যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেল। —ফাইল চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ, বুধবার আসছে না ইউজিসির প্রতিনিধিদল। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই প্রতিনিধিদলের আসার কথা ছিল। এই ঘটনা নিয়ে ইউজিসি যে চার দফা প্রশ্নের উত্তর চেয়েছিল, তা সোমবার কর্তৃপক্ষের দিক থেকে পাঠানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ছাত্র সংসদ (আফসু) জানিয়েছে, ওই পড়ুয়ার মৃত্যুর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আজ, বুধবার থেকে অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তারা অবস্থান করবে। আফসু এসএফআই নেতৃত্বাধীন। তারা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্বর্তী তদন্ত কমিটির রিপোর্টের দাবিও করেছে। সোমবার রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু জানিয়েছিলেন, আগে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের কথা থাকলেও পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তা প্রকাশের চেষ্টা করা হবে। মঙ্গলবার তিনি বলেন, "চেষ্টা চালানো হচ্ছে। দেখা যাক।"
এ দিকে পুলিশের দাবি, মেন হস্টেলে ঘটনার রাতে একাধিক সাধারণ সভা (জেনারেল বডি বা জিবি) বৈঠক হয়। ওই রাতে কেন হঠাৎ জিবি হল? তদন্তকারীদের কাছে পড়ুয়াদের বেশির ভাগের উত্তর, ১৫ অগস্টের ফুটবল ম্যাচ নিয়ে জিবি হয়েছে। হস্টেলের আবাসিকদেরও বেশির ভাগ একই কথা বলছেন। তদন্তে পুলিশ অবশ্য জানতে পেরেছে, জিবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সৌরভ-সহ ও বাকি দুই অভিযুক্ত উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার আগে মেস কমিটির জিবি হয়েছিল। সেখানে ওই পড়ুয়ার অস্বাভাবিক আচরণের খবর পৌঁছলে এক সিনিয়র তিনতলায় পৌঁছে তাঁর কাউন্সেলিংয়ের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ঘটনার পর কেন জিবি হয়েছে, সেটা পরিষ্কার নয়। তা হলে কি পুলিশি তদন্তে কী বলতে হবে, তাই ঠিক করতেই বৈঠক? উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশের দাবি, ওই দিন ঘটনার পর যা হয়েছে তার সব কিছুই পরিকল্পনা মাফিক। কী কী করতে হবে, কী বলতে হবে তার জন্য আবাসিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ফোনে। সেই নির্দেশে কে দিয়েছিলেন, তার খোঁজ করছে পুলিশ। পাশাপাশি সেই জিবিতে উপস্থিত এখনও বেশ কয়েকজনের খোঁজ পায়নি পুলিশ। তাঁদের সঙ্গেও কথা বলতে চান তদন্তকারীরা। একই সঙ্গে ধৃত তিন জনের মোবাইল ফোন ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কিছু ডিলিট করা হয়েছে বলে অনুমান পুলিশের।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় এ দিন জানিয়েছেন, মেন হস্টেলে প্রথম বর্ষের যে ১৮ জন ছাত্র ছিলেন, তাঁদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গিয়ে প্রায় ১২ ঘণ্টা পরে ছেড়েছে। তাঁর বক্তব্য, এঁদের মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ। এক জন অসুস্থও হয়ে পড়েছেন। বুধবার এই বিষয়ে জুটার পক্ষ থেকে তাঁরা থানায় স্মারকলিপি দেবেন।
আফসুর দাবি, মৃত পড়ুয়াকে শুধু র্যাগিং করা হয়নি, তাঁকে যৌন হেনস্থাও করা হয়েছে। হস্টেলগুলির পরিচালনার খোলনলচে বদল করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে একটি কমিটি গঠনের দাবিও জানানো হয়েছে। আফসুর বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক শুভায়ন আচার্য মজুমদার জানিয়েছেন, তাঁদের দাবি, কোন বর্ষের পড়ুয়া কোন হস্টেলে থাকবে তা ওই কমিটিই সুপারিশ করুক। প্রসঙ্গত ইউজিসি বারবারই জানিয়ে এসেছে, প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের সম্পূর্ণ আলাদা হস্টেলে রাখতে হবে। যাদবপুরে তা মানা হয়নি। আফসুর দাবি, তদন্তের আওতায় মেন হস্টেলের সুপার, ডিন অব স্টুডেন্টস এবং রেজিস্ট্রারকেও রাখা হোক। বুধবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে ছাত্র মৃত্যু নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে ধর্না-সভা করা হবে। এ দিকে ঘটনার দিন পুলিশকে মেন হস্টেলে ঢুকতে না দেওয়ার ঘটনায় পৃথক মামলা করেছে পুলিশ।
(পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী রবিবার তাঁর একটি ফেসবুক পোস্টে যাদবপুরের মৃত ছাত্রের নাম না-লিখতে অনুরোধ করেছেন। এই মৃত্যুমামলা অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপর যৌন নির্যাতন বিরোধী ‘পকসো’ আইনে হওয়া উচিত বলেও তাঁর অভিমত। কমিশনের উপদেষ্টার অনুরোধ মেনে এর পর আনন্দবাজার অনলাইন মৃত ছাত্রের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে।)