Search for History

ইতিহাস অনুসন্ধানে ভাদীশ্বরে চলছে খনন

মাটির নীচে থাকা কোনও জিনিসের যাতে ক্ষতি না হয় তার জন্য ধীরে ধীরে খনন কাজ চলছে। এখনও পর্যন্ত দু’ফুট খনন হয়েছে।

Advertisement
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 
মুরারই  শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৩
মুরারই এ ভাদিশ্বরে এখানেই চলছে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্য।

মুরারই এ ভাদিশ্বরে এখানেই চলছে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্য। ছবি নিজস্ব চিত্র।

প্রায় পঞ্চাশ মিটার জায়গাজুড়ে ধাপে ধাপে ইটের দেওয়াল মাটির সঙ্গে মিশে রয়েছে খেলার মাঠে। সেই দেওয়াল মাটিতে মিশেই তৈরি হয়েছে উঁচু ঢিপি— এ দৃশ্যপট মুরারই গ্রামের। জনশ্রুতি অনুযায়ী, এই অংশ আগে ছিল রাজবাড়ির অন্তর্গত। রাজার নাম অনুসারেই এলাকার নাম ভাদীশ্বর।

Advertisement

ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের অধিকর্তা রাজেন্দ্র যাদব, সহ অধিকর্তা পি কে নায়েক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও টেরাকোটা পত্রিকার কর্ণধার প্রদীপ কর, প্রত্নতাত্ত্বিক সপ্তর্ষি চৌধুরী এবং প্রত্ন গবেষক সর্বেশ্বর রবিদাস-এর তত্ত্বাবধানে ভাদীশ্বর এলাকায় প্রাচীন ঢিবি খননের কাজ গত সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, আগামী দেড় মাসের বেশি সময় চলবে এই খনন।

মাটির নীচে থাকা কোনও জিনিসের যাতে ক্ষতি না হয় তার জন্য ধীরে ধীরে খনন কাজ চলছে। এখনও পর্যন্ত দু’ফুট খনন হয়েছে। তাতে যে ইট পাওয়া গিয়েছে সেটি গবেষকেরা মনে করছেন পাল আমলের। এদিকে বর্তমানে ভাদীশ্বর ঢিবিতে কয়েকটি মন্দির তৈরি হওয়ায় খনন কাজে কিছুটা অসুবিধা হতে পারে বলে মত প্রত্নতাত্ত্বিকদের। মুরারইয়ের বাসিন্দা তথা এলাকার আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক অনির্বাণজ্যোতি সিংহ বলেন, “ভাদীশ্বর এলাকার ঢিবি নিয়ে অনেক উপকথা ছড়িয়ে আছে। বর্তমানে ঢিবির প্রায় ৫০ শতাংশ কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে। খনন কাজ আরও ৫০ বছর আগে হলে ভাল হত।”

এলাকার বাসিন্দারা জানান, মাঠ ও ঢিপি গ্রামের ষষ্ঠীতলা। উঁচু ঢিপির নীচে গ্রামের বাসন্তী মন্দির তৈরি হয়েছে। প্রাচীন সেই রাজবাড়ির জায়গায় গড়ে উঠেছে খেলার মাঠ। রাজবাড়ির সে নিদর্শন বলতে কাঁসা দিঘি নামে বড় সরোবর এখনও আছে।

রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ নিয়ে মুরারইয়ের ইতিহাসকে তুলে ধরতে দীর্ঘদিন ধরে উদ্যোগী অনির্বাণজ্যোতি সিংহ, সাংস্কৃতিক কর্মী সুনীল সাগর দত্ত। এ ছাড়া লোকসংস্কৃতি গবেষক আদিত্য মুখোপাধ্যায়ের ‘বীরভূম সমগ্র’ বই থেকে জানা যায়, ভদ্রেশ্বর সেন নামে রাজার নামানুসারে ভাদীশ্বর। বীরভূমের গ্রামগুলির ইতিহাস অনুযায়ী, ভাদীশ্বর, মুরারই ও ধীতোড়া এই তিন গ্রামের মৌজা নিয়ে আজকের মুরারই। ভাদীশ্বর মৌজায় অবস্থিত মুরারই স্টেশন। বখতিয়ার খিলজির শাসনকালে ভাদীশ্বর এবং রাজগ্রামের কাছে ভাটড়ায় ওই রাজার এলাকা ছিল। তবে মুরারই থেকে ৫-৬ কিমি দূরে পাইকরে সেন আমলে বিজয় সেনের শিলালিপির নিদর্শন এখনও বর্তমান। ভাদীশ্বর রাজবাড়ি থেকে পুরাতত্ত্ব বিভাগ মাটি খনন করে নিয়ে যায়। সেখানকার ইট পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, সেই ইটগুলি একাদশ শতকের।

মুরারই থেকে পূর্ব দিকে ৫ কিমি দূরে পাইকর গ্রাম, পশ্চিম দিকে কনকপুর। এখানে অনেক পুরাতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক নির্দশন রয়েছে। খননকার্য প্রসঙ্গে আদিত্য মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের ধারণা, খ্রিস্ট পূর্বাব্দের ও গুপ্তযুগের কিছু নমুনা মিলবে। অন্তত হাজার বছরের ইতিহাস জানা যাবে বলে আমাদের ধারণা।”

আরও পড়ুন
Advertisement