West Bengal BJP

সুভাষের বিরুদ্ধে নির্দল হয়ে দাঁড়ানো সেই জীবনকে চিঠি বিজেপির, জবাব-না পাওয়া পর্যন্ত দল থেকে বহিষ্কৃত!

লোকসভা ভোটে সুভাষের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেন বিজেপির বাঁকুড়া জেলার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক জীবন চক্রবর্তী। তাঁকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪ ১৭:২৭
(বাঁ দিকে) সুভাষ সরকার। জীবন চক্রবর্তী (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) সুভাষ সরকার। জীবন চক্রবর্তী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

বিজেপির নেতা হয়েও কেন বাঁকুড়ায় দলীয় প্রার্থী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন? বিজেপির বাঁকুড়া জেলার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক জীবন চক্রবর্তীর কাছে তার জবাব চাইল পদ্মশিবির।

Advertisement

সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটে বাঁকুড়ায় সুভাষের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিজেপির বাঁকুড়া জেলার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক জীবন। তাঁকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা। সুভাষ এবং জীবনের কেউই অবশ্য ভোটে জিততে পারেননি। কিন্তু জেলা বিজেপির পদাধিকারী হয়েও কেন দল ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন, জীবনকে তার কারণ দর্শাতে বলল তাঁর দল। বিজেপির রাজ্য শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সেই নোটিসে জানানো হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশের আগে পর্যন্ত জীবনকে বরখাস্ত করা হচ্ছে।

লোকসভা ভোটের আগে থেকে বাঁকুড়ায় বার বার বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল সামনে এসেছে। এমনকি, বিদায়ী সাংসদ সুভাষকে প্রার্থী না করার দাবিতে রাস্তায় নামেন কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। যদিও শেষমেশ সুভাষকেই আবার প্রার্থী করে বিজেপি। তার পর প্রকাশ্যেই নির্দল প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন জীবন। নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দাখিলের পাশাপাশি ‘নো ভোট টু সুভাষ’ স্লোগানকে সামনে রেখে প্রচার চালান। ওই সময় বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্ব দাবি করেন, জীবনের সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁকে বহু আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে প্রায় ৩৩ হাজার ভোটে তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তীর কাছে সুভাষ পরাজিত হওয়ার পর হারের কারণ নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে বসেন বিজেপি নেতৃত্ব। ভোটে তিন হাজারের কিছু বেশি ভোট পেয়েছিলেন নির্দল প্রার্থী জীবন। অন্য দিকে, ভোটে পরাজয়ের পরেও নাম-না করে সমাজমাধ্যমে সুভাষকে উদ্দেশ্য করে কটাক্ষ করেন জীবন। তার পরেই রাজ্য বিজেপির শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি জীবনকে নোটিস দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার ডাকযোগে চিঠি পেয়ে জীবন বলেন, ‘‘এই নোটিস পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছি। নির্বাচনের আগে বিজেপির জেলা নেতৃত্ব বলেছিলেন যে, আমাকে দল থেকে অনেক আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। চিঠিতে আমাকে দলের জেলার প্রাক্তন পদাধিকারী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি কোনও দিনই বিজেপির মতাদর্শের বিরোধিতা করিনি। বাঁকুড়া জেলায় দল পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সুভাষ সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা এবং বিরোধীদের সঙ্গে যোগসাজশের প্রতিবাদ করে প্রার্থী হয়েছিলাম। এখন দল পুনরায় সাংগঠনিক ভাবে পুরানো কর্মীদের গুরুত্ব দিলে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সাতটি আসনেই বিজেপি জয়ী হবে। আমার জবাব তাড়াতাড়ি বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকে জানাব।’’

নোটিস প্রসঙ্গে বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার পূর্বতন জেলা সভাপতি জীবন চক্রবর্তীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। তিনি এই লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে কাজ করেছেন। বহু ক্ষেত্রে তাঁর পোলিং এবং কাউন্টিং এজেন্ট ছিলেন তৃণমূলের লোকজন। সেই দলবিরোধী কাজের জন্য বিজেপির শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি জীবনকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে।’’

বাঁকুড়া লোকসভায় সদ্য নির্বাচিত তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী জীবনের তৃণমূল যোগের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘সুভাষ সরকার ’১৯ সালে সাংসদ হওয়ার পর দলের কর্মীদের গুরুত্ব দেননি। পাত্তা দেননি এলাকার মানুষকেও। তাই দলের কর্মীদের বড় অংশ এবং মানুষ তাঁর কাছ থেকে সরে যায়। সেটাই তাঁর হারের অন্যতম কারণ।’’

আরও পড়ুন
Advertisement