রাজনগরের এই নদীর উপরেই সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের। —ফাইল চিত্র।
সেতুর দাবি দীর্ঘ দিনের। হবে নাই বা কেন! বর্ষা এলেই সিদ্ধেশ্বরী নদী কার্যত বিচ্ছিন্ন করে দেয় রাজনগরের কুড়ুলমেটিয়া, গোয়াবাগান এবং পটলপুরকে। একটার পর একটা ভোট পেরিয়ে গেলেও পরিস্থিতির বদল হচ্ছে না দেখে ক্ষোভে ফুঁসছেন ওই তিনটি গ্রামের বাসিন্দারা।
এ বার সেই দাবি আদায়ে ভোট মরসুমেই পথে নেমে পড়লেন তাঁরা। শুক্রবার সকালে কুড়ুলমেটিয়া গ্রামে প্রতিবাদ মিছিল করলেন তিনটি গ্রামের মানুষ। সকলে। শাসক দল-সহ ভোট চাইতে আসা সবক’টি রাজনৈতিক দলের কাছে তাঁরা প্রশ্ন তুললেন , ‘‘কেন ভোট দেব? আমরা কী মানুষ নই?’’ ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর কথায়, ধৈর্যচ্যুতি বলেও তো একটা বিষয় আছে! ভোটের মুখে জমাটি ক্ষোভ দেখে অস্বস্তিতে সব দল।
কেন?
রাজনগরের ওই তিনটি গ্রামে প্রায় ৮০০ জন ভোটার রয়েছেন। জনসংখ্যা প্রায় ২০০০। অথচ ফি বর্ষায় মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে রাজনগর। যার মূলে সিদ্ধাশ্বরী নদীতে কোনও সেতু না থাকা। ফলে বর্ষার চার মাস বদ্ধ হয়েই কাটাতে হয় এলাকার লোকজনকে। তিনটি গ্রামের বাসিন্দা বাপি ঘোষ, লাখপতি ঘোষ, বাপি দাস, জয় মুর্মু, মালে বেঁশরারা সমস্বরে বলছেন, ‘‘প্রশাসন থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কাছে বহু বছর ধরে আমরা একটাই দাবি জানিয়ে আসছি। সেই সেতুই যখন হল না তখন প্রতিবাদ ছাড়া উপায় কী!’’
বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, জুলাই মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কখনও হাঁটু কখনও বুক, কখনও আবার ডুব জল সাঁতরে এ পার থেকে ও পারে যেতে হয়। স্কুল, কলেজের পড়ুয়া হোক বা ব্লক, পঞ্চায়েত, থানায় ও বিভিন্ন কাজে রাজনগর বা সিউড়িতে যেতে সাধারণ মানুষকে। সকলের জন্যই একই দু্র্ভোগ। সমস্যা সবচেয়ে বাড়ে রোগী, প্রসূতি বা গর্ভবতী মহিলাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ রামচন্দ্র ডোম বা বর্তমান সাংসদ শতাব্দী রায় প্রত্যেকেই আশ্বাস বাক্য শুনিয়েছিলেন। কিন্তু, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ বার সিউড়ি বিধানসভা এলাকায় (রাজনগরের ওই তিনটি গ্রামও রয়েছে) সিপিএমের প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম। তিনি বলছেন, ‘‘আমি প্রতিশ্রুতি দিই না। চেষ্টা করব বলে থাকতে পারি। ওঁদের সমস্যা রয়েছ এ কথা অস্বীকার করছি না।’’ অন্য দিকে, তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় বলছেন, ‘‘প্রতিশ্রুতি আমি সে ক্ষেত্রেই দিই যা আমি করতে পারব। ওই গ্রামগুলির বাসিন্দাদের তেমন কোনও প্রতিশ্রুতি দিইনি। হ্যাঁ, সেতু নিশ্চয়ই প্রয়োজন। কিন্তু সেটা বড় হলে সাংসদ তহবিলের টাকায় হওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে অন্য ভাবে চেষ্টা করা যেতে পারে।’’ উভয়েই জানিয়েছেন ভোটদান গণতান্ত্রিক অধিকার। সেটা যেন তাঁরা অবশ্য প্রয়োগ করেন।