Fire Incident At Dholahat

আবার বাজি পোড়াল প্রাণ! অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু পরিবারের সাত জনের, সন্তানহারা দুই ভাই, আশঙ্কাজনক এক মহিলা সদস্য

পুলিশ সূত্রে খবর, পাথরপ্রতিমার ঢোলাহাট থানার রায়পুরের তৃতীয় ঘেরি এলাকা থাকে বণিক পরিবার। তাদের পরিবারে মোট ১১ জন সদস্য। এই দুর্ঘটনায় চার শিশু-সহ সাত জনের মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৫ ০২:০৫

— প্রতীকী চিত্র।

সোমবার ভয়াবহ বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ গেল দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার বণিক পরিবারের সাত সদস্যের। তাঁদের মধ্যে রয়েছে দু’জন সদ্যজাত-সহ চার শিশু। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি এক জন। বংশ পরম্পরায় দীর্ঘ দিন ধরেই বাজি বানাত বণিক পরিবার। বাজি তৈরির লাইসেন্সও ছিল বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, পাথরপ্রতিমার ঢোলাহাট থানার রায়পুরের তৃতীয় ঘেরি এলাকা থাকে বণিক পরিবার। তাদের পরিবারে মোট ১১ জন সদস্য। চন্দ্রকান্ত বণিক এবং তুষার বণিক দুই ভাই। সোমবার এই দুর্ঘটনায় তাঁদের বাবা অরবিন্দ বণিক (৬৫), ঠাকুমা প্রভাবতী বণিক (৮০), চন্দ্রকান্তের স্ত্রী সান্ত্বনা বণিক (২৮), দুই সন্তান অর্ণব বণিক (৯) ও অস্মিতা বণিক (৮ মাস) এবং তুষারের দুই সন্তান অনুষ্কা বণিক (৬) এবং অঙ্কিত বণিক (৬ মাস) মারা গিয়েছেন। তুষারের স্ত্রী আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। তিন জন বাড়ির বাইরে ছিলেন। তাঁদের কিছু হয়নি বলে জানা গিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ আচমকা বিকট শব্দ শোনা যায়। তার কিছু ক্ষণ বাদে স্থানীয়েরা দেখতে পান আগুনের গ্রাসে একটি বাড়ি। শুরু হয় হইচই। আগুন নেবানোর চেষ্টার মধ্যে আবার কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। শুরু হয় আগুন নেবানোর কাজ। স্থানীয়েরাও আগুন নেবানোর কাজে হাত লাগান। জানা গিয়েছে, বাড়িতেই বাজি মজুত ছিল। সেখান থেকে এই অগ্নিকাণ্ড। গ্যাস সিলিন্ডার ছিল সেটিও ফেটে যায়। দেহগুলি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যদিও বণিক পরিবারের কাছে বাজি তৈরির লাইসেন্স ছিল বলে প্রশাসন সূত্রে খবর তবুও এই ঘটনার পরে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাড়িতে ছোট ছোট বাচ্চা থাকা সত্ত্বেও, কেন তাঁরা বাড়িতে এত বাজি মজুত করে রেখেছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ১৬ মে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার খাদিকুল গ্রামের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটেছিল। মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ৯ জনের। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই পাঁচ দিনের মাথায়, ২১ মে রবিবার কলকাতার অদূরে বজবজের একটি বাড়িতে বাজি বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। পর পর দু’জায়গায় বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, সেই ঘটনার সাড়ে তিন মাস কাটতে না কাটতেই আবারও বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে বাংলা। কাঠগড়ায় সেই বেআইনি বাজি কারখানা। এর ফলে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন ওঠে।

এগরা ও বজবজে বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকেই বেআইনি বাজি উদ্ধারে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়। সে সময় উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরেও পুলিশি অভিযানে মেলে অন্তত ২০০ কুইন্টাল বাজি। অভিযোগ, ওই বিপুল পরিমাণ বেআইনি ভাবে বাড়িতে মজুত করে রাখা হয়েছিল।

দত্তপুকুর থানার নীলগঞ্জ ফাঁড়ির নীলগঞ্জ ইছাপুর পঞ্চায়েত এলাকায় সে সময় পুলিশের তল্লাশি অভিযান চলে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গোপন সূত্র মারফত খবর মেলে, কাঠুরিয়া এলাকায় ইবাদত মণ্ডল নামে এক জনের বাড়িতে প্রচুর বাজি মজুত রয়েছে। সেই খবর পাওয়ামাত্রই বারাসতের এসডিপিওর নেতৃত্বে ইবাদতের বাড়িতে তল্লাশি চালায় দত্তপুকুর থানার পুলিশ। সেখান থেকেই উদ্ধার হয়েছিল বেআইনি বাজি। এর পর, ২০২৩ সালের ২৭ অগস্ট উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে বাজি কারখানায় ঘটে বিস্ফোরণ। বেশ কয়েক জনের মৃত্যুর হয়েছিল বলে খবর।

Advertisement
আরও পড়ুন