Jyotipriya Mallick

প্রথম বার বালুকে ছাড়া হাবড়ায় বিজয়া সম্মিলনী পালন তৃণমূলের, নেই সেই পুরনো উন্মাদনা!

বৃহস্পতিবার হাবড়ায় কলতান প্রেক্ষাগৃহে তৃণমূল বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিল। সেই কর্মসূচিতে বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
হাবড়া শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:১৩
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।

নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র তো বটেই। এত কাল গোটা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে পুজোর পর যেখানে যেখানে দলের বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন হয়েছে, সর্বত্রই তাঁর ডাক পড়ত। মন্ত্রীও চেষ্টা করতেন সব জায়গাতেই যেতে। বক্তৃতাও করতেন। সেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে (রাজ্য-রাজনীতিতে যিনি বালু নামেই বেশি পরিচিত) ছাড়াই তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনী পালিত হচ্ছে জেলায়। মন্ত্রীর নিজের কেন্দ্র হাবড়াতেও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সেই পুরনো উন্মাদনা চোখে পড়ল না!

Advertisement

বৃহস্পতিবার হাবড়ায় কলতান প্রেক্ষাগৃহে তৃণমূল বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিল। সেই কর্মসূচিতে বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার উপস্থিত ছিলেন। বক্তৃতা করতে গিয়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মনোবল বাড়ানোর যথাসম্ভব চেষ্টাও করেছেন কাকলি। বিরোধীদের দিকে আঙুল তুলে দাবি করেছেন, বালু চক্রান্তের শিকার! মন্ত্রীর অনুগামীদের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘‘সঠিক বিচার পেয়ে এক দিন বেরিয়ে আসবেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।’’ কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভিজল কই! দলেরই একটি অংশের দাবি, বালুর গ্রেফতারিতে যে তাঁর অনুগামীদের মনোবল ভেঙেছে, এই বিজয়া সম্মিলনীই তাঁর প্রমাণ। শেষ কবে তাঁকে ছাড়া বিজয়া সম্মিলনীর কর্মসূচি পালিত হয়েছে, তা মনে করতে পারলেন না অনেকেই।

দীর্ঘ দিন ধরেই পুজোর পর বিজয়া সম্মিলনীর কর্মসূচি করে আসছে তৃণমূল। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর তা আরও বড় আকার নেয়। দলের একাংশের বক্তব্য, উত্তর ২৪ পরগনায় যে হেতু এক সময়েই বালুই ‘শেষ কথা’ ছিলেন, ফলে তাঁর নজরদারিতেই সব আয়োজন হত। নিজের হাবড়া কেন্দ্রে বড় করে এই কর্মসূচি করতেন বালু। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর এই জেলাকে ভেঙে চার সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দল। তার পর গত বছর শুধু নিজের কেন্দ্র হাবড়ার কর্মসূচিরই আয়োজন করেছিলেন মন্ত্রী। জেলার অন্যান্য জায়গার কর্মসূচিতে অবশ্য তিনি হাজির ছিলেন। কিন্তু এ বার তাঁর অনুপস্থিতি মেনে নিতে পারছেন না দলের নিচুতলার কর্মীরা। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘বিজয়া সম্মিলনীতে বালুদা নেই, ভাবতেই পারছি না! এক সময় কোথায় কী করতে হবে, না-হবে, সব উনিই বলে দিতেন। এই প্রথম বার ওঁকে ছাড়া বিজয়া সম্মিলনী হল।’’

২০০১ সালে তৃণমূলের টিকিটে জ্যোতিপ্রিয় গাইঘাটা কেন্দ্র থেকে জিতে প্রথম বার বিধায়ক হন। মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগসূত্র তৈরির পিছনেও তাঁর ভূমিকার কথা মানেন দলের অনেকে। ২০০৬ সালে বিধানসভা ভোটে রাজ্যে তৃণমূলের ভরাডুবির মধ্যেও দ্বিতীয় বার জেতেন একই কেন্দ্র থেকে। আসন সংরক্ষিত হওয়ায় ২০১১ সালে দাঁড়ান হাবড়ায়। জয়ী হয়ে নতুন মন্ত্রিসভায় হন খাদ্যমন্ত্রী। এখনও তিনি হাবড়ারই বিধায়ক। জেলায় দলের পুরনো কর্মীদের একাংশের দাবি, ‘‘দিদিমণি উত্তর ২৪ পরগনাকে চেনেন বালুদার চোখ দিয়ে।’’ রাজ্যে বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন তো বটেই, ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরেও মুখ্যমন্ত্রী মমতার কাছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রহণযোগ্যতা ছিল এতটাই।

কিন্তু দলের একটি সূত্রের দাবি, ইদানীং জেলার রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে সরে যাচ্ছিলেন বালু। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই তাঁর গুরুত্ব কমছিল উত্তর ২৪ পরগনায়। কিন্তু জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতারির পর অবশ্য তাঁর পাশেই দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে শাসকদলকে। গত শনিবার জেলা জুড়ে মিছিলও করেন দলের নেতা-কর্মী, সমর্থকেরা। হাবড়া শহরের মিছিলের দিকে সকলের নজর ছিল। কারণ, জ্যোতিপ্রিয় এখানকার তিন বারের বিধায়ক। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের কথায়, সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় জ্যোতিপ্রিয়ের রাজনৈতিক তৎপরতা কিছুটা কমে গেলেও বনগাঁ মহকুমা, বসিরহাট মহকুমা এবং বারাসত মহকুমার একাংশে তাঁর প্রভাব যথেষ্টই আছে। এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘এই হাবড়ায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ছাড়া এই সব বিজয়া সম্মিলনী হয় না। যেতে হয়, দলের কর্মসূচি, তাই গিয়েছি। কিন্তু বালুদাকে ছাড়া ওখানে যাওয়ার সত্যিই ইচ্ছা ছিল না।’’

আরও পড়ুন
Advertisement