Sandip Ghosh R G Kar Hospital

সন্দীপের সঙ্গেই গ্রেফতার আরজি করের ‘নন্দী-ভৃঙ্গী’, প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ আফসারকে নিয়েও চর্চা শুরু

জানা গিয়েছে, আফসার হাসপাতালের অ্যাডিশনাল সিকিউরিটির পদে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু কখনও তাঁকে নির্দিষ্ট পোশাকে দেখা যায়নি। তিনি সন্দীপের ‘ব্যক্তিগত দেহরক্ষী’ হিসাবেই কাজ করতেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৩৬
Sandeep Ghosh and three more arrested by the CBI, who are they

সন্দীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

সোমবার সন্ধ্যায় যখন দুই সিবিআই অফিসার সন্দীপ ঘোষকে মাঝখানে বসিয়ে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে নিজ়াম প্যালেসের উদ্দেশে রওনা হচ্ছিলেন, তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল কী হতে চলেছে। গ্রেফতার হন সন্দীপ। সেই সঙ্গেই সিবিআই গ্রেফতার করে বিপ্লব সিংহ, সুমন হাজরা এবং আফসার আলিকে। যাঁরা আরজি কর হাসপাতাল এবং সন্দীপের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। কিন্তু এঁরা কারা?

Advertisement

আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতির মামলায় সন্দীপ-সহ চার জনকেই মঙ্গলবার আদালতে হাজির করাবে সিবিআই। কিন্তু তার আগে আরজি করের বিভিন্ন মহলে খোঁজ নিয়ে বিপ্লব, সুমন, আসরাফের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গিয়েছে। আরজি কর হাসপাতালের প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত অনেকেই বলছেন, বিপ্লব-সুমন হলেন সন্দীপের ‘নন্দী-ভৃঙ্গী’। কী করতেন তাঁরা? একটি সূত্রের দাবি, হাসপাতালে যা যা সরবরাহ হত, তার সবই করতেন ওই দু’জন। হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত এক কর্তার কথায়, “বিস্কুট থেকে জলের বোতল, অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে বেড, সবই সরবরাহ করত বিপ্লব এবং সুমনের সংস্থা।” হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত প্রাক্তন এক কর্তার বক্তব্য, “সুমন এবং বিপ্লবের বেশ কয়েকটি সংস্থা রয়েছে। সেই সংস্থাগুলিই যাবতীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করত। যাকে এক কথায় বলা যায়, আলপিন টু এলিফ্যান্ট।”

কিসের ভিত্তিতে চলত লেনদেন? স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার বক্তব্য, পুরোটাই ছিল ‘কমিশন ভিত্তিক’। তাঁর কথায়, “আরজি করের দুর্নীতিচক্র হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে মর্গ পর্যন্ত বিস্তৃত। সেই চক্রে জড়িতদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে বিপ্লব আর সুমনই ছিলেন সন্দীপের শিখণ্ডী।” এক কর্তার কথায়, “শুধুমাত্র বাইরের জিনিস হাসপাতালে সরবরাহ নয়, হাসপাতালের জিনিস বাইরে পাচার করে দেওয়ার ক্ষেত্রেও সন্দীপের হয়ে কাজ করতেন বিপ্লব-সুমন।”

প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই আরজি করের রোগীকল্যাণ সমিতির প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেছেন, “আমি দেড় বছর আগে এদের দুর্নীতি ধরেছিলাম। স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠিও দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা হয়নি। সে দিন যদি ব্যবস্থা হত, তা হলে এখন এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হত না।”

সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়া আফসারকে নিয়েও শাসক তৃণমূলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, আফসার হাসপাতালের অ্যাডিশনাল সিকিউরিটির পদে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু কখনও তাঁকে নির্দিষ্ট পোশাকে দেখা যায়নি। তিনি সন্দীপের ‘ব্যক্তিগত দেহরক্ষী’ হিসাবেই কাজ করতেন। ফলে হাসপাতালে আফসারের ‘অলিখিত শাসন’ চলত। জানা গিয়েছে, বিপ্লব এবং সুমন কলকাতার বাসিন্দা না হলেও আফসার আরজি কর হাসপাতাল এলাকার কাছাকাছি বেলগাছিয়ার বাসিন্দা। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত। তৃণমূলের অন্য এক নেতার কথায়, সেই ‘প্রভাবশালী’ নেতার বরাভয় নিয়েই যাবতীয় শাসন চালাতেন আফসার। সূত্রের খবর, আরজি করের প্রশাসনিক ভবনের সামনে একটি ‘ক্যাফেটেরিয়া’ চালান আফসারের স্ত্রী। সেটিও বেআইনি ভাবে পাওয়া বলেই অনেকের দাবি। আফসারের ভাই আরজি কর হাসপাতালেই ‘বেআইনি’ পার্কিং চালান বলেও অভিযোগ। আরজি করের এক প্রাক্তন কর্তার কথায়, “সবটাই হত লেনদেনের ভিত্তিতে। যার সঙ্গে জড়িয়ে সন্দীপও।” তৃণমূলের অনেকের আশঙ্কা এবং অনেকের আশা, এর পরে আরও বেশ কিছু ‘প্রভাবশালী’ সিবিআইয়ের আতশকাচের নীচে আসবেন। যাঁরা আশঙ্কা করছেন তাঁদের বক্তব্য, এতে দলের ভাবমূর্তি আবার নষ্ট হবে। আর যাঁরা আশঙ্কা করছেন, তাঁদের বক্তব্য, এটাই হওয়ার ছিল। আগে শুনলে পরিস্থিতি এতটা খারাপ জায়গায় যেত না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement