যাদবপুরে বিশৃঙ্খলার দিনের ছবি। ছবি: পিটিআই।
জামিন হল না যাদবপুরকাণ্ডে ধৃত পড়ুয়া সৌম্যদীপ ওরফে উজানের। পাঁচ দিনের জন্য পাঠানো হল পুলিশি হেফাজতে। বুধবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ঘটনার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তৃণমূল সমর্থিত কর্মী সংগঠন ‘শিক্ষাবন্ধু’র অফিসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই মামলাতেই গ্রেফতার হন ওই ছাত্র। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত পড়ুয়ার নাম সৌম্যদীপ মহন্ত। যদিও সমাজমাধ্যমে তাঁর নাম ‘শৌন্যদীপ’ লেখা হয়েছে। পাশে লেখা ‘উজান’ নামটিও। বন্ধুরা তাঁকে উজান নামেই চেনেন।
বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়েছিল যাদবপুরের ধৃত ছাত্রকে। সেখানে অভিযুক্তের আইনজীবী জানান, ওই পড়ুয়া পড়াশোনায় ভাল। আগামী ২৪ তারিখ তাঁর পরীক্ষা রয়েছে। নোটিস পেয়ে থানায় হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন সৌম্যদীপ। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আইনজীবীর দাবি, তাঁর মক্কেলের নাম এফআইআরে নেই। যে কোনও শর্তে তাঁকে জামিন দেওয়া হোক। বুধবার ওই মামলায় আগেই ধৃত ছাত্র সাহিল আলিকে জামিন দেওয়া হয়। তার অব্যবহিত পরেই সৌম্যদীপকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃত পড়ুয়ার আইনজীবী আরও জানিয়েছেন, যাদবপুরের ওই ঘটনার দিন দুপুর ২টো নাগাদ মন্ত্রীর গাড়িতে আহত হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল যাদবপুরের আর এক পড়ুয়া ইন্দ্রানুজ রায়কে। তার পরেও তাঁর নাম রয়েছে এফআইআরে।
অভিযোগকারীর আইনজীবীর দাবি, ওই দিন যাদবপুরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে হেনস্থা করা হয়েছে। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘শিক্ষাবন্ধু’র দফতরে। তিনি বলেন, ‘‘যাদবপুরে ভাল পড়ুয়াদের পাশাপাশি এমন অনেকে রয়েছেন যাঁরা শুধুই ঝামেলা সৃষ্টি করেন। তা ছাড়া, ধৃত তরুণ পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছিলেন।’’ আইনজীবীর আরও দাবি, ওই ঘটনায় অনেকে যুক্ত রয়েছেন। এর আগে যিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন, তিনি নিজেকে পড়ুয়া বলে দাবি করলেও পরিচয়পত্র দেখাতে পারেননি। এর পর বিচারককে ঘটনার সময়ের ছবি দেখান সরকারি আইনজীবী। দেখানো হয় হোয়াট্সঅ্যাপের কথোপকথনের বেশ কিছু স্ক্রিনশটও। মন্ত্রী কিংবা পুলিশ এলে কী করতে হবে, গ্রুপ চ্যাটে সেই সব কথোপকথন রয়েছে বলে দাবি। আগুন লাগানোর প্রসঙ্গ নিয়েও কথোপকথন রয়েছে। আইনজীবীর কথায়, ‘‘এ পর্যন্ত যা যা তথ্য সামনে এসেছে তাতে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও তথ্য প্রকাশ্যে আসবে। ওই দিন আর কী কী করার উদ্দেশ্য ছিল, কিংবা ভবিষ্যতে আরও কোনও পরিকল্পনা আছে কি না, জানা যাবে সে সবও।’’ তাঁর যুক্তি, ছাত্রকে হেফাজতেই রাখা হোক। পরীক্ষা থাকলে প্রয়োজনে হেফাজতে থাকা অবস্থাতেও পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে।
বিচারক তদন্তকারীদের কাছে জানতে চান, ওই পড়ুয়াকে গ্রেফতার করার কারণ কী? উত্তরে জানানো হয়েছে, ওই পড়ুয়াকে প্রশ্ন করা হলে প্রথমে তিনি কিছু বলতে চাননি। গ্রুপ চ্যাটে যে সব কথোপকথন হয়েছে বলে অভিযোগ, সে রকম কোনও গ্রুপে তিনি রয়েছেন কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। সে জন্যই গ্রেফতার করা হয়েছে ওই ছাত্রকে। বুধবার সৌম্যদীপকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল যাদবপুর থানায়। এর আগে যাদবপুরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দু’বার তাঁকে নোটিস পাঠিয়েছিল পুলিশ। প্রথম বার শারীরিক সমস্যার কারণ দেখিয়ে থানায় হাজিরা দেননি তিনি। এর পরে বুধবার বিকেলে তিনি থানায় হাজিরা দিলে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করে যাদবপুর থানার পুলিশ। সূত্রের খবর, রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ সৌম্যদীপের বাড়িতে ফোন করে জানানো হয়, তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য দিকে, এর আগে ওই মামলাতেই ধৃত সাহিল জামিন পেয়েছেন বুধবার।