Sandip Ghosh

এক সন্দীপে চার বদলি! আরজি করের সদ্যপ্রাক্তন অধ্যক্ষকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য প্রশাসনে হঠাৎ রদবদল

জুনিয়র চিকিৎসকদের লাগাতার আন্দোলনের চাপে সকালেই আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন সন্দীপ ঘোষ। তারই পরিণাম— চার বদলি হল রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসনে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৪ ২০:৩৫
Sandip Ghosh of RG Kar Hospital transferred to CNMC, Nabanna appoints new Director of Health Service

সন্দীপ ঘোষ। —ফাইল ছবি।

এক মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে বিতর্কের আবহে সোমবার সকালে আরজি করের অধ্যক্ষের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন সন্দীপ ঘোষ। আর তাঁর এই পদত্যাগের পরিণাম— চার প্রশাসনিক নির্দেশ! আরও স্পষ্ট করে বলে, চার বদলি হল স্বাস্থ্য প্রশাসনে। সন্দীপকে অন্যত্র অধ্যক্ষ তো করা হলই, রদবদল হয়েছে আরও তিন জায়গায়! সন্দীপকে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পদে বসানো হয়েছে। ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পদে যিনি ছিলেন, বদলি করা হয়েছে তাঁকে। আরজি করেও নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বদল রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা পদেও! সিদ্ধার্থ নিয়োগীকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় আনা হল দেবাশিস হালদারকে।

Advertisement

জুনিয়র চিকিৎসকদের লাগাতার আন্দোলনের চাপে সকালেই পদত্যাগ করেছিলেন আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। দাবি করেছিলেন, কারও চাপে নয়, স্বেচ্ছায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরে স্বাস্থ্য ভবনে ইস্তফাপত্র জমা দিতে গিয়ে সন্দীপ জানিয়েছিলেন, শুধু অধ্যক্ষের পদ থেকেই ইস্তফা দিচ্ছেন না, রাজ্য সরকারি চাকরিই ছেড়ে দিয়েছেন। এর পরেই বিকেলে স্বাস্থ্য ভবন থেকে জারি হওয়া একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসে। তাতে দেখা যায়, সন্দীপকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ করা হয়েছে। আর এত দিন ন্যাশনাল মেডিক্যালে যিনি অধ্যক্ষ ছিলেন, সেই অজয়কুমার রায়কে বদলি করা হল স্বাস্থ্য ভবনে। সেখানে তিনি ওএসডি (অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি) হিসাবে কাজ করবেন। সেই পদ অধ্যক্ষের পদমর্যাদারই। অন্য দিকে, আরজি করের অধ্যক্ষ করার হল সুহৃতা পালকে। ঘটনাচক্রে, তিনি এত দিন স্বাস্থ্য ভবনের ওএসডি পদে ছিলেন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই নির্দেশ এখন থেকেই কার্যকর করা হচ্ছে।

যদিও সন্দীপের পদত্যাগের জেরে এই তিনের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিকর্তা পদে বদলির সরাসরি কোনও সম্পর্ক আছে বলে মনে করছেন না অনেকে। আবার আরজি কর-কাণ্ডের অব্যবহিত পরেই স্বাস্থ্য প্রশাসনে যে ওলটপালট করা হল, তার সঙ্গে একেবারে শীর্ষপদে বদলকে অনেকেই আলাদা করে দেখতে রাজি হচ্ছেন না। তবে সিদ্ধার্থ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য অধিকর্তা পদে আমার কার্যকালের মেয়াদ তো শেষই হয়ে গিয়েছিল। এই সপ্তাহেই রদবদলের কথা ছিল। সেটা আজ হবে জানা ছিল না।’’

আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই আন্দোলনকারীদের নিশানায় ছিলেন সন্দীপ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ (যার সব ক’টিই অবশ্য তদন্ত এবং প্রমাণসাপেক্ষ) বিস্তর। অভিযোগ রয়েছে ওই হাসপাতালে বিভিন্ন ‘দুষ্কর্মের’ সঙ্গে জড়িত থাকার। অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালে ন্যক্কারজনক ঘটনাটির তথ্যপ্রমাণ লোপাট করার। এমনকি, ওই চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন বলে বাড়িতে ফোন করে বলার নেপথ্যেও তিনি রয়েছেন বলে অভিযোগ। শেষ অভিযোগটি অবশ্য সন্দীপ খণ্ডন করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এটা একেবারে ভুল কথা। আমি কখনও এটা করিনি। আমার মুখে এই কথাগুলো বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি কাউকে আড়াল করার চেষ্টা করিনি।’’ চিকিৎসক সংগঠনের সদস্যেরা বলছেন, ‘‘উনি ইস্তফার নাটক করছেন! তাঁর নাকি খুব দুঃখ হয়েছে! ওঁকে কোথাও বদলি নয়। ওঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত করতে হবে। উনি ঘটনার তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করেছেন।’’

হাসপাতালেরই একটি সূত্রের বক্তব্য, স্বাস্থ্য ভবনে নিজস্ব ‘প্রভাব’ বিস্তার করেছিলেন সন্দীপ। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে তাঁকে একাধিক বার বদলি করা হলেও অল্প সময়েই তিনি ফিরে এসেছিলেন আরজি করের অধ্যক্ষের পদে। এক বার সন্দীপের পরিবর্তে উলুবেড়িয়ার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সনৎ ঘোষকে আরজি করে আনা হয়েছিল। কিন্তু কোনও এক ‘অজ্ঞাত’ কারণে অল্প সময়ের মধ্যে ফের সন্দীপ ফিরে আসেন। দ্বিতীয়ত, গত সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পেন-দুবাই সফরের আগেই সন্দীপকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অস্থি বিভাগে বদলি করা হয়েছিল। ২১ দিনের মাথায় আবার তিনি আরজি করে আসীন। সোমবার স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এমন অভিনব বদলি বোধ হয় সাম্প্রতিক কালের মধ্যে কারও হয়নি।’’

সন্দীপ অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি আরজি করে আসার পর পর অনেকের অনেক ‘কুকর্ম’ রুখে দিয়েছেন। সেই রাগ থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা করা হয়েছে। সন্দীপের কথায়, ‘‘এই আরজি কর ছিল ঘুঘুর বাসা। তোলাবাজি চলত দেদার। তাতে নেতাদের মদতও ছিল। আমি এসে বন্ধ করেছি সে সব। এখানে এখন তোলাবাজি হয় না। আগে জন্ম বা মৃত্যুর শংসাপত্র পেতে অনেক অপেক্ষা করতে হত। ঘুষ দিতে হত। আমি তা বন্ধ করেছি। তিন বছর আগের আরজি কর আজকের চেয়ে অনেক আলাদা। যে কোনও রোগীকে পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। অভিযোগ পেলে সদর্থক উত্তর দিয়েছি। এই ঘটনার সঙ্গে কয়েক জন অধ্যাপক জড়িত। তাঁরা আমার সঙ্গে পেরে ওঠেননি। তাই আমার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। আমি কখনও কাউকে আড়াল করার চেষ্টা করিনি।’’

Advertisement
আরও পড়ুন