Jadavpur University Student Death

পয়সা জমিয়ে মায়ের জন্য ছাতা কিনেছিলেন স্বপ্নদীপ, ‘প্রথম উপহার’ দেওয়া আর হল না!

স্বপ্নদীপ কুণ্ডু হস্টেলের যে ঘরে থাকতেন, সেখানে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু জিনিস মিলেছে। পাওয়া গিয়েছে একটি নতুন ছাতা। বন্ধুদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, মায়ের জন্য ‘প্রথম উপহার’ কিনেছিলেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বগুলা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৩ ২১:২২
মৃত স্বপ্নদীপ কুণ্ডু (বাঁ দিকে)। স্বপ্নদীপের মা (ডান দিকে)

মৃত স্বপ্নদীপ কুণ্ডু (বাঁ দিকে)। স্বপ্নদীপের মা (ডান দিকে) —নিজস্ব চিত্র।

মা আশাকর্মী। রোদবৃষ্টিতে কাজ করতে যেতে হয়। মায়ের কষ্টের কথা ভেবে পয়সা জমিয়েছিলেন স্বপ্নদীপ কুণ্ডু। দিন কয়েক আগে সেই টাকা দিয়ে একটি ছাতা কিনেছিলেন। সাদার উপর লাল ফুল ছাপা সেই ছাতা মিলেছে স্বপ্নদীপের হস্টেলের ঘরে। ঠিক ছিল, বাড়ি গেলে মাকে ছাতাখানা দেবেন। ছাতা হাতে পেলে মায়ের মুখটা কেমন খুশিতে ভরে ওঠে, হয়তো মনে মনে সেই ছবিও এঁকেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। কিন্তু সেই ছাতাটা আর মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হল না। ছেলের মৃত্যুতে শোকাতুর মা বলেন, ‘‘শেষ বার কলেজে যাওয়ার আগে বলেছিল, খুব তাড়াতাড়ি ফিরব।’’

Advertisement

স্বপ্নদীপের ঘরে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু জিনিস মিলেছে। পাওয়া গিয়েছে একটি নতুন ছাতা। তাঁর বন্ধুদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগে শিয়ালদহ স্টেশনের ফুটপাত থেকে ৩১০ টাকা দিয়ে সাদার ওপরে লাল ফুল ছাপা কাপড়ের এই ছাতাটি কিনেছিলেন। জিজ্ঞেস করায় হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘‘মায়ের জন্য কিনলাম।’’ হাতখরচ জমিয়ে কলকাতায় এসে এটাই ছিল মায়ের জন্য কেনা স্বপ্নদীপের প্রথম উপহার। স্বপ্নদীপের মামা বলছেন, ‘‘পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করার ইচ্ছা ছিল ভাগ্নের। সেই স্বপ্নের ইতি।’’

বুধবার গভীর রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের এ-২ ব্লকের নীচ থেকে বিবস্ত্র ও অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায় বাংলা অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপকে। বৃহস্পতিবার ভোরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। স্বপ্নদীপের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। তাঁর বাবা রামপ্রসাদের অভিযোগ, ছেলের মৃত্যুর জন্য হস্টেলের সিনিয়রেরাই দায়ী। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা (সিনিয়ররা) হয়তো ভেবেছে, এই ছেলে (স্বপ্নদীপ) এখান থেকে চলে গেলে সব ফাঁস হয়ে যাবে। ওই জন্য ওকে মেরে ফেলল!’’ শুক্রবার তিনি সৌরভ চৌধুরী নামে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অন্য দিকে, স্বপ্নদীপের মৃত্যুর বিচার চেয়ে বগুলায় পথে নামেন একদল পড়ুয়া। বগুলা কলেজ মাঠ থেকে শুরু করে নোনাগঞ্জ মোড়, বগুলা বাসস্ট্যান্ড, কৃষ্ণনগর-রানাঘাট ৯ নম্বর রাজ্য সড়ক ঘুরে ফের কলেজ মাঠে এসে শেষ হয় মিছিল। পুলিশের আবেদনে অবরোধ ওঠে। ওই মিছিলে ছিল বগুলা উচ্চ বিদ্যালয়, বগুলা পূর্ব পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, হরিতলা উচ্চ বিদ্যালয়, মুড়াগাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা। এদের অনেকে স্বপ্নদীপকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনত। কেউ কেউ স্বপ্নদীপের সঙ্গে একই টিউশন স্যরের কাছে পড়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement