Saket Gokhale

আদালতের নির্দেশে বেতন কাটা যাবে তৃণমূল সাংসদ সাকেতের, সাহায্য করতে মাসে ৪,০০০ টাকা করে দেবেন ৪০ সাংসদ

প্রাক্তন কূটনীতিবিদ লক্ষ্মী পুরি দিল্লি হাই কোর্টে সাকেতের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় গত বছর জুলাই মাসে দিল্লি হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সাকেতকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:১৫
TMC Parliamentary party have decided that all of their MPs will voluntarily contribute Rs 4000 each per month to Saket Gokhale

গত বছর জুলাই মাসে সাকেত গোখলেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল দিল্লি হাই কোর্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মানহানির মামলায় তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলের প্রতি মাসের বেতনের দুই-তৃতীয়াংশ কেটে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাই কোর্ট। সাকেতের পাশে দাঁড়াতে তৃণমূলের বাকি ৪০ জন সাংসদ তাঁকে প্রতি মাসে ৪,০০০ করে টাকা দেবেন। লোকসভা এবং রাজ্যসভার তৃণমূলের সংসদীয় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন শুক্রবার যৌথ বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। ‘সর্বসম্মত’ ভাবে তৃণমূলের সাংসদেরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে সংসদীয় দলের তরফে।

Advertisement

বিবৃতিতে সুদীপ এবং ডেরেক লিখেছেন, ‘সংসদের ভিতরে-বাইরে সাংসদদের কণ্ঠস্বর যে ভাবে সরকার প্রতিহিংসাবশত দমিয়ে দিতে চায়, আমরা তা হতে দেব না। কারণ, আমরা একটা পরিবার। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ যদিও বেতন কাটার বিষয়ের সঙ্গে সরকারের কোনও সংযোগ নেই। মানহানির মামলায় হেরে যাওয়ায় সাকেতের বেতন কাটার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি প্রীতম অরোরার বেঞ্চ।

প্রাক্তন কূটনীতিবিদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরির স্ত্রী লক্ষ্মী পুরি দিল্লি হাই কোর্টে তৃণমূল সাংসদ সাকেতের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় গত বছর জুলাই মাসে দিল্লি হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সাকেতকে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষমাও চাইতে হবে। কিন্তু সেই অর্থ সাকেত দেননি বলে সম্প্রতি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই আদালত নির্দেশ দিয়েছে, প্রতি মাসে সাকেতের সাংসদ হিসাবে প্রাপ্ত বেতনের দুই-তৃতীয়াংশ কেটে নিতে হবে। সেই টাকা দেওয়া হবে লক্ষ্মীকে। যত দিন না ওই অর্থের পরিমাণ সাকেতের প্রদেয় ৫০ লক্ষ টাকা হচ্ছে, তত দিন এই প্রক্রিয়া চালানোর নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাই কোর্ট। হাই কোর্ট এ-ও নির্দেশ দিয়েছিল যে, গোখলেকে তাঁর ‘এক্স’ হ্যান্ডলে লক্ষ্মীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে। একটি ইংরেজি দৈনিকেও প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনা সূচক বিবৃতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল দিল্লি হাই কোর্ট। কিন্তু সাকেত তার কোনওটিই করেননি। আদালতের তরফে আট সপ্তাহ সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যে সাকেত তেমন কিছু করেননি।

রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে সাকেতের মাসিক বেতন ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে তৃণমূলের সাংসদের সংখ্যা ৪১। তাঁদের মধ্যে সাকেতও রয়েছেন। তাঁর বেতনের দুই-তৃতীয়াংশ কাটা যাওয়ায় বাকি ৪০ জন সাকেতকে মাসে ৪,০০০ করে টাকা দেবেন। অর্থাৎ সাকেত সতীর্থদের থেকে প্রতি মাসে পাবেন মোট ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে লক্ষ্মীকে নিয়ে একগুচ্ছ পোস্ট করেছিলেন সাকেত। তখন যদিও তিনি তৃণমূলের সাংসদ হননি। সাকেতের মূল অভিযোগ ছিল, সুইৎজ়ারল্যান্ডের জেনেভায় একটি আবাসন রয়েছে লক্ষ্মীর। তাঁর সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁর স্বামী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপের নাম। হরদীপ তখন ছিলেন অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের দায়িত্বে। ‘আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন’ সম্পত্তির অভিযোগ তুলে পোস্ট করেছিলেন সাকেত। তা নিয়েই মানহানির মামলা করেছিলেন লক্ষ্মী। প্রাক্তন ওই কূটনীতিবিদের বক্তব্য ছিল, সমাজমাধ্যমে তাঁকে এবং তাঁর স্বামীকে জড়িয়ে সাকেত যে পোস্ট করেছেন, তা ভিত্তিহীন। উল্লেখ্য, দিল্লির অলিন্দে সাকেতের মূল পরিচয় ‘তথ্য জানার অধিকার আইনে মামলাকারী’ (আরটিআই অ্যাক্টিভিস্ট) হিসাবেই। কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি-বিরোধী হিসাবে পরিচিত তিনি। কয়েক বছর আগে আচমকাই তাঁকে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দিয়েছিল তৃণমূল। ঘটনাচক্রে, তিনি ‘ভুল তথ্য’ সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে মানহানির মামলার কবলে পড়েছেন। যার জন্য প্রতি মাসে ৪,০০০ টাকা করে দিতে হবে তৃণমূলের বাকি সাংসদদের।

Advertisement
আরও পড়ুন