Crisis of Agriculture Worker

টানা বৃষ্টি নামলেও কৃষি-শ্রমিকে টান, থমকে ধান রোয়া

মানবাজার থানার মানপুর গ্রামের বৃহস্পতি বাউরি পাম্পে জমিতে জল ঢেলে কয়েকদিন আগে ট্রাক্টর দিয়ে জমি প্রস্তুত করে রেখেছেন।

Advertisement
সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৪ ০৯:৪৬
বৃহস্পতিবার সকালে ঘন্টা খানেকের বৃষ্টিতে জল জমেছে পুরুলিয়া শহরের দেবীমেলা এলাকায় ৬০-এ জাতীয় সড়কে.জল কাদা মাড়িয়ে যাতায়াত পথচারিদের.

বৃহস্পতিবার সকালে ঘন্টা খানেকের বৃষ্টিতে জল জমেছে পুরুলিয়া শহরের দেবীমেলা এলাকায় ৬০-এ জাতীয় সড়কে.জল কাদা মাড়িয়ে যাতায়াত পথচারিদের.

বর্ষা ছন্দে ফিরতেই হইহই করে চাষ করতে মাঠে নেমে পড়েছেন চাষিরা। সবাই একসঙ্গে চাষ শুরু করতে চাওয়ায় কৃষি-শ্রমিকের অভাব দেখা দিয়েছে। এর ফলে অনেকের জমিতে ধান রোয়ার জন্য কাদা তৈরি হলেও শুধু কৃষি-শ্রমিকের অভাবে চাষ শুরু করতে পারছেন না।

Advertisement

মানবাজার থানার মানপুর গ্রামের বৃহস্পতি বাউরি পাম্পে জমিতে জল ঢেলে কয়েকদিন আগে ট্রাক্টর দিয়ে জমি প্রস্তুত করে রেখেছেন। আশা ছিল, বৃষ্টির জল পেলেই জমিতে ধান রোয়ার কাজ শুরু করে দেবেন। বুধবার বিকেল থেকে এলাকায় ভাল বৃষ্টি শুরু হলেও রোয়ার কাজ করে উঠতে পারেননি। বৃহস্পতির আক্ষেপ করেন, ‘‘দু’বিঘা জমিতে আট জন কৃষি-শ্রমিকের দরকার। মাত্র দু’জনকে পেয়েছি।’’

একই সমস্যায় ঝালদা থানার খাটজুড়ির নির্মল কুইরি, পুরুলিয়া ২ ব্লকের সিন্দুরপুরের স্নেহাশিস মাহাতো, নিতুড়িয়ার চাকলতাবাড়ি গ্রামের আশিস মণ্ডলেরা। সবার বক্তব্য, বীজতলা
তৈরি হয়ে থাকলেও শ্রাবণের প্রথম দিকে জোরালো বৃষ্টির অভাবে রোয়ার কাজ থমকে ছিল। চলতি সপ্তাহে বৃষ্টি নামলেও শ্রমিকের অভাবে চাষ এগোনো যাচ্ছে না। তাঁরা জানান, এলাকায় কাজ না পেয়ে যুবকদের অনেকেই পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে চেন্নাই, সুরাত, রাজস্থান, গোয়ায় কাজে গিয়েছেন।

তবে চাষিদের একাংশের অভিযোগ, জেলার চাষ এখনও বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল থাকবে কেন? তাঁদের দাবি, বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে ‘ওয়াটার শেড’ প্রকল্প চাষিদের কাজে আসেনি। তেননই তৃণমূল সরকারের আমলে ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্প নিয়ে প্রচার হলেও চাষিরা তার সুফল পাননি।

এ নিয়ে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি। দলের জেলা সম্পাদক পুঞ্চার বাসিন্দা জনপ্রিয় ঘোষের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের আমলে সেচ ব্যবস্থার উন্নতি করতে নদীতে চেকড্যাম গড়ার নামে কাটমানি খাওয়া চলেছে। কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও ক’টা চেকড্যাম আস্ত রয়েছে? আসলে জেলার জলের সমস্যা বামেদের মতো তৃণমূলও জিইয়ে রাখতে চায়।’’

যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘পুরুলিয়া জেলায় বিকল্প চাষের পরিধি বেড়েছে। সব জমি বৃষ্টিপাতের উপরে নির্ভরশীল নয়। তাছাড়া চেকড্যামগুলির সংস্কারের পরিকল্পনা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। চাষিদের একাংশ নিজেদের জমিতে চাষ করে তারপরে বাড়তি রোজগারের আশায় ভিন্ জেলায় যান।’’

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, পুরুলিয়া জেলায় এ বার ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। জুলাই মাসের শেষ দিন পর্যন্ত মাত্র ৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান রোয়ার কাজ শেষ হয়েছে। জেলায় জুলাই মাসে বৃষ্টির ঘাটতি ছিল ২৭ শতাংশ।

জেলা কৃষি উপ অধিকর্তা আশিস দুয়ারির আশ্বাস, ‘‘পুরুলিয়া জেলায় একটু দেরিতে চাষ শুরু হয়। অগস্ট মাস পর্যন্ত ধান রোয়ার কাজ চলে। তখনই চাষের চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা হয়। তবে গত বছর জেলায় চাষের অবস্থা খারাপ ছিল। সেই নিরিখে এই মরসুমে চাষের অবস্থা ভাল।’’

আরও পড়ুন
Advertisement