RG Kar Rape and Murder Case

আজীবন জেল! ফাঁসি হল না আরজি কর মামলায়, কী বললেন বিচারক দাস, কী বলছে সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষ

অপরাধীর যাবজ্জীবনের শাস্তি শুনে খুশি নয় নির্যাতিতার পরিবার। চিকিৎসক থেকে রাজনৈতিক মহল, বেশির ভাগ অংশের সাধারণ প্রতিক্রিয়া, তাঁরা আশা করেছিলেন অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৪৩
RG Kar Case convict

১৬৪ দিনের মাথায় আরজি করে চিকিৎসক ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় শাস্তিপ্রদান করল শিয়ালদহ আদালত। ছবি সৌজন্য: পিটিআই এবং সারমিন বেগম।

রায়দান হয়েছে ১৬২ দিনের মাথায়। আরজি করে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় শাস্তি ঘোষণা হল ১৬৪তম দিনে। আদালতের কাছে চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ ঘটনা নয়। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬ এবং ১০৩ (১) ধারায় কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় ঘোষ দোষী সাব্যস্ত হলেও তাঁকে সর্বোচ্চ সাজা দেয়নি শিয়ালদহ আদালত। বিচারক অনির্বাণ দাস নির্দেশ দেন যাবজ্জীবন (আমৃত্য) কারাদণ্ডের। সেই সঙ্গে মোট এক লক্ষ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও পাঁচ মাসের কারাদণ্ড। ‘ডিউটি’তে থাকা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের জন্য রাজ্য সরকারকে ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে। যদিও ক্ষতিপূরণের অর্থ তাঁরা চান না বলে এজলাসে জানিয়েছেন মৃতার বাবা।

Advertisement

অপরাধীর শাস্তির নির্দেশ শুনে খুশি নয় নির্যাতিতার পরিবার। চিকিৎসক থেকে রাজনৈতিক মহল, বেশির ভাগ অংশের সাধারণ প্রতিক্রিয়া, তাঁরা আশা করেছিলেন অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু আরজি কর-কাণ্ডকে বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা মনে করছে না আদালত।

সোমবার শাস্তি ঘোষণার গোড়া থেকে সিবিআই সঞ্জয়ের মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে সওয়াল করেছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে আইনজীবী সওয়াল করেন বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ এটি। বলা হয়, গত ৮ অগস্ট রাতে ওই চিকিৎসক ডিউটিতে ছিলেন। তাঁর ধর্ষণ এবং হত্যায় কেবল শুধু পরিবার এক জন সদস্যকে নয়, এক চিকিৎসককে সমাজ হারিয়েছে। যে নির্মমতার সঙ্গে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে, তা পুরো সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তাই বার্তা দিতে অপরাধীকে কঠিন এবং সর্বোচ্চ সাজা দিক আদালত। সিবিআইয়ের এক আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘‘যাঁদের মেয়ে বাইরে কাজে যাচ্ছেন বা অন্য কোনও কারণে বাইরে যাচ্ছেন, এই ঘটনা সেই সমস্ত কন্যাসন্তানের মা-বাবাকে ভাবিয়ে তুলেছে। তিনটির মধ্যে দু’টি অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে। কঠিন শাস্তির প্রার্থনা করছি আমরা। সমাজে বার্তা দেওয়ার জন্য দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।’’ নির্যাতিতার আইনজীবী দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তির পক্ষে সওয়াল করে বলেন, ‘‘এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার, হাসপাতাল যাঁকে বিশ্বাস করে প্রবেশ (হাসপাতালের মধ্যে) করতে দিয়েছিল, সেখানে তিনি এই কাজ করেছেন। পুরো বিষয়টি তিনি জানতেন।’’

সুপ্রিম কোর্টের কয়েকটি মামলার কথা উল্লেখ করে সিবিআইয়ের যুক্তি খণ্ডন করতে চান সঞ্জয়ের আইনজীবীরা। তাঁরা কোনও ভাবে এই ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ বলতে রাজি হননি। তাঁরা মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে সিবিআইকে পর্যাপ্ত প্রমাণ দেওয়ার কথা বলেন। বলা হয়, আরজি কর মামলায় তদন্ত এখনও চলছে। সিবিআই অতিরিক্ত চার্জশিট দেবে। তাই প্রথমেই দোষীকে মৃত্যুদণ্ড না-দিয়ে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হোক। শেষ পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন সঞ্জয়। এজলাসে তাঁর আইনজীবীরা সে কথা জানানোয় সঞ্জয়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি তো বদনাম হয়ে গেলাম।’’

শনিবারের মতোই সোমবারও কমলা এবং ছাইরঙা জ্যাকেট (হুডি) পরে ছিলেন ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। চুল-দাড়ি কামানো সঞ্জয়কে শিয়ালদহ আদালতে হাজির করানো হয় সাড়ে ১২টায়। শুনানির শুরুতেই বিচারক জানান, ধর্ষণের সময়ে আঘাতে মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। আসামিকে তাঁর বক্তব্য বলার সুযোগ দেন। সঞ্জয়ের তৎক্ষণাৎ দাবি, তিনি কিছুই করেননি। বিচারক জানান, আগেও আসামিকে বলার জন্য ৩ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। কী হয়েছিল, সেটা ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের থেকে ভাল কেউ জানেন না। সঞ্জয়ের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আপনার বিরুদ্ধে যা তথ্যপ্রমাণ এবং সাক্ষীর উপর বিশ্বাস করে আমি বিচার করতে বসেছি। ৩ ঘণ্টা জেরার পর যা সাক্ষ্য মিলেছে তা আপনার বিরুদ্ধে চার্জের জন্য যথোপযুক্ত বলে মনে হয়েছে। তাই আপনাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আপনি নির্দোষ আগেও বলেছেন। আপনার কথা আগেও বলেছেন। আপনার শাস্তির বিষয়ে কিছু বলার থাকলে বলুন। আর আপনার বাড়িতে কে কে আছেন?’’

শনিবার রায় ঘোষণার সময় তাঁকে বলার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন সঞ্জয়। সোমবার শাস্তি ঘোষণার আগে সেটা মেলার পর তিনি আবারও দাবি করেন, ধর্ষণ বা খুন তিনি করেননি। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। আবারও গলার রুদ্রাক্ষের মালার কথা টেনে এনে সঞ্জয় বলেন, তিনি ওই অপরাধ করলে সেই সময়ে মালা ছিঁড়ে যেত। কিন্তু সেটা তাঁর গলাতেই রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘যে কাজটা করিনি, সেই কাজে আমাকে দোষী বলা হচ্ছে!’’

কিছু ক্ষণ বিরতি নিয়ে বেলা ৩টে ৪৫ মিনিটে শুরু হয় শাস্তিদান পর্ব। আদালত জানিয়ে দেয় দোষীর যাবজ্জীবন (আমৃত্যু) কারাদণ্ড ছাড়াও তাঁকে মোট ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পরিবারকে সব মিলিয়ে ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে।

রায় নিয়ে নির্যাতিতার পরিবার:

আরজি কর-কাণ্ডে দোষী সঞ্জয়ের ফাঁসিই চেয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। সঞ্জয়ের পাশাপাশি, আরও ৫০ জন তাঁদের মেয়েকে ধর্ষণ এবং খুনে কোনও না কোনও ভাবে জড়িত বলে দাবি করেন তাঁরা। কিন্তু বিচারক সঞ্জয়কে আমৃত্যু কারাদণ্ড শোনানোর পর কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় নির্যাতিতার বাবাকে। তাঁদের ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিন্তু বিচারকের উদ্দেশে মৃতার বাবা বলেন, ‘‘আমরা ক্ষতিপূরণ চাইনি।’’ জবাবে বিচারক বলেন, ‘‘আমিও মনে করি না, টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণ হয়। আপনি মনে করবেন না যে, টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাকে এমন বলা হলে আমিও নিতাম না। আপনি যে নিতে চান না, সেটাও লিখেছি (রায়ে)। এটাই নিয়ম।’’ নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘আমি মেয়ের জন্য বিচার চাইছি।’’

শাস্তি ঘোষণার পর কিছু ক্ষণ থম মেরে ২১০ নম্বর কোর্টরুমে বসেছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। কিছু ক্ষণ পর উঠে কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দেখা যায় বাবাকে। পরে আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘আমার মেয়ে হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় ধর্ষিতা হল। ওকে খুন করা হল। এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আসলে এটা সিবিআইয়ের ব্যর্থতা। ওরাই এই ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলে প্রমাণ করতে পারল না।’’ পাশ থেকে নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘আমরা এখনও বিচার পাইনি। বিচারের প্রথম ধাপ পার করলাম মাত্র।’’ রায়কে চ্যালেঞ্জ করার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বিচার পাওয়ার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিলেন বিচারক।’’

