কয়েক সপ্তাহ আগে হোটেলের এক স্থায়ী মহিলা কর্মীকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। প্রতীকী ছবি।
১৪৪ ধারা। খাস কলকাতায় পাঁচতারা হেটেলের অন্দরে!
শহরের এক নামী পাঁচতারা হোটেলের কর্তৃপক্ষের অনুরোধেই ওই হোটেলে ১৪৪ ধারা জারি করেছে আদালত। অভিযোগ, তা করতে হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সংগঠনের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল গোলমালের কারণে। কিন্তু তার পরেও সমস্যার সুরাহা হয়নি। কর্মী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের একের পর এক বৈঠক নিষ্ফল। পুলিশ সূত্রের খবর, হেনস্থা করা হয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষের উচ্চপদস্থ কর্তাদের। আদালতের জারি করা ১৪৪ ধারা কার্যত অমান্য করেই হোটেল চত্বরে বহাল দুই গোষ্ঠীর লড়াই। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তাদের অবশ্য দাবি, অতিথিদের কোনও অসুবিধার মুখে পড়তে হয়নি। হোটেল স্বাভাবিক ভাবেই চলছে।
কর্তৃপক্ষ এ কথা বললেও কর্মীদের একাংশই একান্তে মানছেন, এই হোটেলে দেশ-বিদেশের বহু অতিথি এসে ওঠেন। সম্প্রতি অনেক সময়ে তাঁদের সামনেই কর্মীদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বচসা বেধেছে। এমনকি বার কয়েক তা গড়িয়েছে হাতাহাতিতে। এতে অতিথিদের নিরাপত্তা কিংবা হোটেলের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়ছে কি না, তা-ও জিজ্ঞাসা অনেকের। সূত্রের খবর, হোটেল কর্তৃপক্ষের তরফে কলকাতা পুলিশ ও শ্রম দফতরকে লিখিত ভাবে পরিস্থিতির কথা জানানোও হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, কয়েক সপ্তাহ আগে হোটেলের এক স্থায়ী মহিলা কর্মীকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের নামে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়ে। এর পরে হোটেল চত্বরে এসে বহিরাগতেরা উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন বলেই ২ মে হোটেল চত্বর ও আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বলে কর্মীদের নোটিসে জানানো হয়। অভিযোগ, তাতেও পরিস্থিতি বিন্দুমাত্র বদলায়নি। ফলে ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় হোটেলের ৬০০ কর্মীর অনেকেই।
শাসক দলের দুই ‘বড়’ নেতার নেতৃত্বাধীন দুই গোষ্ঠী ওই হোটেলে ‘যুযুধান’ বলে সূত্রের খবর। এক দিকে রয়েছেন এক প্রাক্তন মন্ত্রী। অন্য দিকে, এক মন্ত্রী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কাউন্সিলর। অভিযোগ, ওই দুই নেতা প্রকাশ্যে না এলেও, তাঁদের অনুগামীরা হোটেল চত্বর দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসলেও, সমাধান সূত্র বেরোয়নি। উল্টে হোটেলের কর্তাদের গভীর রাত পর্যন্ত আটক করে রাখা হয়। এই অবস্থায় কর্মীদের উদ্দেশে জারি করা নোটিসে সুষ্ঠু ভাবে কাজের পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। আলিপুর আদালতের জারি করা ১৪৪ ধারা বজায় রাখার জন্যও কর্মীদের কাছে আবেদন করেছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ।
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইউনিয়নের ঝামেলায় কর্মদিবস নষ্টের বিরোধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বাম আমলে ‘হিংসাশ্রয়ী’ ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের কারণে শিল্পে লগ্নি টানার ক্ষেত্রে রাজ্যের ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে বলেও বারবার অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রেক্ষিতে এখন খাস কলকাতার বুকে পাঁচতারা হোটেলে এই ঘটনায় রাজ্যের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘রাজ্যে শিল্পের হাল এমনিতেই বেহাল। তার পরে পরিষেবা ক্ষেত্রেও যদি এমন ঘটনা ঘটে, তা হলে আর কী বলার থাকে! রাজ্যে শুধু ভাগাভাগির হিসেব বুঝে নেওয়ার লড়াই— এই সংস্কৃতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে শাসক দল!’’
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে শিল্প বলে কিছু নেই। এই রকম ঘটনা ঘটলে, হোটেল-শিল্পেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য।’’ এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘আমি শুনেছি। সব খবর নিচ্ছি।’’
সূত্রের খবর, রবিবার মুম্বই থেকে ওই হোটেল সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্তারা কলকাতা এসে বৈঠক করেছেন। এ বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন তাঁরা। এর পরে সমস্যা মেটে কি না, কর্মীদের নজর এখন সে দিকেই।