ওন্দায় তৃণমূল কার্যালয়ে হামলা
TMC Internal Conflict

দলের মহিলা কর্মীকে ‘নিগ্রহে’ অভিযুক্ত তৃণমূল

পাল্টা ব্লক তৃণমূলের মিছিল থেকে অরূপের উদ্দেশে ‘বহিরাগত হটাও, ওন্দা বাঁচাও’ স্লোগান দেওয়া শুরু হয়।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
ওন্দা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪ ০৮:১৭
ওন্দা ব্লক তৃণমূল কার্যালয়ে হামলার পরে।

ওন্দা ব্লক তৃণমূল কার্যালয়ে হামলার পরে। নিজস্ব চিত্র।

একুশে জুলাইয়ের প্রচার মিছিলকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক ও ব্লক সভাপতির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তেতে উঠল বাঁকুড়া জেলার ওন্দা। মিছিল থেকে একপক্ষ আর এক পক্ষকে ‘বালি মাফিয়া’ ও ‘বহিরাগত’ বলে স্লোগান দিল। পরে প্রাক্তন বিধায়ক গোষ্ঠীর লোকজন ব্লক তৃণমূল কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে এক মহিলা কর্মীকে নিগ্রহ করেন বলে অভিযোগ। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দুই তৃণমূল কর্মীকে আটক করে। যদিও প্রাক্তন বিধায়ক হামলার অভিযোগ মানতে চাননি। বাঁকুড়া জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওন্দায় তৃণমূল কার্যালয়ে হামলা ও এক মহিলাকে নিগ্রহের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’

Advertisement

বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা ওন্দার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক অরূপ খাঁয়ের প্রতি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ওন্দায় বিজেপি প্রার্থী অমরনাথ শাখার কাছে পরাজিত হন অরূপ। তারপরেও ওই ব্লকে নিজের পৃথক গোষ্ঠী তৈরি করে দলের ‘অফিসিয়াল’ পদাধিকারীদের বাদ দিয়ে অরূপ নিজের মতো কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলছিলেন ওন্দা ব্লক তৃণমূল সভাপতি উত্তমকুমার বিট। শুক্রবার ওন্দায় একুশে জুলাইয়ের প্রচারে মিছিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বকে এড়িয়ে এ দিনই পৃথক মিছিলের আয়োজন করেন অরূপ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই চাপানউতোর শুরু হয় দুই গোষ্ঠীর।

দু’টি মিছিলের রুট এক থাকলেও তা শান্তিপূর্ণ রাখতে পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছিল। অরূপ বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে ওন্দা ব্লক অফিস থেকে মিছিল শুরু করে ওন্দা চৌমাথায় গিয়ে ফের একই জায়গায় ফিরছিলেন। পথে ওন্দা ব্লক তৃণমূলের মিছিলের সঙ্গে অরূপের মিছিল মুখোমুখী হয়।

অভিযোগ, অরূপের মিছিল থেকে ব্লক সভাপতির উদ্দেশে ‘বালি মাফিয়া উত্তম বিট হটাও’ বলে স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। পাল্টা ব্লক তৃণমূলের মিছিল থেকে অরূপের উদ্দেশে ‘বহিরাগত হটাও, ওন্দা বাঁচাও’ স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলেও পুলিশের হস্তক্ষেপে দু’পক্ষ তখনকার মতো শান্ত হয়। তবে মিছিল শেষের ঘণ্টা দেড়েক পরে ওন্দা ব্লক তৃণমূল কার্যালয়ে অরূপের গোষ্ঠীর লোকজন হামলা চালান বলে অভিযোগ।

ব্লক তৃণমূল সভাপতি উত্তমের অভিযোগ, “চল্লিশ জন দুষ্কৃতী অরূপ খাঁয়ের নির্দেশে অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান। কার্যালয়ে এক মহিলা তৃণমূল কর্মীকে নিগ্রহ করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দু’জনকে আটক করেছে। নিগৃহীত মহিলা কর্মী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।” অভিযোগ উড়িয়ে অরূপ দাবি করেন, ‘‘ওদের নিজেদের মধ্যেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। তার জেরেই হামলা হয়েছে। উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে আমার নাম জড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।”

অরূপের পাল্টা অভিযোগ, এ দিন ব্লক সভাপতি উত্তম পঞ্চায়েত সমিতির কর্মকর্তা ও দলের একাংশকে নিয়ে ওন্দার একটি লজে বৈঠক ডেকেছিলেন। সেখানে অরূপের ভাইপো তথা ওন্দা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অভিরূপ খাঁকে মারধর করেন উত্তমেরা। একই অভিযোগ করেন অভিরূপ। তিনি বলেন, ‘‘এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করব কি না, দলের সঙ্গে আলোচনা করেই সে সিদ্ধান্ত নেব।”

উত্তম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “অভিরূপের উপরে হামলা বা দুর্ব্যবহার করা হয়নি। প্রাক্তন বিধায়ক মিথ্যাবাদী। অভিরূপ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষদের সঙ্গে আলোচনা না করেই কাজ করছেন। এ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে বৈঠকে।” অভিরূপের জবাব, “প্রশাসনিক নিয়ম নীতি না জেনেই ব্লক সভাপতি আমার কাজ নিয়ে অভিযোগ তুলছেন। বর্তমান সময়ে সবার সঙ্গে আলোচনা না করে কোনও পরিকল্পনা নেওয়াই যায় না।”

এ দিকে ওন্দার ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দলের রাজ্য নেতৃত্বকে সব জানিয়েছি। দল পদক্ষেপ করবে।”

ওন্দার বিজেপি বিধায়ক অমরনাথ শাখার কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের শেষ সময় আসন্ন। এই সব ঘটনা তারই ইঙ্গিত।’’

আরও পড়ুন
Advertisement