নির্লিপ্ত, সরব এবং কাঁদো কাঁদো সঞ্জয়

শাস্তি ঘোষণার দিনও শিয়ালদহ আদালতে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দেখা গিয়েছে দোষী সঞ্জয়কে। প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় এক ঝলক দেখা গিয়েছিল সঞ্জয়কে। তখনও দেখে মনে হয়নি ধর্ষণ এবং খুনের মামলার ওই আসামি ভেঙে পড়েছেন। বস্তুত, শাস্তি ঘোষণার আগে পর্যন্ত কঠিন মুখ করে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। কখনও দু’হাত কাঠগড়ার দু’দিকে ছড়িয়ে সোজা তাকিয়ে থেকেছেন। তবে শাস্তি ঘোষণার পর ক্ষণে সঞ্জয়ের মুখশ্রী বদলে যায়। কাঁদো কাঁদো মুখে দাঁড়িয়ে থাকেন। এজলাস ছাড়ার সময় বিড়বিড় করে স্বগতোক্তি করেন। তাঁর আইনজীবী যখন তাঁকে কারাদণ্ডের কথা শোনান, ওই সিভিকের মন্তব্য, ‘‘আমি বদনাম হয়ে গেলাম।’’ বস্তুত, ১৬৪ দিন আগে গত বছরের ১০ অগস্ট সকালে ৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের ব্যারাক থেকে যখন সঞ্জয়কে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ, তখন ওই সিভিক ভলান্টিয়ার বলেছিলেন, ‘‘স্যর, আমাকে ফাঁসিতে চড়িয়ে দিন।’’ আদালতে শুনানির সময়েও সে কথা বলেছেন। তবে রায়ের সময়ে তিনি দাবি করেন, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

দরজা বন্ধ করলেন সঞ্জয়ের মা

আদালতে সঞ্জয়কে বিচারক প্রশ্ন করেছিলেন, পরিবারের কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কি না? সহোদর-সহোদরা থাকলেও সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় জানান, বাড়িতে কেবল মা আছেন। তবে তিনি (সঞ্জয়) পুলিশের ব্যারাকে থাকতেন। মায়ের সঙ্গে অনেক দিন যোগাযোগ নেই। আর তাঁর সঙ্গেও কেউ যোগাযোগ করেননি। শিয়ালদহ আদালতে বিচারক যখন সঞ্জয়কে শাস্তি শোনাচ্ছেন, কয়েক কিলোমিটার দূরের ভবানীপুর এলাকার ৫৫বি, শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিটে সঞ্জয়ের বাড়ির সামনে তখন বিশাল ভিড়। কিন্তু সেই যে সকালে ঘরের দরজা বন্ধ করেছেন সঞ্জয়ের মা, আর খোলেননি।

‘আই অ্যাম নট স্যাটিসফায়েড’

আরজি করের রায়ে খুশি নন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দোষীর শাস্তিতে নিজের মত জানাতে গিয়ে জয়নগর, ফরাক্কা এবং গুড়াপের ধর্ষণ এবং খুনের রায়ের উদাহরণ টেনে আনেন মমতা। ওই তিনটি মামলার তদন্ত করেছিল পুলিশ। তাদের দেওয়া চার্জশিটের ভিত্তিতে নিম্ন আদালত সব ক’টি মামলায় ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘তিনটি কেসেই আমরা ফাঁসির সাজা করিয়ে দিয়েছি। এটা (আরজি কর মামলা) সিরিয়াস কেস।’’ আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের হাতে এই মামলা থাকলে অনেক আগেই ফাঁসির রায় করিয়ে দিতে পারতাম। আমি জানি না, কী ভাবে লড়াই করেছে, কী যুক্তি দিয়েছে। সবটাই সিবিআই করেছে। আমাদের হাত থেকে মামলাটা ইচ্ছা করে কেড়ে নিয়ে চলে গেল। আই অ্যাম নট স্যাটিসফায়েড (আমি সন্তুষ্ট নই)।’’ পরে মমতা জানিয়ে দেন, সঞ্জয়ের ফাঁসির আবেদন জানিয়ে রাজ্য সরকার হাই কোর্টে মামলা দায়ের করবে।

রায় নিয়ে রাজনৈতিক রায়

তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন আরজি কর-কাণ্ডে দোষীর শাস্তিতে তিনি সন্তুষ্ট নন। শাসকদলের তরফে বিবৃতি দিয়ে কুণাল ঘোষও সে কথা জানান। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল বলেন, ‘‘আমরা ফাঁসি চেয়েছিলাম। সাম্প্রতিক সময়ে গুড়াপ, ফরাক্কা, জয়নগরের ঘটনায় রাজ্য পুলিশ তদন্ত করেছিল। সেগুলির সব ক’টিতে ফাঁসির সাজা হয়েছে। সিবিআই কেন পারল না, তার ব্যাখ্যা তারাই দিতে পারবে। কলকাতা পুলিশের হাতে তদন্তভার থাকলে এত দিনে ফাঁসির রায় হয়ে যেত।’’

