, পরে ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসা শুরু হলে তালা খুলে ভোটগ্রহণ শুরু হয় আবার।

বীরভূমেও বেশির ভাগ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নেই বলেই খবর মিলেছে। মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়াতেও বড় অংশের বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন না হওয়ায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন স্থানীয়েরা। অভিযোগ, বহু জায়গায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের বুথের নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে। কোচবিহারের বুথগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জেলাশাসক পবন কাদিয়ান বলেন, ‘‘কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে জেলার ভোটকেন্দ্রগুলিতে।’’

এ ছাড়া হাওড়ারও বেশ কিছু বুথে দেখা মেলেনি কেন্দ্রীয় বাহিনীর। যেমন— ডোমজুড় ব্লকের মহিয়াড়ি-২ পঞ্চায়েতের তিন বুথের ভোটকেন্দ্র কিবরিয়া গাজি হাই স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়দের একাংশ। তাঁদের দাবি, কেন্দ্রীয় বাহিনীর বদলে রাজ্য পুলিশ দিয়েই নিরাপত্তা বলয় তৈরি হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে রাজ্য পুলিশের দু’জন বন্দুকধারী কনস্টেবল এবং তিন জন সিভিক ভলান্টিয়ার। উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার বেড়গুম-১ পঞ্চায়েতের ঝনঝনিয়া এফপি স্কুলে ১৮০ ও ১৮১ নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন না থাকার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ৩৫০ ইট পেতে তৃণমূলের লোকেরা বুথে লাইন রাখেন বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে প্রার্থী এবং এজেন্টদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন সিপিএমের লোকেরা। পরে গোবরডাঙা থানার পুলিশ এসে প্রায় ঘণ্টাখানেক বাদে অবরোধ তুলে দিয়ে সকলে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসে বলে খবর স্থানীয় সূত্রে।

Advertisement
আরও পড়ুন