Murshidabad Situation

পারলালপুরে খুলল না স্কুল, ফিরতে নারাজ বাড়িছাড়ারা

সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদের নামে শুরু হওয়া গোলমালের জেরে গত শুক্রবার বিকেল থেকেই নৌকায় গঙ্গা পেরিয়ে ধুলিয়ানের বেতবোনা, বাজাপাড়া, হাতিচিত্রা এলাকার কম পক্ষে চারশো জন আশ্রয় নেন মালদহের পারলালপুর হাই স্কুলে।

জয়ন্ত সেন , বিমান হাজরা
শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:২১
মালদহের পারলালপুরের আশ্রয় শিবিরে।

মালদহের পারলালপুরের আশ্রয় শিবিরে। ছবি: জয়ন্ত সেন।

প্রশাসনের আশ্বাসের পরেও এখনই বাড়িতে ফিরতে নারাজ মালদহের কালিয়াচক ৩ ব্লকের পারলালপুর হাই স্কুলে আশ্রিত মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। পরিস্থিতি ঠিকঠাক রয়েছে কি না, পরখ করতে বুধবার দুপুর নাগাদ কয়েক জন পারলালপুর গঙ্গাঘাটে গিয়েছিলেন। কিন্তু নৌকায় ওঠার আগে খবর পান, ধুলিয়ানের একটি দোকানে আগুন লেগেছে। জঙ্গিপুর পুলিশ-জেলার কর্তারা ঘটনাটিকে প্রাথমিক ভাবে ‘শর্ট সার্কিট’ বলে দাবি করলেও, বাড়িছাড়ারা ফিরে আসেন স্কুলে। এই পরিস্থিতিতে এ দিন খোলার কথা থাকলেও, স্কুল খোলেনি।

সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদের নামে শুরু হওয়া গোলমালের জেরে গত শুক্রবার বিকেল থেকেই নৌকায় গঙ্গা পেরিয়ে ধুলিয়ানের বেতবোনা, বাজাপাড়া, হাতিচিত্রা এলাকার কম পক্ষে চারশো জন আশ্রয় নেন মালদহের পারলালপুর হাই স্কুলে। তাঁদেরই এক জন কালীচরণ মণ্ডল বলেন, “এ দিন দোকানে আগুন লাগার খবর পেয়েছি। বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ঝুঁকি নিই কী ভাবে?’’ আর এক ঘরছাড়া কবিতা মণ্ডলের দাবি, তাঁদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগানো হয়েছে। বলেন, ‘‘মেরামত করতে স্বামীকে পাঠাতেও সাহস হচ্ছে না। এখন বিএসএফ বা পুলিশ এলাকায় আছে। তারা চলে গেলে, আমাদের , দেখবে কে? স্কুলের আশ্রয়ে না থাকলে কোথায় যাব?’’

শিবিরের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা তপন চৌধুরী বলেন, ‘‘এখন ৩১০-৩২০ জন রয়েছেন। কিছু লোক মুর্শিদাবাদে না ফিরে মালদহ এবং ঝাড়খণ্ডে আত্মীয়দের বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন।’’ তবে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের দাবি, এ দিন মালদহ থেকে পাঁচটি পরিবার এবং ফরাক্কা-সহ অন্য এলাকা থেকে আরও ১৩টি পরিবার বাড়িতে ফিরেছে।

এ দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ধুলিয়ানের কলাবাগান থেকে মালদহের শোভাপুর পর্যন্ত ফেরিঘাট চালু ছিল। চারটি নৌকা চলাচল করে। তবে বেশির ভাগ যাত্রী শোভাপুর থেকে আনাজ, দুধ এবং অন্য জিনিস নিয়ে ধুলিয়ানে আসেন। দুপুরের পরে তাঁরা ফিরে যান।

পারলালপুর হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মহম্মদ নুরুল হোদা জানান, বেশিরভাগ ক্লাসঘরেই ঘরছাড়ারা রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে তেরোশোর কাছাকাছি পড়ুয়া। পাঁচ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি আদালতের নির্দেশে যাওয়ার পরে, তাদের পড়ানোর জন্য রয়েছি আমরা ছ’জন। এপ্রিলের শেষে গরমের ছুটি শুরু হবে। তা ছাড়া, ক্লাসে আশ্রয় নিয়েছেন ঘরছাড়ারা। এ দিন স্কুল খোলার কথা থাকলেও আমরা তা খুলতাম কী ভাবে? ছাত্রছাত্রীদের সিলেবাস কী ভাবে শেষ হবে বুঝতে পারছি না!’’ মালদহ জেলা শিক্ষা-প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “বিষয়টি জানি। স্কুল ফাঁকা না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস চালু করা সম্ভব নয়।”

আরও পড়ুন