Sukanta Majumdar

দলের অন্য কাউকে বসান মুখ্যমন্ত্রী, মন্তব্য সুকান্তের

শ্যামবাজারে দলের পাঁচ দিনের ধর্না কর্মসূচির শেষ দিনে রবিবার সুকান্ত বলেছেন, ‘‘মানুষ জেগে গিয়েছে। মানুষ যখন জাগে, তখন কোনও তুফান তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না।”

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৩০
সুকান্ত মজুমদার।

সুকান্ত মজুমদার। —ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে সুর চড়াচ্ছে বিজেপি। সেই দাবি করতে গিয়েই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ বার মন্তব্য করলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা সরে গিয়ে তাঁর দলেরই অন্য কাউকে ওই পদে বসান! আর জি কর-কাণ্ডের পরে শাসক দলের মধ্যে তৃণমূল নেত্রী মমতা ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দূরত্ব’ নানা গুঞ্জন তৈরি করছে। তার মধ্যেই বিজেপির রাজ্য সভাপতির এই মন্তব্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য পত্রপাঠ জবাব ফিরিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

শ্যামবাজারে দলের পাঁচ দিনের ধর্না কর্মসূচির শেষ দিনে রবিবার সুকান্ত বলেছেন, ‘‘মানুষ জেগে গিয়েছে। মানুষ যখন জাগে, তখন কোনও তুফান তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। মানুষ চাইছে, মুখ্যমন্ত্রীর অপসারণ। মুখ্যমন্ত্রী আপনি আপনার দলের অন্য কাউকে ওই পদে বসান। আমরা তো বলিনি বিজেপির কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবে!’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বিজেপি পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলে বিশ্বাস করে না। অনেকে ৩৫৬ ধারার কথা বলেন। বিধানসভা নির্বাচনের পর যে সন্ত্রাস হয়েছিল, হয়তো ৩৫৬ ধারা দেওয়া যেত। কিন্তু বিজেপি কোথাও অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার ফেলায় বিশ্বাসী নয়।”

পাল্টা তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে টানা তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল ২০২১ সালেও তাঁকে মুখ করে বিধানসভায় লড়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ বিজেপি গোটা দেশের নেতাদের দৈনিক যাতায়াত করিয়েছিল তৃণমূলকে হারাতে। আমরা বিজেপিকে হারিয়ে বান্ডিল করে দিয়েছিলাম! গণতান্ত্রিক উপায়ে না পেরে অরাজকতা তৈরি করে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় দখলের চক্রান্ত করছে বিজেপি।”

ধর্না কর্মসূচি শেষ হলেও তার ‘সাফল্য’ দেখে ফের সেই পথে হাঁটতে চাইছে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই নানা বিষয়ে বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মতপার্থক্য সামনে এসেছে। যা থামার লক্ষণ তো ছিলই না, বরং, একে অপরের কর্মসূচিতে তাঁদের দেখা মিলত না। যার প্রভাব পড়েছিল আর জি কর কাণ্ডের বিরুদ্ধে পথে নামার প্রথম পর্বে। কিন্তু ধর্না উপলক্ষে শুভেন্দু, সুকান্ত, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে শমীক ভট্টাচার্য, রাহুল সিংহ, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়— দলের নতুন ও পুরনো প্রায় সব নেতা-নেত্রীকেই একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। বিজেপি সূত্রের মতে, টানা ধর্না চালিয়ে যাওয়ার আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে বিরোধী পরিসরে শেষ পর্যন্ত দলের উপস্থিতি স্পষ্ট করা সম্ভব হয়েছে। সূত্রের খবর, ধর্না মঞ্চেই শীর্ষ নেতারা আলোচনায় বসেছিলেন আগামী কর্মসূচি নিয়ে। সেখানেই ঠিক হয়েছে, এই ধর্নার মেয়াদ বাড়ানো হবে। আগামী ২৮ অগস্ট এই নিয়ে অনুমতি চেয়ে ফের আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে দল। সুকান্তের কথায় ইঙ্গিত, মেট্রো চ্যানেল কিংবা রানি রাসমনি অ্যাভিনিউয়ে হতে পারে সেই কর্মসূচি। সুকান্ত বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা ধর্না চালিয়ে যাব।”

তারই পাশাপাশি থানা ও মহকুমা স্তরেও এই ধরনের কর্মসূচি করার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের তরফে। আগামী ২ সেপ্টেম্বর প্রতিটি ব্লকে অবস্থান করার কথা হয়েছে। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর প্রতিটি মণ্ডলে এক ঘণ্টার প্রতীকী পথ অবরোধ হওয়ার কথা। এ ছাড়া, আগামী ২৮ অগস্ট মহিলা মোর্চাকে রাজ্য মহিলা কমিশনের গেটে তালা লাগানোর কর্মসূচি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরের দিন মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে জেলা শাসকের দফতর ঘেরাও করতে পারেন বিজেপি কর্মীরা। তৃণমূল নেতা কুণালের পাল্টা দাবি, বিধানসভা, পঞ্চায়েত-সহ সব ভোটে হেরে রাজ্যে বিজেপি নানা পথে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চাইছে।

জলপাইগুড়িতে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এত শীঘ্র কেন দেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হল? কার কথায় দেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হল? সে প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে এনে জেরা করা উচিত যে, তাঁর হস্তক্ষেপ এর মধ্যে আছে কি না!’’ প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কি বাত’-এর দিকে ইঙ্গিত করে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য, শুধু এ’টুকু বলতেই দু’সপ্তাহ লেগে গেল! মোদী, শাহ, জে পি নড্ডাদের মুখে সরাসরি আর জি কর নিয়ে একটি শব্দও শোনা গেল না। যারা প্রতি মাসেই প্রায় দিল্লি থেকে সংসদীয় দল পাঠায়, তাদের সফর কি বন্ধ হয়ে গেল? পারস্পরিক বন্দোবস্ত কি আরও গভীরে?’’ অন্য দিকে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বহরমপুরে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে আবেদন করেছেন, ‘‘আন্দোলনকারী, নাগরিক, ছাত্র, চিকিৎসকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে আলোচনায় বসুন। স্বাস্থ্য, পুলিশ দফতর আপনার। সর্বত্র বিপর্যয় হয়েছে। রহস্য উন্মোচনে পুলিশমন্ত্রী হিসেবে সক্রিয় হন আপনি। এটা আপনার নৈতিক দায়িত্বও।’’

আরও পড়ুন
Advertisement