Rampurhat

Rampurhat Clash: আনিস-আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়ে পদ্মের ঘুঁটি বগটুই, রাশ হাতে নিতে মরিয়া রাজ্য বিজেপি

বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই ‘ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ তুলে বিভিন্ন মহলে সরব হয়েছে বিজেপি। এখন আরও সরব গেরুয়া শিবির।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২২ ২০:৩০
রাজনীতির নতুন অঙ্গন বগটুই।

রাজনীতির নতুন অঙ্গন বগটুই। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

আমতার ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যুর পর প্রথমে বিষয়টি থেকে দূরত্ব রেখেছিল বিজেপি। রাজনৈতিক মহলে এমন জল্পনা শুরু হয়েছিল যে, ওই ছাত্র নেতা সংখ্যালঘু হওয়াতেই আন্দোলনে ‘অনিচ্ছা’ গেরুয়া শিবিরের। অনেক পরে সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীরা সরব হয়েছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে বামেরা আন্দোলনের রাশ হাতে নিয়ে নিয়েছে।

আনিস-হত্যাকান্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম সংখ্যালঘু প্রধান হলেও প্রথম থেকেই সেখানে আন্দোলনে ঝাঁপিয়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপি। সাম্প্রদায়িকতা থেকে তারা আন্দোলনের স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে দিয়েছে রাজ্যের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলার দিকে। শুধু তা-ই নয়, দিল্লি, কলকাতা, বীরভূম— সর্বত্র একই সুরে বিজেপি নেতারা বলতে চাইছেন, বগটুই উদাহরণ মাত্র। পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বগটুই গ্রামে এখনও পর্যন্ত আটজনের মৃত্যু হয়েছে জানা গেলেও সুকান্ত থেকে শুভেন্দু দিচ্ছেন অন্য হিসেব। রাজ্যে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ চাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের আরও দাবি, বাংলায় শুধুমাত্র গত এক সপ্তাহেই ২৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। বস্তুত, সেই তালিকায় পানিহাটির তৃণমূল কাউন্সিলার এবং ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলার খুনের ঘটনাও জুড়ে নিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। সোমবার রাতে বগটুইয়ের ঘটনার পর মঙ্গলবার শুভেন্দু টুইট করেন, গত এক সপ্তাহে রাজ্যে ২৬ জন খুন হয়েছেন। যার বেশিরভাগই রাজনৈতিক কারণে। বুধবার বগটুই যাওয়ার পথে শুভেন্দু বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। গত এক সপ্তাহে রাজ্যে ২৬ জন খুন হয়েছেন। সবটাই রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা।’’

Advertisement

মঙ্গলবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে লেখা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি-শাসিত বিভিন্ন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। যে বিষয়টি তিনি বুধবার একটি সরকারি কর্মসূচিতেও এনেছেন। তার জবাব দিতে গিয়ে দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে সুকান্ত ২৬ জন খুনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। সুকান্ত বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি-শাসিত রাজ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু আমি বলছি, ভারতে আর একটা রাজ্য দেখান যেখানে সাত দিনে ২৬ জন খুন হয়েছেন।’’ সেই প্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেন সুকান্ত।

রাজ্যের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ে রাজ্যপালের প্রশ্ন তোলার নজির অনেক। কিন্তু রামপুরহাটের ঘটনার পরে তিনি আরও বেশি সরব। মঙ্গলবার রাজ্যপাল টুইট করেন, ‘রামপুরহাটের ঘটনা দেখিয়ে দেয় রাজ্যে আইনের সংস্কৃতি নেই। ইতিমধ্যেই আটজনের মৃত্যু হয়েছে। আমি এই ঘটনার যাবতীয় তথ্য মুখ্যসচিবের কাছে তলব করেছি। শোকগ্রস্ত পরিবারকে আমার সমবেদনা।’ জবাবি চিঠিতে মমতা লেখেন, ‘আপনাকে অনুরোধ এ ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন এবং প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করতে দিন।’ তার জবাবে বুধবার পাল্টা চিঠি দিয়ে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে লেখেন, ছ’জন মহিলা এবং দু’টি শিশুকে পুড়িয়ে দেওয়ার পর রাজ্যপাল হিসেবে তিনি চুপ থাকতে পারেন না!

বস্তুত, রামপুরহাটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরনো দাবিকে নতুন মোড়কে পেশ করতে চাইছে রাজ্য বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই ‘ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ তুলে বিভিন্ন মহলে সরব হয়েছিল বিজেপি। পরবর্তী কালে দলের ‘সাংগঠনিক দুর্বলতা’-এর কারণ হিসেবেও সেই সন্ত্রাসের অভিযোগই তুলে এসেছে বিজেপি। মাঝে মাঝেই বিচ্ছিন্ন ভাবে বিভিন্ন নেতা কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছেন। এখন রামপুরহাটের ঘটনার পরে গেরুয়া শিবিরের নেতারা সেই দাবিকেই ‘সংগঠিত চেহারা’ দিতে চাইছেন।

ওই দাবির প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই পাঁচ সদস্যের কমিটি গড়েছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। সুকান্তের দাবি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, রাজ্যে আসতে পারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিনিধিদল। বুধবার দিনের শেষে সরব হয়েছেন নরেন্দ্র মোদীও। তবে হস্তক্ষেপের বদলে তদন্তে রাজ্যকে ‘সহযোগিতা’-র বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে তার মধ্যেও অনেকে ‘রাজনীতি’ দেখেছেন। মোদী বলেছেন, ‘‘আমি আশা করছি রাজ্য সরকার বাংলার মহান মাটিতে হওয়া এ রকম জঘন্য অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি দেবে। আমি বাংলার মানুষের কাছে আর্জি জানাব, এ রকম অপরাধীদের যারা প্রশয় ও সমর্থন করবে তাদের যেন কখনও বাংলার মানুষ ক্ষমা না করে।’’

যা নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল। দলের সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কথায়, ‘‘যাঁর আমলে গুজরাত দাঙ্গা হয়েছিল এবং যাঁকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী রাজধর্ম পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁর কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনও কথা আমরা শুনতে চাই না। উনি এই বিষয়ে নাক না-গলালেই ভাল করবেন।’’

বস্তুতপক্ষে, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। সাধারণ ভাবে কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তৃণমূলের একাংশ মনে করছেন, ‘সহযোগিতা’-র প্রধানমন্ত্রী আসলে পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে ‘হস্তক্ষেপ’-ই করতে চাইছে। তবে পাশাপাশি এ-ও ঠিক যে, আনিস-হত্যায় প্রধান বিরোধীদল বিজেপি যে ‘ভুল’ করেছিল, এবার তারা আর তার পুনরাবৃত্তি চাইছে না। কালক্ষেপ না-করে তারা ঝাঁপিয়েছে বগটুইয়ে।

আরও পড়ুন
Advertisement