আইআইএইচটি-র ভবন উদ্বোধনে গিরিরাজ। শনিবার ফুলিয়ায়। ছবি: প্রণব দেবনাথ।
রাজ্য থেকে একের পর এক সন্দেহভাজন জঙ্গি গ্রেফতারের প্রেক্ষিতে বাংলাকে আগেই জঙ্গিদের ‘নার্সারি’ বলে সরব হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বস্ত্র ও সমবায় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ। এ বার অনুপ্রবেশ-প্রশ্নে রাজ্যের ‘সহায়ক’ ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করে সরব হলেন তিনি। পাশাপাশি, সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফের সঙ্গেই জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) নজরদারির দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পাল্টা এই বিষয়ে কেন্দ্রের সংস্থাগুলি ‘ব্যর্থ’ বলে সরব হয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।
‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব হ্যান্ডলুম টেকনোলজি’র (আইআইএইচটি) নিজস্ব ভবন উদ্বোধন করতে শনিবার নদিয়ার ফুলিয়ায় এসেছিলেন গিরিরাজ। সেখানেই তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার গরিব কৃষক অথবা তাঁত-শিল্পীদের নিয়ে ভাবে না। তারা অনুপ্রবেশকারী এবং রোহিঙ্গাদের ভোট-ব্যাঙ্ক বানানোর চিন্তায় ব্যস্ত।” রাজ্যে বিএসএফ গুন্ডা ঢোকাচ্ছে বলে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা যে তোপ দেগেছিলেন, তার সূত্রেই গিরিরাজের বক্তব্য, “নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বিএসএফকে গালিগালাজ করেন। বাংলা এখন অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশ-পথ (গেটওয়ে)। তারা কলকাতায় পৌঁছলেই আধার কার্ড পাচ্ছে। আপনি (মমতা) অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে হলে এনআরসি-সিএএ করতে দিন।”
গিরিরাজের সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত শুভেন্দুও একই সূত্রে দাবি করেছেন, “সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে এনআইএ-র সক্রিয় হওয়া উচিত।” এ-দেশে আসা রোহিঙ্গা এবং ‘ধর্মীয় উৎপীড়নের’ জন্য আসা হিন্দুদের মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন, এমন অভিযোগও তুলেছেন বিরোধী দলনেতা। বিএসএফ নিয়ে মমতার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এ দিন তাঁকে ‘খোলা চিঠি’ লিখেছেন শুভেন্দু। সেখানে ‘ভোট-ব্যাঙ্কে’র রাজনীতি, রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের বিএসফের সঙ্গে অসহযোগিতার মতো নানা অভিযোগ ‘তথ্য’-সহ তুলে ধরেছেন বিরোধী দলনেতা।
যদিও, অনুপ্রবেশ-প্রশ্নে কেন্দ্রকেই ফের পাল্টা দায়ী করেছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “সীমান্ত পাহারা দেয় বিএসএফ। কেউ সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকলে তাঁর গতিবিধির খবর নেওয়াটা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাজ। তারা এক সঙ্গে ব্যর্থ হলে অন্যের কাঁধে বন্দুক রাখলে চলবে? ত্রিপুরা, অসমেও বিজেপি সরকার। সেখানেও জঙ্গি ধরা পড়ছ।” প্রসঙ্গত, তৃণমূলের লোকসভার সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, এই সব সন্দেহভাজন লোকজনকে সীমান্ত পেরোতে সাহায্য করছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সুকান্ত পাল্টা ওই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন এবং পাগলের প্রলাপ’ বলে উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছেন, “সম্প্রতি একটি কমিটির সফরে গিয়ে লখনউতে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী অদিত্যনাথের সঙ্গে দেখা করেছিলেন কল্যাণ। তাই তৃণমূল নেতৃত্বের রোষের হাত থেকে বাঁচতে এই সব বলতে হচ্ছে।”
এই পরিস্থিতিতে ‘জঙ্গি’-তত্ত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “দিল্লিতে অটলবিহারী বাজপেয়ী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সময়ে বাংলাদেশি ধরার নাম করে বাংলাভাষী বাংলার মানুষকে বিপর্যস্ত করতে বিশেষ ‘সেল’ তৈরি হয়েছিল। এখন একই রকম ব্যবস্থা দিল্লিতে করা হচ্ছে। কেন্দ্রের অপদার্থতার দায় চাপাতে বাংলাভাষী মানুষকে উত্ত্যক্ত করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশি, এই মর্মে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে!” সীমান্ত-রক্ষা ও পাসপোর্ট ছাড়া কেউ এলে, তা দেখার দায়িত্ব যে কেন্দ্রের, সেটাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সুজন। সেই সঙ্গে, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীও বলেছেন, “যাঁদের জঙ্গি সন্দেহে ধরা হল, তাঁরা কোথায় জঙ্গি কার্যকলাপ করেছেন, তার তথ্য-প্রমাণ আমরা জানি না। বিজেপি ও তৃণমূল জঙ্গি-জঙ্গি খেলায় নেমেছে। এত দিন পরে পুলিশমন্ত্রী দিদির মনে হল, বিএসএফ জঙ্গি ঢোকাচ্ছে। সংসদে আপনার সাংসদেরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের কাছে দাবি করেছেন কি, ‘বিএসএফ জঙ্গি ঢোকাল, জবাব দাও’!”