BJP Protest Rally

‘নিয়োগ দুর্নীতি’ নিয়ে মিছিলে জুড়ে গেল ‘মুর্শিদাবাদ’! সুকান্ত, শুভেন্দু এবং দিলীপ পাশাপাশি হাঁটলেন, বক্তৃতাতেও ঐক্যবার্তা

ঠিক এক সপ্তাহ আগে (গত রবিবার) ছিল রামনবমী। সে দিন রাজ্য বিজেপির তিন শীর্ষনেতা তিন দিকে ছিলেন। এই রবিবার সুকান্ত-শুভেন্দু-দিলীপ হাঁটলেন একসঙ্গে, এক মিছিলে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:২৯
রবিবার কলকাতার রাজপথে সারাক্ষণ পাশাপাশি হেঁটেছেন দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারী। সঙ্গে ছিলেন সামনের সারির অন্য নেতারাও।

রবিবার কলকাতার রাজপথে সারাক্ষণ পাশাপাশি হেঁটেছেন দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারী। সঙ্গে ছিলেন সামনের সারির অন্য নেতারাও। —নিজস্ব চিত্র।

কলেজ স্কোয়্যার থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত ‘মহামিছিলে’র ডাক দেওয়া হয়েছিল ‘শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি’র প্রতিবাদে। সে মিছিলে জুড়ে গেল মুর্শিদাবাদ প্রসঙ্গও। রাজ্য বিজেপির তিন সর্বোচ্চ নেতাকে অনেক দিন পর পাশাপাশি হাঁটতে দেখা গেল কলকাতার রাজপথে। মিছিল শুরুর আগে কলেজ স্ট্রিটের মঞ্চে দাঁড়িয়ে জমায়েতের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী এবং দিলীপ ঘোষ। সেখানেই জানানো হয়, প্রতিবাদের বিষয় শুধু ‘শিক্ষা’তেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।

Advertisement

ঠিক এক সপ্তাহ আগে (গত রবিবার) ছিল রামনবমী। সে দিন রাজ্য বিজেপির তিন শীর্ষনেতা তিন দিকে ছিলেন। বিভিন্ন মিছিলে আলাদা আলাদা করে অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা। এই রবিবার একসঙ্গে, এক মিছিলে। সুকান্ত-শুভেন্দু-দিলীপের সঙ্গে রইলেন রাহুল সিংহ, জ্যোতির্ময় মাহাতো, লকেট চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পাল, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, তাপস রায়, ইন্দ্রনীল খাঁ-সহ রাজ্য বিজেপির এবং যুবমোর্চার প্রায় সব পরিচিত মুখ।

৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিলের রায় দেয়। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সে দিন সন্ধ্যাতেই দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করেছিলেন, যুবমোর্চা ১৩ এপ্রিল পথে নামবে। রাজ্য সরকার যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করে না-দেওয়াতেই সবার চাকরি চলে গেল বলে সুকান্ত-সহ গোটা বিজেপির অভিযোগ। সেই অভিযোগকে সামনে রেখেই মিছিল হবে বলে সুকান্ত সে দিন জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার মধ্যেই মুর্শিদাবাদ-সহ রাজ্যের কয়েকটি প্রান্তে অশান্তি ঘটে গিয়েছে। এই মুহূর্তে বাংলার রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি চর্চিত বিষয় এই অশান্তিই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই ‘ইস্যু’কে ছেড়ে দেওয়া সঙ্গত হবে না বলেই মনে করেছেন বিজেপি নেতারা।

রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত, রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু এবং প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ প্রথমে পৌঁছোন মুরলীধর সেন লেনের দফতরে। ৩টের পর সেখান থেকে বেরিয়ে তাঁরা একসঙ্গে পায়ে হেঁটে কলেজ স্কোয়্যারের দিকে এগোতে শুরু করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টো দিকে পথসভার মঞ্চ তৈরি ছিল। সেই মঞ্চ থেকে জমায়েতের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন দিলীপ, শুভেন্দু ও সুকান্ত। তিন জনের ভাষণেই দু’টি বার্তা স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়েছে। প্রথমত, শুধু চাকরি দুর্নীতির প্রতিবাদ নয়, এই মিছিল থেকে মুর্শিদাবাদের ঘটনাপ্রবাহের প্রতিবাদও হবে। দ্বিতীয়ত, সব বিভেদ ভুলে রাজ্য জুড়ে বিজেপি কর্মীদের এক হতে হবে। যদি এক হয়ে আগামী কয়েক মাস পথে থাকা যায়, তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মেয়াদ আর এক বছরও নেই বলে বিজেপি নেতারা কলেজ স্ট্রিটের মঞ্চ থেকে দাবি করেছেন।

দিলীপ, শুভেন্দু, সুকান্ত পর পর ভাষণ দিয়েছেন। প্রত্যেকেই নিজের ভাষণে অন্য দুই নেতার নাম গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেছেন। এই তিন নেতার মধ্যে পারস্পরিক সমীকরণ কেমন এবং তার জেরে রাজ্য বিজেপির ‘অভ্যন্তরীণ দলাদলি’ কোন পর্যায়ে, সে সব নিয়ে বছরভর নানা কথাই শোনা যায়। কিন্তু তিন শীর্ষনেতাই রবিবার বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে, সব বিভেদ ভুলে এক হতে হবে। তাঁরা তিন জন এক মঞ্চে এসেছেন বা পাশাপাশি হাঁটছেন যে সেই উদ্দেশ্যেই, সরাসরি উচ্চারণ না-করে সেই বার্তাই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন দিলীপ-শুভেন্দু-সুকান্ত। তিন নেতা সমস্বরে স্লোগান তুলেছেন, ‘বটোগে তো কটোগে’ এবং ‘এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়’।

জেলা স্তরের নেতৃত্বকেও ‘ঐক্যবদ্ধ’ করার চেষ্টা দেখা গিয়েছে রবিবারের মিছিলে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন নির্বাচনে বিজেপির ফল যেখানে অপেক্ষাকৃত ভাল, সেই উত্তরবঙ্গের কোনও জেলাকে এই মিছিলে যোগ দিতে বলা হয়নি। মূলত কলকাতা এবং লাগোয়া জেলাগুলি থেকেই কর্মী-সমর্থকদের ডাকা হয়েছিল। কিন্তু জেলাগুলি থেকে জড়ো হওয়া কর্মীদের নিজেদের ইচ্ছা মতো মিছিলের যে কোনও অংশে হাঁটতে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন জেলা কমিটির জন্য ‘জ়োন’ ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। যে যাঁর জেলার জন্য নির্দিষ্ট জ়োনেই রবিবার হেঁটেছেন। জেলা নেতৃত্বে সাম্প্রতিক বদলের পরে বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলা থেকে কর্মীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ্যে আসছিল। জেলা নেতৃত্বকে না-মেনে রাজ্য স্তরের কোনও না কোনও শীর্ষনেতার ‘অনুগামী’ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার প্রবণতা কর্মীদের মধ্যে বাড়ছিল। রবিবারের মিছিলে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কলকাতা এবং আশপাশের জেলাগুলি থেকে আসা কর্মী-সমর্থকেরা বিভেদ ভুলে পরস্পরের পাশাপাশি হাঁটছেন, এই ছবি তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে।

Advertisement
আরও পড়ুন