Kunal Ghosh Abhishek Banerjee

আরজি কর নিয়ে ‘ভুল’ শোধরাতে চান কুণাল! ‘সক্রিয়’ ভাবে সামনে চান সেনাপতি অভিষেককে

কুণাল যে পোস্ট করেছেন শনিবার, তাতে ভুল শুধরে নেওয়ার কথাও রয়েছে। যা দেখে অনেকে মনে করছেন, পরোক্ষে কুণাল বুঝিয়ে দিয়েছেন, কিছু পদক্ষেপে ভুল রয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৪ ১৬:২৮
RG Kar Hospital incident: TMC leader Kunal Ghosh demands active leadership of Abhishek Banerjee

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আরজি কর-কাণ্ডে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল যখন বেশ কিছুটা ‘চাপে’, তখন দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কি নিষ্ক্রিয়? শনিবার দুপুরে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের একটি পোস্ট সেই প্রশ্নই তুলে দিয়েছে। যে পোস্টে অভিষেককে ‘সক্রিয় ভাবে সামনে’ চেয়েছেন কুণাল। পাশাপাশি তিনি ওই পোস্টে লিখেছেন, ‘‘আমাদেরও কিছু ভুল শুধরে সঠিক পদক্ষেপে সব চক্রান্ত ভাঙতেই হবে।’’ যা পড়ে অনেকেই মনে করছেন, কুণাল তাঁর পোস্টে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আরজি কর পর্বে ‘ভুল’ হয়েছে। তবে তা প্রশাসনিক স্তরে না কি সাংগঠনিক স্তরে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

Advertisement

সমাজমাধ্যমে কুণালের ওই পোস্ট অভিষেকের ঘনিষ্ঠেরা ‘রিপোস্ট’ করা শুরু করেছেন। নবীন-প্রবীণ বিতর্কের সময়ে অভিষেকের যে আত্মীয়া তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে প্রবীণদের বিঁধেছিলেন, সেই তিনিও কুণালের পোস্ট ‘রিপোস্ট’ করেছেন। বিভিন্ন জেলার ছাত্র এবং যুব নেতারাও রিপোস্ট করছেন কুণালের পোস্ট। যা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের জন্য উল্লেখযোগ্য বলে মনে করছেন অনেকে। কুণাল তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘‘আরজি কর: আমরাও প্রতিবাদী। দোষী/দোষীদের ফাঁসি চাই। তৃণমূল ও বাংলার বিরুদ্ধে শকুনের রাজনীতি করছে বাম-রাম। জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ সব রুখতে লড়াইতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সক্রিয় ভাবে সামনে চাই।’’

গত বৃহস্পতিবার থেকে অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের দফতর সংবাদমাধ্যমে যোগাযোগ রাখার কাজ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। ওই কাজের দেখভাল করছে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর দফতর। বিষয়টিকে আরজি কর পর্বে ‘অভিষেকের অসন্তোষ’ হিসাবেই মনে করছেন তৃণমূলের প্রথম সারির অনেক নেতা। সংবাদমাধ্যম সংক্রান্ত দায়িত্ব যে ভাবে অভিষেকের দফতর ছেড়ে দিয়েছে, তাতে অনেকে মনে করছেন, তৃণমূলের সর্বোচ্চ স্তরে আবার ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে।

গত ১০ অগস্ট অভিষেক নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে প্রশাসনিক বৈঠক করেছিলেন। ঘটনাচক্রে তার আগের দিনই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে এক চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুন করার অভিযোগ ওঠে। সে দিনের বৈঠকের পর অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘যারা এই কাজ করে, তাদের এনকাউন্টার করা উচিত। সরকারি টাকায় লালনপালন করার কোনও প্রয়োজন নেই।’’ তার পর থেকে অভিষেক সে ভাবে প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি এই ঘটনায়। তবে গত বুধবার মধ্যরাতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে হামলার পর অভিষেক নিজে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বলে এক্সে পোস্ট করে জানান। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আরজি করে যে গুন্ডামি হল, তা সব মাত্রা ছাড়িয়েছে। জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমি কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেন তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়, সেই আর্জি জানিয়েছি। তাদের রাজনৈতিক যোগ যা-ই হোক না কেন। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের দাবি ন্যায্য। সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাওয়া তাঁদের ন্যূনতম দাবি। এটাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’’

শুক্রবার সকালে সেই পোস্টেই কলকাতা পুলিশ জানায় আরজি করে হামলার ঘটনায় ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পোস্টটি ‘রিপোস্ট’ করেন অভিষেক। তাঁর অনুগামীরা পুরনো পোস্ট এবং রিপোস্টের ‘স্ক্রিনশট’ও ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সমাজমাধ্যমে। যেখানে বুধবার রাতের পোস্টে ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে’ অংশটি বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। সেটিও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। কারণ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় ধরপাকড় শুরু হয়ে গিয়েছিল।

কুণাল যে পোস্ট করেছেন শনিবার, তাতে ভুল শুধরে নেওয়ার কথাও রয়েছে। যা দেখে অনেকে মনে করছেন, পরোক্ষে কুণাল বুঝিয়ে দিয়েছেন, কিছু পদক্ষেপে ভুল রয়েছে। তবে তৃণমূলের প্রথম সারির অনেক নেতাই ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, সন্দীপ ঘোষ (আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ)-কে আরজি কর থেকে সরানোর চার ঘণ্টার মধ্যে যদি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ না দেওয়া হত, তা হলে এত ‘জলঘোলা’ হত না।

কুণালের এই ভুল শুধরে নেওয়ার পোস্ট প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘কুণাল আরজি কর নিয়ে ভুলের কথা লিখেছেন? বিষয়টি আমার জানা নেই।’’ অভিষেকের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘‘তৃণমূল একটাই। আমি যত দূর জানি, অভিষেকের চোখে একটা সমস্যা রয়েছে।’’ তবে তৃণমূলের প্রথম সারির অনেক নেতাই একান্ত আলোচনায় বলছেন, বেশ কিছু কারণে অভিষেকের অসন্তোষ ছিলই। আরজি কর পর্বে বেশ কিছু ‘অব্যবস্থা’ তাতে ঘিয়ের কাজ করেছে।

এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের প্রথম সারির এক নেতার বক্তব্য, ‘‘সন্দেশখালি পর্বে অভিষেকই পরিস্থিতি সামাল দিতে নকশা এঁকেছিলেন। গোপন ক্যামেরা-অভিযানে যে আখ্যান উঠে এসেছিল, তাতে তৃণমূলের পক্ষে কুৎসার বিষয়টি বোঝানো সম্ভব হয়েছিল। আরজি করের আবহে যে ভাবে দলের বিরুদ্ধে আক্রমণ হচ্ছে, তা-ও প্রতিহত করা প্রয়োজন। সেই কাজে অভিষেকের মতামত প্রয়োজন। তাঁর অংশগ্রহণও প্রয়োজন।’’

আরও পড়ুন
Advertisement