শান্তিনিকেতনে কঙ্কালীতলা পঞ্চায়েতের সদস্য, নিহত সমীর থান্দারের বড় ছেলে পথিক। —নিজস্ব চিত্র।
শান্তিনিকেতনের কঙ্কালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সমীর থান্দারকে খুনের পিছনে শাসকদলেরই একাংশ যুক্ত বলে অভিযোগ করলেন নিহতের বড় ছেলে পথিক থান্দার। তাঁর দাবি, ‘যড়যন্ত্র’ করেই শনিবার রাতে তাঁর বাবাকে ফোন করে ডেকে পিটিয়ে মারা হয়। ঘটনার পিছনে ‘দলের লোক’ রয়েছেন বলেও তাঁর অভিযোগ। যদিও সেই অভিযোগ মানেননি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কঙ্কালীতলার পারুলডাঙার বাসিন্দা সমীরকে শনিবার রাতে স্থানীয় উত্তরনারায়ণপুর থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। রবিবার বিকেলে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় সমীরের। খুনের অভিযোগে উত্তরনারায়ণপুরের বাসিন্দা সবিতা দাস ও তাঁর স্বামী সঞ্জিত ওরফে ভুটু দাস-সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁরা পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, সমীরের একাধিক স্ত্রী রয়েছেন। এর পরেও সবিতার সঙ্গে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ গড়ে উঠেছিল। তারই জেরে খুন হতে হয়েছে সমীরকে।
যদিও সমীরের পরিবারে বারবার দাবি করেছে, খুনের পিছনে ‘ষড়যন্ত্র’ রয়েছে। এ দিন পথিক দাবি করেন, কঙ্কালীতলা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মহম্মদ ওহিদউদ্দিন ওরফে মামনের কাছে সমীর কিছু টাকা পেতেন। ঘটনার রাতে উপপ্রধানের ফোন পেয়ে সেই টাকা আনতে সমীর পঞ্চায়েতে যান। তার পর থেকে আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। পথিক বলেন, ‘‘বাবা একবার ছোট ভাইকে ফোন করে খেয়েছে কি না জিজ্ঞেস করেছিল। তার পরে আর কোনও কথা হয়নি। রাতে প্রতিবেশীর ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পরে রয়েছে। স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী-সহ সেখানে অনেকেই দাড়িয়েছিল।’’ পথিকের অভিযোগ, ‘‘বাবাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার সময়েও ফের ওরা মারধর করে। ওরা সবাই উপপ্রধানের লোক, আমি চাই ওদেরও শাস্তি হোক।’’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পরে জেলার আরও কিছু জায়গার মতো হিংসার ঘটনা ঘটে এই উত্তরনারায়ণপুরে। এক মহিলার উপরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় ২০২২ সালে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী-সহ তিন তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করে সিবিআই।
ওহিদউদ্দিন ওরফে মামন বলেন, “এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার লোক বলে কেউ নেই এখানে। পুলিশ তদন্ত করছে। বিচারাধীন বিষয় বলে এই মুহূর্তে কোন মন্তব্য করব না। দোষীদের কঠোরতম শাস্তি হোক, তা আমরাও চাই। আমি যদি কাউকে ফোন করে ডেকে থাকি তা হলে তার প্রমাণ থাকবে। তদন্ত করলেই সত্যি বেরিয়ে আসবে।” জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এক দম্পতি-সহ ৬ জন গ্রেফতার হয়েছে। সন্দেহের তালিকা থেকে কাউকেই বাদ দেওয়া হচ্ছে না। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ ঘটনার পরে কঙ্কালীতলা পঞ্চায়েতের কেউ তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসেননি বলে নিহতরে পরিজন ও পরিবারের আক্ষেপ।
তবে, সোমবার রাতে এবং এ দিন সকালে সমীরের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ। সঙ্গে ছিলেন নানুরের বিধায়ক বিধান মাঝি। পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি দোষীরা যাতে কঠোর শাস্তি পায়, সে বিষয়ে তিনি পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করেন। সভাধিপতি বলেন, ‘‘এটি মর্মান্তিক ঘটনা। আমি পুলিশ-প্রশাসনকে বলেছি, যে বা যারা হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এই পরিবারের পাশে আছি।’’