(বাঁ দিকে) সৌগত রায়। নারায়ণ গোস্বামী (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে নেতৃত্বের ‘শুদ্ধকরণ’ নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার নেত্রীর কথারই অনুরণন শোনা গেল তৃণমূল সাংসদ তথা বর্ষীয়ান নেতা সৌগত রায়ের কণ্ঠে। তিনি জানিয়ে দিলেন, তৃণমূলের কোনও সমাজবিরোধীর প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি, অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীও ‘সমঝে’ চলার পরামর্শ দিয়েছেন কিছু মানুষকে। তিনি বলেছেন, ‘লেজ মোটা হলে কেটে দেবেন’ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সম্প্রতি বেশ কিছু নিগ্রহের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। বার বার নিগ্রহে অভিযুক্তের সঙ্গে কোনও তৃণমূল নেতার যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কারও নাম না-করে এ নিয়ে ‘কড়া বার্তা’ দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা। এ বার একটি সভা থেকে মমতার নির্দেশের কথা স্মরণ করিয়ে সৌগত বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের যা দৃষ্টিভঙ্গি, তা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমাদের কোনও সমাজবিরোধীর প্রয়োজন নেই।’’ এই প্রথম নয়, এর আগেও সৌগত দাবি করেছিলেন, কখনও কোনও সমাজবিরোধীর থেকে ভোটে সাহায্য নেননি। আবার তাঁর মুখে সেই কথাই শোনা গেল। তিনি বলেন, ‘‘আমার নির্বাচনে আগেও বলেছি, সমাজবিরোধীকে দিয়ে ভোট চাই না। তাই যাঁরা সমাজবিরোধীদের কাজ করছেন, তাঁদের বলছি সামলে যাও। সামলে না গেলে তোমাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানুষ শান্তিতে থাকবে। নিজের কাজ করবে। সেখানে কেউ তোলা চাইবে, জুলুম করবে, এ সব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার হতে দেবে না।’’
এ রকমই কড়া বার্তা শোনা গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণের মুখেও। অশোকনগরের বিধায়ককে একটি সভায় নেত্রী মমতা এবং অভিষেকের সতর্কতবার্তা মনে করিয়ে দিতে শোনা গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘সকলে খারাপ বলছি না। দু’-এক জন যদি এ রকম থাকেন, তাঁদের জন্য সতর্কবাণী। অভিষেক ময়দানে নেমে পড়েছেন। আপনি যদি মনে করেন, পাড়ার হোমরাচোমরা প্রধান হয়েছেন, লেজ মোটা হয়ে গিয়েছে, কেউ কাটতে পারবে না, তা ঠিক নয়। অভিষেক কিন্তু কাঁচি দিয়ে লেজ কুচ করে কেটে দেবেন। মা বলার সময় পাবেন না। মানুষের অধিকার মানুষকে দিতে হবে।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, বাগদায় বিধানসভা উপনির্বাচনের কাজে গিয়ে তিনি দেখেছেন, মানুষের দলনেত্রী মমতা বা দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের মমতার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। তৃণমূলের বিরুদ্ধেও অভিযোগ নেই। কিন্তু কয়েক জন সাংগঠনিক নেতা এবং জনপ্রতিনিধির উপর মানুষের রাগ।’’ নারায়ণের দাবি, কিছু জায়গায় মানুষ সরকারি জমি দখলের অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এ সব আর চলবে না। বিধায়কের কথায়, ‘‘জমি দখল করে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হবে। তৃণমূল মানে পরিষেবার প্লাটফর্ম। করেকম্মে খাওয়ার জন্য যাঁরা দলে রয়েছেন, তাঁদের দিন শেষ। আমার নেতা অভিষেক এ কথা বলেছেন। সুতরাং সমঝে যান।’’
২১ জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে তৃণমূলে শুদ্ধকরণের ডাক দেন মমতা। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বিত্তবানদের নয়, বিবেকবানদের দল হতে হবে তৃণমূলকে। আমি দলে বিত্তবান লোক চাই না। বিবেকবান লোক চাই। কেন জানেন? পয়সা আসে, চলে যায়। কিন্তু সেবার কোনও বিকল্প নেই।’’ অর্থাৎ, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের এক শ্রেণির নেতার যে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ব্যয়ের নিদর্শন দেখা যাচ্ছে, মমতা সে দিকে আঙুল তোলেন। মমতা বলেছিলেন, ‘‘যত জিতব, তত নম্র হতে হবে।’’ এ বার সেই সুরেই কথা বললেন তাঁর দলের দুই নেতাও।