রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (বাঁ দিকে) এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে কি শেষ পর্যন্ত বরফ গলছে বাংলায়? সোমবার এই বিষয়ে রাজভবনে বৈঠক হয়েছে বাংলার রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে বাইরে বেরিয়ে মমতা বললেন, তিনি বৈঠক নিয়ে সন্তুষ্ট। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে তিনি এবং রাজ্যপাল দু’জনেই ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটির খসড়া চূড়ান্ত হল কি? উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত দীর্ঘ দিনের জট কি এ বার কাটবে? রাজভবনের তোরণের বাইরে এই প্রশ্ন শুনেই কথা বলতে বলতে থেমে গেলেন মমতা। মুখের সামনে থেকে সরিয়ে নিলেন মাইক।
সোমবার বিকেলে রাজভবনে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকে দীর্ঘ ক্ষণ চলে তাঁর এবং রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বৈঠক। সাক্ষাত শেষে মমতা বাইরে আসেন সন্ধ্যা সওয়া ছ’টা নাগাদ। বেরিয়েই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। মমতাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই কি এই বৈঠক? বৈঠকে কি উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে সমাধান সূত্র পাওয়া গেল? মমতা তার জবাব দিলেও বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাননি।
গত সপ্তাহেই রাজ্যে উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান নিয়ে কিছু মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে বলেছিল বাংলার রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীকেই। দেশের শীর্ষ আদালত বলেছিল, উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যা আলোচনার মাধ্যমেই মিটিয়ে ফেলতে হবে। আলোচনায় থাকতে হবে রাজ্যের রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয় গুলির আচার্য বোস, মুখ্যমন্ত্রী মমতা এবং শিক্ষামন্ত্রীকে। ওই বৈঠকেই উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটির একটি খসরা তৈরি করতেও বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে ওই খসরা সার্চ কমিটিতে থাকা সদস্যদের নাম জমা দিতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেই নির্দেশের পরেই এই বৈঠক। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ছিল, বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে? সার্চ কমিটি তৈরি হল কি না! দীর্ঘদিনের জট কাটল কি না।
কিন্তু সাংবাদিকেরা সেই সব প্রশ্ন করতেই মমতা পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘এগুলো কি গোপন বিষয় নয়! সব কী করে বলব।’’ এর পর মমতা বলেন, এ টুকু বলতে পারি, ‘‘এক ঘণ্টা কথা হয়েছে বৈঠক ভাল হয়েছে। আমরা দু’জনেই একই বিষয়ে একমত হতে পেরেছি।’’
এর পর তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় , তা হলে কি উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে জট কাটল? জবাবে অবশ্য এর বেশি আর কোনও কথা বলেননি মমতা। বরং তিনি আলোচনার কথা সবিস্তার বলতে চান না, বলার পরও তাঁকে আবার এ বিষয়ে প্রশ্ন করায় দৃশ্যতই কিছুটা ক্ষুব্ধ দেখায় মমতাকে। তিনি মুখের সামনে থেকে মাইক্রোফোনটি সরিয়ে নেন। বুঝিয়ে দেন, এ ব্যাপারে যেটুকু তাঁর বলার তিনি বলে দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে বাংলায়। সেই সঙ্গে এ নিয়ে রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের টানাপড়েনও চলছে। এই সূত্রেই রাজ্যপাল বোসের বিরুদ্ধে বহুবার সরব হয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে রাজ্যপাল একের পর এক অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করায়, সে ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সুপ্রিম কোর্ট পাল্টা রাজ্যপালের কাছে জানতে চায়, কতদিন রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মাথায় অস্থায়ী উপাচার্য থাকবেন। রাজভবন যেন অবিলম্বে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের ব্যবস্থা করে।
এর পর উপাচার্য নিয়োগের জন্য একটি সার্চ কমিটি গঠনের পরামর্শ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার সমস্ত পক্ষকে এ ব্যাপারে নাম প্রস্তাব করতেও বলে। গত সপ্তাহেই সেই সব নামের পূর্ণ তালিকা জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। তার পরেই শীর্ষ আদালত ওই নাম থেকে বাছাই করে উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটির খসরা তৈরি করতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে সেই তালিকা জমা দেওয়ার কথা। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি কিছু না বললেও ইঙ্গিতে অনেকেই মনে করছেন মমতা-রাজ্যপালের ‘ভাল’ বৈঠকের পরে সার্চ কমিটি তৈরি করতে দেরি হবে না বিশেষ।