Rampurhat Murder

Rampurhat Clash: পুলিশকে বাধা দিয়েছিল আনারুল, ভাদু টাকার ভাগ দিত অনুব্রত, আইসি-কেও: শেখলাল

বগটুই-কাণ্ডে জখম হয়েছিলেন নাজমা। এক সপ্তাহ ধরে রামপুরহাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সোমবার তাঁর মৃত্যু হয়।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২২ ১৭:২৮
বগটুই-কাণ্ড নিয়ে তোপ নিহতের স্বামী শেখলাল শেখের।

বগটুই-কাণ্ড নিয়ে তোপ নিহতের স্বামী শেখলাল শেখের। নিজস্ব চিত্র

অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে এক সপ্তাহ ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষছিলেন। কিন্তু সোমবার বীরভূমের রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে বগটুইয়ের বাসিন্দা নাজমা বিবির। স্ত্রীর মৃত্যু হতেই ফুঁসে উঠেছেন তাঁর স্বামী শেখলাল শেখ। তাঁর অভিযোগ, নিহত বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ আসলে ‘ক্রিমিনাল’। বীরভূম তৃণমূলের শীর্ষ নেতা এবং পুলিশ আধিকারিকরা পর্যন্ত ভাদুর তোলাবাজির টাকার ভাগ পেতেন বলেও অভিযোগ করেছেন শেখলাল। তাঁর দাবি, গত সোমবার অগ্নিকাণ্ডের সময় পুলিশকে গ্রামে ঢুকতে বাধা দিয়েছেন ধৃত তৃণমূল নেতা আনারুল হোসেনই। যদিও শেখলালের এই বক্তব্য শুনে আনন্দবাজার অনলাইনকে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘কে শেখলাল? ওকে আমি চিনিই না।ও শেখানো বুলি বলছে।’’
বগটুই কাণ্ডে গুরুতর জখম হয়েছিলেন নাজমা। তাঁর দেহের ৬৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। এক সপ্তাহ ধরে রামপুরহাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। কিন্তু রবিবার রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। সোমবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। স্ত্রীর মৃত্যুর খবরে ফুঁসে উঠেছেন শেখলাল। বগটুই-কাণ্ড নিয়ে তিনি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন ভাদু-সহ বীরভূমের শীর্ষ স্তরের তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। গত সোমবারের ঘটনা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই দিন ভাদুর লোকজন আগুন লাগিয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘ভাদু বড়শাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। তবে ও একটা ক্রিমিনাল। ও কালোবাজারি করত। ওর কয়লা, বালির ব্যবসা ছিল। আর রাস্তাঘাটে ক্র্যাশার থেকে যে সমস্ত গাড়ি আসত তা থেকে তোলাবাজি করত। ওর ৪০-৭০ জন ছেলে আছে। তারা এখন উধাও হয়ে গিয়েছে। ভাদুর কালোবাজারির যে ধান্দা তার ভাগ খেত আনারুল, আইসি, এসডিপিও। অনুব্রতও খেতেন।’’

Advertisement

গত সোমবার নিজের পরিবারের উপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে শেখলালের বক্তব্য, ‘‘কোথা থেকে একটা ছেলে এসে আমার ঘরের তালা ভেঙে, গ্রিল ভেঙে স্ত্রীকে বার করে নিয়ে যায়। আমার স্ত্রী প্রচণ্ড ভাবে পুড়ে গিয়েছিল। আপনারা সেটা দঁড়িয়ে দেখতে পারবেন না। আমার দোকানে যা ছিল সব শেষ করেছে। বাড়িতে একটু চাল নেই যে খাই।’’ কান্নায় ভেঙে পড়া শেখলাল বলছেন, ‘‘ওই বাড়িতে কী করে ফিরব? দিদি এই সব দেখে টাকা দিয়েছেন। চাকরি দেবেন। কিন্তু আমার কী সব আর ফিরবে? আমার স্ত্রীর ভাল চিকিৎসা হয়েছে। তবে পুলিশ আগে নিরাপত্তা দিলে স্ত্রীকে হারাতে হত না।’’

বগটুই-কাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আবারও এক বার প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন শেখলাল। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সোমবার রাত নটা থেকে সাড়ে নটার মধ্যে আগুন লাগানো হয়েছে। দমকলবাহিনী পর দিন সকালে এসে জল দিয়েছে। রাতে যদি উদ্ধারকাজ চালাত তা হলে এটা হয়তো হত না। রামপুরহাট থানা থেকে আমাদের বাড়ি যেতে ১০-১৫ মিনিট লাগে। এসডিপিও-র বাড়ি আমার পাড়ায়। আমার বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিট।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সে দিন পুলিশ পার্টির চাপে আমাদের কোনও রকম নিরাপত্তা দিতে পারেনি। কিন্তু পুলিশ চায়নি, সমস্ত বাড়ি জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাক। এরা ধ্বংস হয়ে যাক, এটা পুলিশ চায়নি। কিন্তু পুলিশকে আনারুল যেতে দেয়নি। আর ওই অবস্থায় আমরা শেষ হয়ে গিয়েছি। পরিবার জ্বলে গিয়েছে।’’

গত সোমবার পুড়ে জখম হয়েছিলেন নাজমা। এই সোমবার হাসপাতালে মৃত্যু। এই ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বামী শেখলাল। তাঁর কথায়, ‘‘চিকিৎসকদের দোষ দেব না। ওঁরা আমাকে আগেই বলেছিলেন, আপনার স্ত্রীর যা অবস্থা তাতে যে কোনও সময়ে তাঁর মৃত্যু হতে পারে। তখনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমার স্ত্রী বাঁচবেন না। গত পরশু হাসপাতালে থাকাকালীন আমার স্ত্রী নিজমুখে আমাকে বলে— আমি আর বাঁচব না। আমি আর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে যেতে পারব না। ছেলে-মেয়ে দু’টোকে দেখো।’’ মৃত স্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে চোখের জল থামাতে পারেননি শেখলাল।

আরও পড়ুন
Advertisement