সঞ্জয়ের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘সমাজ, পরিবার কেউ খুশি নয় এই রায়ে। আমিও ব্যক্তিগত ভাবে খুশি নই। এ সব লোককে ক্ষুধার্ত নেকড়ের সামনে ছেড়ে দেওয়া উচিত।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিচারক তাঁর ক্ষমতার বলে রায় দিয়েছেন। আমি সেটা চ্যালেঞ্জ করছি না। তবে সিবিআই সঞ্জয়ের সঙ্গে আরও কয়েক জনকে যুক্ত করেছে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তির পক্ষে। তিনি চান, নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হোক সিবিআই। একই সঙ্গে পুলিশ তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কটাক্ষ, আরজি কর-কাণ্ডের শুরু থেকে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তদন্তে তার প্রতিফলন মেলেনি। তাঁর কথায়, ‘‘আসলে গোড়াতেই তথ্যপ্রমাণ লোপাট করে অন্য দিকে মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমন ভাবে প্রথমে এফআইআর হয়েছিল, তার পর সিবিআই তদন্তটা এমন ভাবে করেছে যে, আদালত এটাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা বলে মান্যতা দেয়নি।’’ আবার সিপিএম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য মনে করছেন, আমৃত্যু কারাদণ্ড যথেষ্ট কঠোর শাস্তি। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে। আরজি করের রায় নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস নিশানা করেছে রাজ্য এবং কেন্দ্রের শাসকদলকে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেন, ‘‘কেন্দ্র এবং রাজ্যের উভয় তদন্তকারী স‌ংস্থাই প্রশ্নের মুখে।’’

রায়ে অখুশি আন্দোলনকারীরা

আরজি কর-কাণ্ডের পর থেকে চিকিৎসকদের আন্দোলনে অন্যতম মুখ ছিলেন কিঞ্জল নন্দ। সঞ্জয়ের শাস্তি ঘোষণার অব্যবহিত পরে তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘‘হতাশ লাগছে তো? লাগুক, হতাশ হওয়া দরকার... কারণ সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই।’’ আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা আবার পথে নামার ডাক দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, এখনও সকল অপরাধী ধরা পড়েননি। ন্যায়বিচার পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের লড়াই চলবে।

সঞ্জয়ের মুক্তির লক্ষ্য

সঞ্জয়ের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার পর তাঁর আইনজীবী সেঁজুতি চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তাঁরা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হবেন। লক্ষ্য, সঞ্জয়কে ‘খালাস’ করানো। তাঁর কথায়, ‘‘যেখানে বিকল্প পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে, শুধুমাত্র সেই ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অর্থাৎ, কারাদণ্ড হওয়ার পরেও কাউকে যদি মনে করা হয়, তিনি বিপজ্জনক, তখন তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়। কোর্টকে দেখাতে হবে যে সেই ব্যক্তি সংশোধনের ঊর্ধ্বে অর্থাৎ তাঁর আর সংশোধন হওয়া সম্ভব নয়। কেন এ রকম বলা হচ্ছে, তা-ও দেখাতে হবে কোর্টকে। আর বিচার করার পরেও কিছু বিষয় পড়ে থাকে। প্রমাণ হওয়ার পরেও কিছু ফাঁক থাকে। ‘অ্যাবসলিউট ট্রুথ’ বলে কিছু হয় না। এই অবস্থায় কাউকে মেরে ফেলা হবে কি না, তা দেখা হয়।’’ সেঁজুতির দাবি, সঞ্জয়কে দোষী প্রমাণিত করা নিয়ে এখনও কিছু ‘সংশয়’ রয়েছে, যা স্পষ্ট হয়নি।

শাস্তিতেই শেষ নয়

সরকারি হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনই নয়, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের তদন্তও চলছে। আর জি কর-কাণ্ডের পাঁচ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরে অভিযুক্ত সঞ্জয় দোষী সাব্যস্ত হলেও প্রমাণ লোপাটের তদন্তের অগ্রগতি কী, তা জানা যায়নি। বস্তুত, হাই কোর্টের নির্দেশে গত ১৩ অগস্ট কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে ওই মামলার তদন্তভার নেয় সিবিআই। সেই মামলা এখনও চলছে।

Advertisement
আরও পড়ুন