রাজগঞ্জের সভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
উত্তরবঙ্গের প্রায় প্রতিটি সভা থেকেই নিয়ম করে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের সভা থেকেও তার ব্যত্যয় হয়নি। সভামঞ্চ থেকেই তিনি দাবি করেন, রাজ্যের একাধিক প্রকল্পের টাকা আটকে রাখা হচ্ছে। বিজেপির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা চিঠি লিখে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আটকে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লিখছেন বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন অভিষেক। শনিবার আরও এক ধাপ এগিয়ে অভিষেক বলেন, “দিল্লিতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর সচিব তো মুখ ফস্কে আমাদের বলেই ফেললেন, রাজ্যের বিজেপি সাংসদরা ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ রাখতে বলেছেন।”
শিয়রেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। সে কথায় মাথায় রেখেই দিল্লিতে গিয়ে অবস্থান বিক্ষোভে বসার কথাও বললেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। শনিবার ময়নাগুড়ির পর রাজগঞ্জের সভা থেকেও অভিষেক তাঁর দিল্লিযাত্রার দিনক্ষণও জানিয়ে দেন। জানান দলের ‘নবজোয়ার যাত্রা’ কর্মসূচি শেষ করেই ১ কোটি চিঠি নিয়ে দিল্লি যেতে চান তিনি। বকেয়া টাকা মেটানোর দাবিতে দেখা করতে চান কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের সঙ্গে। প্রয়োজনে দিল্লিতে কৃষি ভবনের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থানে বসার কথাও বলেন তিনি।
অভিষেকের কথায়, “১০০ দিনের কাজে জলপাইগুড়ি জেলার ৭ লক্ষ ৯৮ হাজার মানুষ কাজ করেও টাকা পাননি। কারণ, কেন্দ্র টাকা আটকে দিয়েছে। জেলা থেকে আমাকে অন্তত ৪ লক্ষ চিঠি দিন। আমি গোটা রাজ্য থেকে ১ কোটি চিঠি নিয়ে আপনাদের দাবি জানাতে দিল্লি যাব।” ‘হকের টাকা’ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ‘ছিনিয়ে আনতে’ অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবস্থানে বসবেন বলেও জানান অভিষেক। এই প্রসঙ্গে তাঁর সংযোজন, “যদি এক কোটি চিঠি নিয়ে দিল্লি পৌঁছই, তবে কোনও মন্ত্রীর ক্ষমতা নেই কানে তুলো গুঁজে, গাড়িতে উঠে বসে থাকবে।”
ধর্মীয় বিভাজনের ফাঁদে পড়ে গত লোকসভা ভোটে এবং আলাদা রাজ্যের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে গত বিধানসভায় উত্তরবঙ্গের মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন বলে আরও এক বার দাবি করেন অভিষেক। বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট পূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতি না রাখার অভিযোগ তুলে অভিষেক বলেন, “বিজেপি হচ্ছে ভাঙা অডিয়ো ক্যাসেট, শুধু শুনতে পাবেন, কিন্তু দেখতে পাবেন না। আর তৃণমূল হচ্ছে হাই কোয়ালিটি ডিভিডি, একই সঙ্গে দেখতেও পাবেন, শুনতেও পাবেন।” অভিষেক জানান, গত নির্বাচনগুলিতে উত্তরবঙ্গ তৃণমূলকে খালি হাতে ফেরালেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার উত্তরবঙ্গের মানুষদের জন্য সমস্ত সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন।
গত ৫ এপ্রিল ১০০ দিনের কাজ-সহ একাধিক গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পে পাওনা অর্থ মেটানোর দাবিতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূল সাংসদরা দিল্লির কৃষি ভবনের সামনে জড়ো হন। কিন্তু মন্ত্রীর দেখা না পেয়ে সচিবের কাছেই নিজেদের দাবির কথা জানান সাংসদরা। সচিবের সঙ্গে কথোপকথনে অভিষেক বলেন, “১০০ দিনের কাজে অনিয়মের অভিযোগ এলে প্রয়োজনে সিবিআই তদন্ত করুন, আদালতে যান, কিন্তু রাজ্যের প্রাপ্য মিটিয়ে দিন।” সচিব তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছিন, সকালে সংসদে ছিলেন মন্ত্রী। তার পর নিজের সংসদীয় এলাকার কাজে বিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রকে ছিলেন না গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীও।