মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
‘বাংলা দিবস’ ঠিক করতে যে প্রস্তাব বিধানসভায় আনা হয়েছিল, তাতে অংশ নেননি তৃণমূলের বেশ কয়েক জন বিধায়ক। তাঁদের কাছে এ বার জবাব চাইতে চলেছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূল পরিষদীয় দলের সূত্রে খবর, চলতি সপ্তাহে অনুপস্থিত বিধায়কদের কাছে বিষয়টি জানতে চাইবেন পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। চলতি বাদল অধিবেশনে শোভনদেবের নেতৃত্বে একটি শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি গঠন করেছে তৃণমূল। বিধায়কদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখতেই এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। শোভনদেবকে চেয়ারম্যান করে এই কমিটিতে আছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং বন প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। চেয়ারম্যান জবাব পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করবে এই কমিটি।
ঘটনায় প্রকাশ, ৭ সেপ্টেম্বর বিধানসভায় ‘বাংলা দিবস’ এবং রাজ্যের ‘সঙ্গীত’ ঠিক করতে প্রস্তাব আনা হয়। সেই আলোচনায় শাসকদলের তরফে একমাত্র বক্তা ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যে এই আলোচনায় উপস্থিত থাকবেন, তা আগেই বিধায়কদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন কয়েক জন বিধায়ক অধিবেশনে উপস্থিত হলেন না, তা ওই বিধায়কদের কাছে জানতে চাওয়া হতে পারে। কারণ, ওই দিন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার পর ভোটাভুটি চান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি মেনে ভোটাভুটিও হয়। ১৬৭-৬২ ভোটে পাশ হয় প্রস্তাব। তার পরেই তৃণমূল পরিষদীয় দলে প্রশ্ন ওঠে, দলের ২১৫ জন বিধায়ক থাকা সত্ত্বেও এই প্রস্তাবের পক্ষে ১৬৭টি ভোট পড়েছে। এত বেশি সংখ্যক বিধায়ক অনুপস্থিত থাকায় বিষয়টি নজরে আসে তৃণমূল পরিষদীয় দলের। তার পরেই বিধায়কদের থেকে জবাব চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যদিও ওই বিধায়কেরা অনুপস্থিত থাকলেও ১ বৈশাখ দিনটিকে বাংলা দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে সমস্যা হয়নি শাসকদলের। কিন্তু দলীয় শৃঙ্খলার প্রশ্নে বিধায়কদের কাছে জবাব চাওয়া হবে।
তৃণমূল পরিষদীয় দল জেনেছে, এমন কিছু মন্ত্রী-বিধায়ক সে দিন অনুপস্থিত ছিলেন. যাঁদের বাড়ি কলকাতার খুব কাছেই। তাই সেই সব বিধায়কেরা কেন অনুপস্থিত ছিলেন তার প্রকৃত কারণ জানতে চাইছে তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি। অনুপস্থিত কোনও বিধায়কের জবাব সন্তোষজনক না হলে, তাঁর বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটিই। আগামী দিনে এমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় যাতে দলীয় বিধায়কদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়, সেই কারণেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল পরিষদীয় দলের একটি সূত্র। এমনিতেই তৃণমূল পরিষদীয় দলের নির্দেশ রয়েছে, বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন সব বিধায়ককে তাতে অংশগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কেন দলীয় নির্দেশ অমান্য করা হল, তা জানতে চাওয়া হবে। উল্লেখ্য, পুরো বাদল অধিবেশনেই যোগ দেন ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী। তাঁর বিরুদ্ধে দল কোনও ব্যবস্থা নেবে কি না, তা অবশ্য জানা যায়নি। পঞ্চায়েত ভোটে তাঁর অনুগামীদের টিকিট দেয়নি দল। সেই প্রতিবাদেই তিনি বিধানসভার অধিবেশন বয়কট করেছেন বলে জানিয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল।